ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সেই ভুলে ভরা বই বিতরণে ২ স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শোকজ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
সেই ভুলে ভরা বই বিতরণে ২ স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শোকজ বিকুলের বই ও দুই বিদ্যালয়ে পাঠানো শোকজের চিঠি

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সাংবাদিক বিকুল চক্রবর্তীর ভুলে ভরা সেই বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ায় দু’টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দাখিলের জন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দীলিপ কুমার বর্ধন।

একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি চেষ্টার ঘটনায় বিভ্রান্তি ছড়ানোয় পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা চেয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারকে চিঠি দিয়েছেন তিনি।

প্রধান শিক্ষকদ্বয়ের শোকজের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিকুল চক্রবর্তী সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত তথ্য সম্বলিত এ ধরনের একটি বই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে কেন বিতরণ করা হয়েছে এবং ওই বইয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ১২ সদস্যের পদ-পদবি সম্বলিত ছবি এবং বইয়ের পেছনের কাভার পেজে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমাবেশের ছবি কেন ছাপানো হয়েছে তার কারণ জানতে চেয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা।

বইটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াবে উল্লেখ করে শিক্ষা কর্মকর্তা জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা চান। চিঠির অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা ‍নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিকুলের ইতিহাস বিকৃত বই দু’টি বিদ্যালয় থেকে জব্দ করা হয়েছে। বই দু’টি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের তথ্য বাতায়ন থেকে নামানো হয়েছে।
 
ইতিহাস বিকৃতি চেষ্টার কথা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, এ ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
 
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শোকজ চিঠিতে উল্লেখ করেন, ২৪ অক্টোবর বিকুল চক্রবর্তী সম্পাদিত ‘আপন আলোয় বিশ্বভুবন’ বইটি শ্রীমঙ্গলের মোহাজেরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও সেন্ট মার্থাস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। কিন্তু সম্পাদিত বইটি ভুলে ভরা। অসংখ্য বানান, বাক্য, সম্বোধনে রয়েছে ভুল।

বইটিতে স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে ৪র্থ সংস্করণের ১১ নম্বর পাতায় ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা মেজর জিয়াউর রহমান পুনর্পাঠ করেন উল্লেখ করলেও কৌশলে ‘বঙ্গবন্ধুর পক্ষে’ ঘোষণাটি পাঠ করার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ভুল করা হয়েছে জহুর আহমেদ চৌধুরীর নামও।

অথচ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ১৭৮ নম্বর পাতায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ঘোষণা অংশে উল্লেখ করা হয়, ‘স্বাধীনতার এ ঘোষণা বাংলাদেশের সকল স্থানে তদানীন্তন ইপিআর এর ট্রান্সমিটার, টেলিগ্রাম ও টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা ২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা এম এ হান্নান চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে একবার এবং সন্ধ্যায় কালুরঘাট বেতার থেকে দ্বিতীয়বার প্রচার করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং এর প্রতি বাঙালি সামরিক, আধা সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর সমর্থন ও অংশগ্রহণের খবরে স্বাধীনতাকামী জনগণ উজ্জীবিত হয়। ২৭ মার্চ উক্ত বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান পুনরায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। ’

বিকুল চক্রবর্তী সম্পাদিত এ ধরনের বই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করায় শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হবে বলে মনে করেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীলিপ কুমার বর্ধন বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো নিয়ে বিকুল চক্রবর্তী সম্পাদিত ভুলে ভরা ও ইতিহাস বিকৃত বইটি দুই বিদ্যালয়ে ৪শ কপি বিতরণ করা হয়েছিল। বইটিতে ইতিহাস বিকৃতির ঘটনাটি নজরে আসার পরপরই সাড়ে ৩শ’ কপি বই জব্দ করা হয়েছে। বাকি বইগুলো জব্দ করার প্রক্রিয়া চলমান। এ কারণে দুই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। একইসঙ্গে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশনা চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবরে চিঠি লেখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
এনইউ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।