ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

হাতে-কলমে শিক্ষায় কৃষকের ভাগ্য বদলাচ্ছে মাঠ স্কুল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
হাতে-কলমে শিক্ষায় কৃষকের ভাগ্য বদলাচ্ছে মাঠ স্কুল কৃষক স্কুলে পরামর্শ দিচ্ছন কর্মকর্তারা। ছবি: বাংলানিউজ

কুষ্টিয়া: ‘নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই বদলাবো। আধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে নিজেরাই ফলাবো বিষমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত সবজি, ঘরে তুলবো বেশি ফসল। কম খরচে চাষাবাদ, উন্নত পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি পালন এবং বাড়িকে আদর্শ বাড়ি গড়ার প্রক্রিয়া হাতে-কলমে শিখছি এখান থেকে শিখছি’।

কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ঝুটিয়াডাঙ্গা এলাকার কৃষক মাঠ স্কুলের প্রশিক্ষণার্থী কৃষক-কৃষাণিরা।

কৃষিনির্ভর প্রত্যন্ত গ্রামটির এ কৃষক মাঠ স্কুলে ২৫টি করে কৃষক পরিবারকে ৪২টি করে ক্লাসের মাধ্যমে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

পরিচয় করানো হয় উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাতের সঙ্গেও। ৫ মাসের ওই প্রশিক্ষণে হাতে-কলমে কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহারও শেখানো হয়।

গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে বিজ্ঞানসম্মতভাবে হাঁস-মুরগি ও গাভি-ছাগল পালন এবং ধান ক্ষেতে মাছের চাষ করে বাড়তি আয়ের পথও দেখানো হয় এ স্কুলে।  

কৃষি প্রদর্শনী। ‘সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কম্পোনেন্ট (আইএফএমসি)’ প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত স্কুলটিতে নিরক্ষর বা অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন- যেকোনো কৃষক-কৃষাণিই এসব প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন।  

প্রশিক্ষণ পাওয়া কৃষকরা বাংলানিউজকে জানান, তারা নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষক ও মডেল কৃষক হয়ে এখন অন্যদেরকেও উদ্বুদ্ধ করছেন। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও শিক্ষা এলাকার সকল কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে মাঝে মাঝেই মাঠ দিবসের আয়োজন করা হচ্ছে। সেসব আয়োজনে দলে দলে বিভক্ত হয়ে দলনেতার মাধ্যমে তারা সাধারণ কৃষকদেরকেও শেখান- বাস্তব জীবনে এসব নতুন নতুন ধ্যান-ধারণাকে কাজে লাগিয়ে ও আধুনিক চাষাবাদে কিভাবে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন সম্ভব।  

এমনই এক মাঠ দিবসে স্কুল থেকে শেখা খামার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে অন্যদেরকে দেখাচ্ছিলেন কৃষক হাফিজুর রহমান।  

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন বাড়ির আঙিনা বা পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে স্তরভিত্তিক মাছের চাষ করতে পারি। মাঠে কখন কি কি ফসল ও কোন ফসল কিভাবে উৎপাদন করবো, বাড়ির আঙিনায় সবজি ক্ষেতের পরিচর্যা এবং ফলের বাগান থেকে কিভাবে সারা বছর ফল পেতে পারি- সেগুলো স্কুল থেকে শিখেছি। বাড়ির আঙিনায় গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন, খামারজাত সার তৈরি এবং পুরো বসত-বাড়িকে কিভাবে খামারে পরিনত করবো- সেসবও জানতে পেরেছি’।

সিহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমি উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদনের কৌশল প্রদর্শন করেছি। আমরা যদি গ্রীষ্মকালে ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহারে লাউ ও বেগুন উৎপাদন করি, তাহলে আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হবো। কোন পোকা ক্ষতিকর আর কোনটি উপকারী এবং ক্ষতিকর পোকা ও ক্ষতির ধরন সম্পর্কে জানতে পেরেছি’।  

শামলী খাতুন বলেন, ‘বসত-বাড়ির বিভিন্ন স্থানের পরিকল্পিত পরিপূর্ণ ব্যবহার করতে শিখেছি। আঙিনায় সবজি-ফলের বাগান ও মাছের চাষ, পুকুরপাড়ে সবজি, ঘরের চালে মিষ্টিকুমড়া ও স্যাঁত স্যাঁতে স্থানে কঁচু জাতীয় সবজি উৎপাদন করে পুষ্টি বাগান গড়ে তুলতে পারি’।  

কৃষক স্কুলে শিক্ষা নিচ্ছেন কৃষাণীরা।  ছবি: বাংলানিউজবিউটি খাতুন বলেন, ‘আগে গরু-ছাগল যেভাবে পালন করতাম, তাতে খাবারের কোনো ঠিক থাকতো না। রোগ-বালাই বেশি হতো। আমি এ স্কুল থেকে গবাদিপশুর সুষম খাদ্য তৈরি, উন্নত ঘাস চাষ, ছাগলের বাসস্থান ও পালন সম্পর্কে সঠিকভাবে শিখেছি’।  

লাবনী খাতুন বলেন, ‘আগে বাড়িতে মুরগি পালন করতাম সনাতন পদ্ধতিতে। এতে বাচ্চাদেরকে মুরগিগুলো নিজেরাই লালন পালন করতো। ফলে ডিমও অনেক দেরিতে দিতো। এ স্কুলে হাজল পদ্ধতিতে মুরগি পালনের করে বেশি লাভবান হতে শিখেছি’।  

মাঠ দিবসে আসা কৃষক জাহাঙ্গীর আলী বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই দেখি, এখানে অফিসাররা এসে কৃষকদের বোঝান। আজ দেখলাম, এগুলো আমাদের মতো কৃষকদের ভালোর জন্যই’।  

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, কৃষক মাঠ স্কুল কৃষকদের জীবন-মানের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে। এর মাধ্যমে তারা আধুনিক চাষাবাদ ও খামার ব্যবস্থাপনা এবং বসত-বাড়িতে গবাদিপশু পালন, সবজি-পুষ্টি বাগান তৈরি ও পতিত জমির সুষ্ঠু ব্যবহার জানতে ও শিখতে পারছেন।  

জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিনয় কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায়ও দক্ষ কৃষক তৈরি করা সম্ভব। এটি একটি কার্যকরী পদক্ষেপ।  

বাংলাদেশ সময়: ০৩২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।