ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

অফিস টাইমে মহিলা বাস, বাকি সময় ভোগান্তির যাত্রা!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
অফিস টাইমে মহিলা বাস, বাকি সময় ভোগান্তির যাত্রা! অফিস টাইমে মহিলা বাস, বাকি সময় ভোগান্তির যাত্রা

ঢাকা: দুপুর ২টায়। ফার্মগেট মোড়ে শত শত যাত্রীর সঙ্গে পরিবহনের অপেক্ষায় ফাহমিদা। গন্তব্য উত্তরা এয়ারপোর্ট। নাকের ডগার সামনে দিয়ে একের পর এক বাস যাচ্ছে। কিন্তু ফাহমিদা বারবার চেষ্টা করেও উঠতে ব্যর্থ। 

আধঘণ্টার চেষ্টায় বঙ্গবন্ধু পরিবহন নামে একটি বাসে উঠতে সামর্থ্য হলেও ততক্ষণে হজম করতে হয়েছে পরিবহন কর্মচারীদের নানা হয়রানিমূলক আচরণ।

দেড় কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করে রাজধানী ঢাকায়।

ঘনবসতিপূর্ণ এই নগরীতে নানা দুর্ভোগ নিয়ে বসবাস মানুষের। তার মধ্যে প্রতিদিনের একটি দুর্ভোগ পরিবহন সংকট। এর সঙ্গে যানজট ঠেলে রাজধানীর জীবন-যাপন দুঃস্বপ্ন হিসেবে ধরা দিয়েছে নগরবাসীর কাছে। দুর্ভোগের এই শহরে পরিবহনে পুরুষেরা বাদুড় ঝোলা হয়ে চলাচল করলেও ভোগান্তির শেষ নেই নারীদের।
 
রাজধানীর বিভিন্ন রুটে বিআরটিসি মহিলা বাস সার্ভিস চালু থাকলেও পর্যাপ্ত না হওয়ায় গণপরিবহনে নানাভাবে নিগ্রহের শিকার হয় কর্মজীবী নারী। মহিলা বাস সার্ভিস শুধু সকাল-বিকেল দুই সময় নারীদের নিয়ে যাতায়াত করে। বাকি সময় নারীদেরও গণপরিবহনে ভোগান্তির যাতায়াত করতে হয়।
...রাজধানীতে সব ধরনের কর্মসংস্থানে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এর ফলে পরিবহনের ভেতরেও নারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে তুলনায় বিআরটিসি‘র মহিলা বাস সার্ভিস নিতান্তই অপ্রতুল।
 
মিরপুর-১০ থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টায় মহিলা বাসে করে কর্মস্থলে যান মতিঝিল জনতা ব্যাংকে কর্মরত আফিফা ইয়াসমিন।

তিনি বলেন, মহিলা বাস আমার কাছে স্বস্তির নাম। প্রতিদিন ভিড় ঠেলে নারীদের জন্য গণপরিবহনে যাতায়াত করা কঠিন। মতিঝিল থেকে সন্ধ্যায় মহিলা বাস ফিরতি ট্রিপ ছাড়ে। অফিস থেকে বের হতে একটু দেরি হলেই বাস মিস। তখন আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা পর যুদ্ধ করে পাবলিক বাসে ওঠা। এজন্য আরও কিছু মহিলা বাস চালু করলে নারীদের জন্য সুবিধা হয়।
 
...বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং সেক্টরে কাজ করে নুসরাত জাহান অর্চি। অফিস কাকরাইলে হলেও প্রতিদিন কাজের সুবাধে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। মিরপুর থেকে সকালে মহিলা বাস পেলেও দিনের বেলা ভোগান্তিতে যাতায়াত করতে হয় তাকে।
 
অর্চি বলেন, সকালে মহিলা বাসে করে অফিসে আসি। এরপর সারাদিন এই বাসের দেখা পাওয়া যায় না। অন্য পরিবহনে কষ্ট করে যাতায়াত করি। আবার বিআরটিসির বাস সার্ভিস দেখলে মনে হয় তা কেবল সরকারি কর্মজীবী নারীর জন্য, বেসরকারিদের জন্য নয়। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ সার্ভিস পাওয়া যাবে। দুপুরে নেই, সন্ধ্যার পর পরিবহনের নারীদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় এদিকে কোনো খেয়াল নেই।  
 
তিনি আরো যোগ করেন, বাংলাদেশে নারীরা এখন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের নানা পেশায় কাজ করছেন। গণপরিবহন এখনো নারীদের জন্য হয়রানি ও নিগ্রহের অন্যতম স্থান। বাসে নির্দিষ্ট ৫টি সিট রাখার আইন হলেও প্রায় সময়েই এই সিট নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় নারীদের। এ জন্য সারাদিনে মহিলা বাস সার্ভিস থাকলে আরও ভালো হয়। এতে নারীদের কর্মস্পৃহা বাড়বে।
 
বিআরটিসি’র সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর ১৫ রুটে মাত্র ১৮টি মহিলা বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। প্রতিটি বাসের সকালের ট্রিপ সাড়ে ৭টা থেকে সোয়া ৮টার মধ্যে। ফেরত টাইম ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে।  
 
মিরপুর-১০ থেকে মতিঝিলের মহিলা বাসের সহকারী সুমি বাংলানিউজকে বলেন, রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মিরপুর থেকে তিনটা বাস মতিঝিল, গুলিস্তানের দিকে যায়। সকালে যাত্রী নামিয়ে বসে থাকে আবার সন্ধ্যায় ফেরত আসে।

বিআরটিসি'র ডিজিএম (অপারেশন) মো. আলমাছ আলী বাংলানিউজকে বলেন, মহিলা বাস সার্ভিস প্রজেক্ট আমাদের লসে রয়েছে। এরপরও আমরা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। সকাল ছাড়া দিনের অন্যসময় মহিলা বাস সার্ভিস নেই, তবে কমন ভাবে এই বাসগুলো চালানোর চেষ্টা করি। কোনো বাস বসে থাকে না।
 
রাজধানীতে রুট সিলেক্ট করে আরও মহিলা বাস সার্ভিস নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
  
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
এমসি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।