ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দুর্নীতির ভাগিদার হতে হচ্ছে’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
‘উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দুর্নীতির ভাগিদার হতে হচ্ছে’ সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ফটো

সংসদ ভবন থেকে: উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া মিলিটারি ডিকটেটর, মিলিটারি রুলস, অনিয়ম-অবিচার-অত্যাচারের কারণে দুর্নীতির দুর্নামের ভাগিদার হতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম সম্প্রতি পরিচালিত বিদেশি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।  

পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স নামক আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা রিপোর্ট তুলে ধরে ফখরুল ইমাম বলেন, গবেষণা সংস্থাটি ১৭৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের ওপর জরিপ চালিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।

ওই রিপোর্টে স‍ৎ সরকার প্রধান হিসেবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন।
 
এতে প্রথম হয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মারকেল, দ্বিতীয় হয়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী। আর সারা পৃথিবীর মধ্যে কর্মঠ সরকার প্রধান হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ স্থান অর্জন করেছেন। অসম্ভব সৎ এবং সর্বক্ষেত্রে সততার পরিচয় দিলেও তাঁর সরকারে কিছু দুর্নীতি না থাকলে হয়তো প্রধানমন্ত্রী সারাবিশ্বের মধ্যে প্রথম সৎ সরকার প্রধান হতেন।
 
এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনুভূতি একটাই। আগেও বলেছি, এখনো বলব। কি পেলাম, কি পেলাম না সেই হিসাব মেলাতে আসিনি। কে আমাকে রিকগনাইজড (স্বীকৃতি) করলো আর করলো না সেই হিসাব আমার নাই। আমার একটাই হিসাব, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কতটুক কাজ করতে পারলাম। সেটাই আমার কাছে বড়।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তবে হ্যাঁ, আমি নিজে সততার সঙ্গে দেশ চালাতে চেষ্টা করছি। তবে যে অভিযোগটা আমার সরকারের বিরুদ্ধে আসছে যে, কিছু দুর্নীতি আছে।
 
এজন্য যারা জরিপ করেছেন তাদের উদ্দেশে বলব, যে দেশে মিলিটারি ডিকটেটরশিপ (সামরিক শাসন) চলে, যে দেশে গণতন্ত্রের অভাব থাকে, যে দেশে জবাবদিহিতা-স্বচ্ছতার অভাব থাকে সেই দেশে দুর্নীতিটা শিকড় গেড়ে বসে। সেই শিকড় উপড়ে ফেলা কঠিন হয়ে যায়। ১৯৭৫ এর পর থেকে ২১টা বছর এই অবস্থাই বিরজমান ছিল। এরপর আবার ২০০১-২০০৮ পর্যন্ত এই অবস্থা। তো ওই রকম একটা অবস্থা আমার ‘লিগেসিটা’ কি? আমি উত্তরাধিকার সূত্রে কি পেলাম? পেয়েছি মিলিটারি ডিকটেটরশিপ, মিলিটারি রুলস, অনিয়ম, অবিচার, অত্যাচার। সেগুলোর কারণে এই দুর্নামের এখনো ভাগিদার হতে হচ্ছে। তবে হ্যাঁ, আমি নিজে সততার সঙ্গে দেশ চালাতে চেষ্টা করছি।
 
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখতে হবে মাথায় পচন ধরলে সারা শরীরেই ধরে। যেহেতু মাথায় পচন ধরে নাই, শরীরের কোথাও যদি একটু ঘা থাকে তা আমরা সারিয়ে ফেলতে পারবো।
 
তিনি বলেন, ওই রকম যদি দুর্নীতি হতো তাহলে দেশের জিডিপি ৭.২৮ হারে উন্নীত হতো না, মাথাপিছু আয়ও ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হতো  না। এতো রাস্তাঘাট, এতো বড় বড় জিনিস আমরা তৈরি করেছি অল্প সময়ের মধ্যে। সেটা করতে পারতাম না। দুর্নীতিকে চ্যালেঞ্জ করেই পদ্মাসেতু তৈরি করছি। সেই চ্যালেঞ্জ দিতে পেরেছি, এখানে সততাই শক্তি, সততাই জোর সেটা প্রমাণ করেছি।
 
