ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চার দুর্বৃত্তের আড়াই মিনিটের অপারেশন

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
চার দুর্বৃত্তের আড়াই মিনিটের অপারেশন  হত্যাকাণ্ড চলাকালে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির সিসি ক্যামেরার ফুটেজে কয়েকজন সন্দেহভাজনের ঘোরাঘুরি

ঢাকা: রাজধানীর বনানীতে এমএস মুন্সি ওভারসিজ (রিক্রুটিং এজেন্সি) অফিসে ঢুকে প্রতিষ্ঠানের মালিক সিদ্দিক হোসেন মুন্সিকে হত্যা করে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন আরও ৩ জন। পুরো অপারেশনটি ছিল আড়াই মিনিটের।

বনানীর চার নম্বর রোডের ব্লক-বি’র ১১৩ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত ওই প্রতিষ্ঠানের সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

১৪ নভেম্বর রাতে বনানীর এমএস মুন্সি ওভারসিজ (রিক্রুটিং এজেন্সি) অফিসের ভেতরে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।

এ ঘটনায় সিদ্দিকের স্ত্রী জোৎস্না বেগম ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে মামলা করেন।

মুন্সি ওভারসিজ (রিক্রুটিং এজেন্সির) অফিসের স‍ামনে থাকা সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়,  ‘১৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৪৯ মিনিট ২২ সেকেন্ডে ভবনের প্রধান ফটক দিয়ে দুইজন প্রবেশ করেন। এদের মধ্যে একজন ফুল হাতা শার্ট ও মাথায় হ্যাট এবং অন্যজন টি-শার্ট পরিহিত ছিল। এর ঠিক ২৪ সেকেন্ড পর অর্থাৎ ৭টা ৪৯ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডে আরও দুইজন গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। তাদের দুইজনের গায়ে ছিল ফুল হাতা শার্ট। তবে এই চারজনেরই মুখে মাস্ক পড়া ছিল।  

সন্দেহভাজন আসামিদের প্রবেশের সময় ফটকের ভেতরে একটি চেয়ারে বসে ছিল ভবনের সিকিউরিটি গার্ড আলবিনোদ বায়জিত বাজি। আড়াই মিনিট পর অর্থাৎ ৭টা ৫২ মিনিট ০৫ সেকেন্ডে সময় অফিসের ভেতর থেকে মুখোশধারী দুইজন বের হয়। এর ৬ সেকেন্ড পরে আরও দুইজন বের হয়। ঠিক ৭টা ৫২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে মুখোশধারী চারজন ভবনের প্রধান ফটক দিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই বের হয়ে যায়।

মুন্সি ওভারসিজ (রিক্রুটিং এজেন্সির) অফিসের ভেতরে অজ্ঞাত চার সন্ত্রাসীর অবস্থান ছিল মাত্র আড়াই মিনিট। এই আড়াই মিনিটের মধ্যেই প্রথমে প্রতিষ্ঠানের মালিক সিদ্দিক হোসেন মুন্সীকে গুলি করে হত্যা করে এরপর অফিসের আরও তিন কর্মকর্তাকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

এ বিষয়ে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন বাংলানিউজকে বলেন, সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে আমরা দেখেছি ঘটনাটি ঘটাতে হামলাকারীরা ৫ মিনিট সময় নিয়েছেন।

তবে আমর‍া আসামিদের শনাক্ত করতে পেরেছি। তাদের বিষয় বেশ কিছু তথ্যও আমরা পেয়েছি। আশা করছি হত্যাকারীদের শিগগিরই গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।  

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, হামলা চালিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা অফিসের গেটটি বাইরে থেকে আটকে দিয়ে যায়। যাতে আহত কেউ সঙ্গে সঙ্গে বেড়িয়ে আসতে না পারে এবং তারা যাতে সহজে পালাতে পারে।

পরে ওই ভবনের দারোয়ান বায়জিত বাড়ি দরজার শব্দ শুনে এগিয়ে যায়। দরজা খুলতেই ভেতরে থাকা গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত অবস্থায় তিনজনকে দেখতে পায়। এরপর ভবনের মালিককে বিষয়টি জানান তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব তথ্য দেয় দারোয়ান বায়জিত বাজি।

হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ওই অফিসের স্টাফ (কর্মচারী) আলী হোসেন। তিনি  বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘটনার সময় অফিসে আমরা ৯জন উপস্থিত ছিলাম। বস (সিদ্দিক হোসেন) তার রুমে বসা ছিলেন। বহিরাগত ৪ জন অফিসে ভেতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করে বস কে? এর মধ্যে একজন বসের রুমে ঢুকে যায়, আমি তখন পেয়ারা আর পানি দিতেই বসের রুমে গিয়েছিলাম। প্রথমে আমাকে পিস্তল দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে এবং কোনো কথা না বলেই বসকে গুলি করে। বস চেয়ার থেকে মাটিতে পড়ে যান। ’

তিনি বলেন, হাতে পিস্তলসহ আরও দুই সন্ত্রাসী অন্য রুমে অফিসের কর্মকর্তাদের এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়।

কী কারণে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে সে বিষয়ে এখনো কো ক্লু খুজে পায়নি পুলিশ। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পারিবারিক, ব্যবসায়ীক ও স্থানীয় কোনো কারণ জড়িত আছে কি না সে বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ব্যাপারে নিহতের পরিবারও সঠিকভাবে কিছু জানাতে পারছে না।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
এসজেএ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।