ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আমাদের এগিয়ে যাবার প্রেরণা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আমাদের এগিয়ে যাবার প্রেরণা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর- ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর মধুর ক্যfন্টিন প্রায় সব রাজধানীবাসীর কাছেই পরিচিত। রাজনীতি, সংস্কৃতিচর্চা ও আড্ডার জন্য মধুর ক্যান্টিনের একটা আলাদা খ্যাতি তৈরি হয় সেই সোনালি অতীতে।

মধুসূদন দে’র বড় ছেলে রঞ্জিত দে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন পরিচালনায় পিতাকে সহায়তা করতেন তখন। রানী দে’র সঙ্গে তার সবে বিয়ে হয়েছে।

বাবার সঙ্গেই থাকতেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের আবাসে। নববিবাহিত এ দম্পতির সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়, যখন ২৫ মার্চ রাতে পাক বাহিনি ঘরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে মধুসূদন দে ও তার পরিবারের সকলকে।

বিখ্যাত এ মধুর ক্যন্টিনের মধুসূদন দে বাদ পড়েননি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে। তাই তো তাকে স্মরণে রাখতেই তার ব্যবহৃত জামা ও তার বিভিন্ন সামগ্রী স্থান পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের ব্যবহৃত জামা ও রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহৃত নানা সামগ্রী।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর- ছবি: বাংলানিউজ
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রায় দুই বিঘা জমির ওপর নির্মিত এ জাদুঘরটি যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা, প্রকাশনা, ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী, তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো, মৌখিক ইতিহাস সংগ্রহ করাসহ বহুমুখি কার্যক্রমে সম্প্রসারিত এ জাদুঘর।

মুক্তিযুদ্ধের স্মারক প্রদর্শনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটিতে রয়েছে চারটি গ্যালারি। ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলার গ্যালারিগুলোতে স্থান পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিনিধিত্বমূলক প্রত্ননিদর্শন। রয়েছে আলো আঁধারির খেলাও।

র্যাম্প পেরিয়ে জাদুঘরের প্রথম গ্যালারিতে ঢুকলেই দেখা মিলবে ‘আমাদের ঐতিহ্য ও আমাদের সংগ্রাম’-এর। এ গ্যালারিতে আছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত কালপর্বে এ জনপদের প্রতিনিধিত্বমূলক বিভন্ন প্রত্ননিদর্শন। এসবের মধ্যে বিভিন্ন পাথর, শিলাখণ্ড, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর হাতের লেখা, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত উল্লেখযোগ্য।

দ্বিতীয় গ্যালারি সাজানো হয়েছে ২৫ মার্চের কালরাতে নিরীহ ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার বর্বরতা তুলে ধরে। এছাড়া স্বাধীনতার ঘোষণা, ৪ এপ্রিল কুষ্টিয়ার যুদ্ধ ও সারাদেশের গণহত্যার নিদর্শন রয়েছে এ গ্যালারিতে। আছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র। আর ১ জানুয়ারি ১৯৭১ সাল থেকে ৩০ এপ্রিল ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সংগ্রহ। শব্দ ও আলোর প্রক্ষেপণের বিশেষ প্রদর্শনীর এ গ্যালারি আমাদের অধিকার, আমাদের ত্যাগের।

লিফট বেয়ে পঞ্চম তলায় তৃতীয় গ্যালারি। নাম ‘আমাদের যুদ্ধ, আমাদের মিত্র’। এ গ্যালারিতে আছে যুদ্ধচলাকালীন অর্থাৎ ১ মে থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের স্মৃতি। এর মধ্যে উদ্বাস্তুদের জীবনযাপন, তাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও যুদ্ধের বিভিন্ন প্রশিক্ষণকে সামনে আনা হয়েছে আলোকচিত্রের মধ্য দিয়ে। এছাড়া শরণার্থীদের ব্যাগ, কম্বল, যুদ্ধের সার্টিফিকেটসহ মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ উপলক্ষ্যে তৈরি বিভিন্ন পোস্টার, শহীদদের ব্যবহৃত সামগ্রী ও আন্তর্জাতিক গণ সমর্থনকে তুলে ধরা হয়েছে এখানে। |
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর- ছবি: বাংলানিউজ
চতুর্থ গ্যালারির নাম ‘আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবোধ’। এ গ্যালারিতে ‘বিলোনিয়া যুদ্ধের মডেল’ ব্যবহার করে দর্শকদের দেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্বাদ। এখানে ঠাঁই পেয়েছে চিথলিয়া রেল স্টেশনে যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ। আছে ৭১’র যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন মেশিন গান, নারী নির্যাতনের বিভিন্ন চিত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অ্যাশট্রে, কলম, চশমা, যুদ্ধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নানান কার্যক্রম, দগ্ধ ঘরবাড়ির অংশসহ পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের চিত্র।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ইতিহাস সমৃদ্ধ চারটি গ্যালারি যেন জাতির গৌরবদীপ্ত ইতিহাসের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করার অন্যতম একটি মাধ্যম। এ ইতিহাস সর্বদা প্রেরণা সঞ্চার করে আমাদের বিকশিত একটি সমাজ গঠনের। এমনটাই জানালেন জাদুঘরে আগত দর্শনার্থী ফয়জুল হক।  

তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের মননে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে এ আয়োজন অনন্য।

সরকারী ছুটির দিন ছাড়া সোম থেকে শনি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আর ২০ টাকা প্রবেশমূল্যে এ জাদুঘর যে কোনো দর্শনার্থীকে দিতে পারে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সাম্যক ধারণা।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
এইচএমএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।