তিনি আরো বলেন, ধন-সম্পদ চিরদিন থাকে না। মানুষকে মরতে হয়। সব রেখে চলে যেতে হয়। তবু মানুষ অবুঝ। সম্পদের লোভে মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে। এটা মানুষের একটা প্রবৃত্তি, এই প্রবৃত্তিটা যে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে সেই পারে দেশকে দিতে, জনগণকে কিছু দিতে। আমরা এখানে দিতে এসেছি। রক্ত দিয়েছি, বাবা-মা, ভাই সব দিয়েছি। নিজের জীবনটাও বাজি রেখেছি শুধু একটাই কারণে, বাংলাদেশটা যেন স্বাধীন দেশ হিসেবে উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়। বিশ্ব দরবারে যেন মর্যাদার সঙ্গে চলে। রিপোর্টটা যাই দিক, আমার মর্যাদার থেকে বাংলাদেশের মর্যাদাটা তো উন্নত হয়েছে, এটা আমার কাছে বড় পাওয়া।
 
জরিপকারী সংস্থার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, তাদের দেশে জনসংখ্যা কতো? আর আমার দেশের জনসংখ্যা কতো? এইটা যদি তারা একটু তুলনা করতেন, তাহলে হয়তো অন্য হিসাবটা আসতো। আমাদের ছোট্ট ভূখণ্ডে বৃহৎ জনগোষ্ঠী। ৫৪ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে ১৬ কোটির উপর মানুষ বসবাস করে। যারা ১,২,৩,৪  নম্বরে আছেন তাদের কিন্তু জীবনে বাবা-মা ভাই আপনজনকে হারাতে হয়নি, বা অত্যাচারিত-নির্যাতিতও হতে হয়নি। জেলের ভাতও খেতে হয়নি। মিথ্যা মামলায়ও জর্জরিত হতে হয়নি। আমাদের দেশের পরিবেশটা একটু আলাদা। আমরা যতো ভালই কাজ করি না কেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা, মিথ্যা প্রবাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। জেল-জুলুম অত্যাচার সহ্য করা, এমনকি বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে।

যারা প্রথম, দ্বিতীয় হয়েছেন তাদের একজনও কিন্তু গ্রেনেড হামলার শিকার হননি। তাদের কাউকে ৭৬ কেজি বোমা দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়নি। বার বার আমার জীবনের উপর যে আঘাত এসেছে এরকম যদি একবারও হতো তাহলে অনেকেই ঘরে বসে যেতেন। কিন্তু আমি মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে জীবনকে বাজি রেখে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে নিজের জীবনে অর্থ-সম্পদ, টাকা-পয়সা কি আছে, না আছে ও নিয়ে আমি কখনো চিন্তাও করি না। ওটা নিয়ে আমার কোনো দুশ্চিন্তাও নেই। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, জীবন তো চলেই যাবে। আমাকে যতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে- এসব অভিজ্ঞতা, যাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাদের নেই। যারা করেছেন তারা যদি এই বিষয়গুলো একটু বিবেচনা করতেন তাহলে হয়তো রেজাল্টটা অন্যরকমও হতে পারতো।
 
প্রধানমন্ত্রী  আরো বলেন, এটাও ঠিক। আমাদের যে প্রতিকূল অবস্থা, এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে তাদের চলতে হয়নি। আমাদের দেশে কখনো ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিলো না। প্রতিবারই বাধা এসেছে। আবার আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে। আন্দোলন করতে হয়েছে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। সেই গণতন্ত্র চর্চার মধ্য দিয়েই কিন্তু আজকে দেশের উন্নতি। এই ১৬ কোটি মানুষ আর ৫৪ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে যদি অন্য রাষ্ট্র প্রধানদের দেশ চালাতে হতো তাদের অবস্থা যে কি হতো সেটা বোধ হয় আপনারাও চিন্তাও করতে পারেন।
 
কর্মঠ সরকার প্রধান হিসেবে যে তুলনা করা হয়েছে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজের  ক্ষেত্রে আমার ১৮ ঘণ্টা, ১২, ১৪ ঘণ্টার হিসাব নেই। অনেক সময় এমনও দিন যায়, রাতে ৩ ঘণ্টা, সাড়ে ৩ ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারি না। যখনই কাজ আসে সেটা করে যাই। কেন করি? আমি  মনের টানে কাজ করি। কারণ  আমার বাবা দেশটা স্বাধীন করে গেছেন। তার একটা স্বপ্ন ছিল ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়ার। সেই জন্য তিনি স্বাধীন দেশের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে তাকে জীবন দিতে হয়েছে, আমার পরিবারকেও হারাতে হয়েছে। আমার একটাই চ্যালেঞ্জ, যে কাজটা আমার বাবা করে যেতে পারেন নি, সেই অধরা কাজটা আমি সম্পন্ন করে যেতে চাই। দেশকে  ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তবুও বলবো, যারা হিসাব নিকাশ করেছেন তারা তাদের মত করেছেন। এজন্য তাদের ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
এসকে/এসএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad