ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধে ফরিদপুর: ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১’র সম্মুখযুদ্ধ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৭
মুক্তিযুদ্ধে ফরিদপুর: ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১’র সম্মুখযুদ্ধ

ফরিদপুর: ৯ ডিসেম্বর ফরিদপুর এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন শহীদ কাজী সালাউদ্দিনসহ তার বাহিনীর ৬ যোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন।

৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ দুপুর ১২টার দিকে যশোর-ফরিদপুর সড়কে এক পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন করিমপুর এলাকায় সেনাবাহিনীর জিপ নিয়ে ঢুকে পড়ে। এ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালাউদ্দিন বাহিনীর কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা কাজী সালাউদ্দদিন ও তার সহযোদ্ধারা যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শহীদ মেজবাহ উদ্দিন নউফেল, কাজী ফরিদ প্রমুখ।

কাজী সালাউদ্দিনের নির্দেশে পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন, তার হাতের এলএমজি গর্জে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রক্তে ভেসে যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেনের জিপটি। এর আধা ঘণ্টা পর যশোর থেকে আগত সেনা সাঁজোয়া বহর এ সংবাদ পেয়ে তিন দিক থেকে সালাউদ্দিন বাহিনীর ৩৬ জন মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলে। শুরু হয় তুমুল সম্মুখযুদ্ধ। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি ফুরিয়ে আসতে থাকে, তখন কমান্ডারের নির্দেশ আসে ‘এক পাক আর্মি, এক গুলি’।

এই সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন সালাউদ্দিন বাহিনীর ৬ যোদ্ধা-শহীদ নউফেল, শহীদ ওহাব, শহীদ মুজিবর, শহীদ দেলয়ার, শহীদ আদেল ও শহীদ সোহরাব। বাকী সহযোদ্ধাদের বাঁচানোর জন্য নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সাহসী এই বীর যোদ্ধা এলএমজি দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করতে করতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামনাসামনি অবস্থান নেন। তাঁর ব্রাশ ফায়ারের গুলিতে অসংখ্য পাক সেনা রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সালাউদ্দিন এর এই সাহসিকতায় পাকিস্তানি সেনারা দিক্বিদিক ছুটে জীবন বাঁচায়। এরপর পাক সেনারা একত্রিত হয়ে আবার সালাউদ্দিন বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। ততক্ষণে সালাউদ্দিন বাহিনীর কাছে থাকা অস্ত্রের গুলির মজুদ প্রায় শেষ হয়ে যায়, তখন সালাউদ্দিন এর নির্দেশে সহযোদ্ধারা জীবন বাঁচিয়া নিরাপদ দুরত্বে সরে যান। একা সালাউদ্দিন জীবন বাজি রেখে এলএমজি এর ট্রিগার চাপতে থাকেন। এবারও অসংখ্য পাকসেনা হতাহত হয়। পাকিস্তানি সেনারা চারপাশ থেকে হামলা চালাতে থাকে, এমন সময় পাকিস্তানি সেনাদের একটি বুলেটে তাঁর এলএমজি এর ম্যাগজিন উড়ে যায়। আর একটি বুলেট তাঁর পিঠে বিদ্ধ হয়। রক্তাত্ত সালাউদ্দিন ৭শ’ গজ দূরে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন।
 
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেই বাড়িতে ঢুকে বাড়ির সব মানুষদের গুলি করে হত্যা করে এবং বাড়িতে আগুন ধরিয়ে  দেয়। শহীদ হন ২২ বছর বয়সী তরুণ যোদ্ধা কাজী সালাউদ্দিন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিজয় এর পর ১৭ ডিসেম্বের ফরিদপুর হানাদার মুক্ত হলে সেই বাড়িতে শহীদ সালাউদ্দিনের কঙ্কাল শনাক্ত করা হয় এবং সেইদিনই তাকে ফরিদপুরের আলিপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
 
বিজয়ের ৭ দিন আগে ৯ ডিসেম্বর ফরিদপুর এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কানাইপুর এলাকার করিমপুরের এই সম্মুখযুদ্ধে সালাউদ্দিন বাহিনীর এই মহান আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গর্বের ইতিহাস। এই বীরোচিত ভূমিকার জন্য তার স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হওয়া উচিত।

  (লেখক-শহীদ কাজী সালাউদ্দিন এর ভাতিজা কাজী নাজিব হাসান)
  Mobile:01717861131,
email: [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।