ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে ফুটপাত ছেড়ে হকাররা এখন রাস্তায়!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
সিলেটে ফুটপাত ছেড়ে হকাররা এখন রাস্তায়! সিলেটে ফুটপাত ছেড়ে হকাররা এখন রাস্তায়! ছবি-আবু বকর/ বাংলানিউজ

সিলেট: ‘টাকা বেশি দিয়েই তো বসেছি। না দিলে কি আর রাস্তায় বসতে দেয়!’- এমনই মন্তব্য সিলেটের জনাকীর্ণ কোর্ট পয়েন্টে ফুটপাত ছেড়ে রাস্তা দখল করে রীতিমতো জেঁকে বসা জনৈক ফল ব্যবসায়ীর। বাড়ি তার কিশোরগঞ্জে। শেখঘাট এলাকায় বাসা ভাড়া করে থেকে ব্যবসা করেন। তার মতো অনেকেই শহরের ব্যস্ততম কোর্ট পয়েন্টে রাস্তার একাংশ দখলে নিয়ে ফল ব্যবসা করছেন। 

যানজট নিরসনে কোর্ট পয়েন্ট ও সিটি পয়েন্ট এলাকায় সবসময়ই পুলিশের সরব উপস্থিতি থাকে। মানুষের চলাচলের জন্য নির্মিত একমাত্র ফুটওভারব্রিজটাও গড়ে উঠেছে কোর্ট পয়েন্টে।

অথচ এই দুটি পয়েন্টের মাঝখানের সড়কে নিত্যদিন বসে ফলের হাট। উদাসীন, নির্বিকার পুলিশ তা দেখেও না-দেখার ভান করে যায়।

ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ ইস্যুতে নগর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে আদালতেও যেতে হয়েছে। অথচ সিটি পয়েন্ট সড়কের ওপর জেঁকে বসা হকারদের প্রতি পুলিশের এহেন উদাসীনতা ও সন্দেহজনক ‘সদয় ভূমিকা’ নিয়ে এপথ দিয়ে চলাচলকারী মানুষের মনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন, অসন্তোষ।  

শুধু কোর্ট পয়েন্ট বা সিটি পয়েন্টই নয়, সিলেট মহানগরের সব স্থানে একই অবস্থা। সবখানেই এখন পসরা সাজিয়ে জেঁকে বসেন হকাররা। ফুটপাত থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর হকাররা এখন সড়কের ওপর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ তারা এখন আগের চেয়ে এক কাঠি সরেস!সিলেটে ফুটপাত ছেড়ে হকাররা এখন রাস্তায়! ছবি-আবু বকর/ বাংলানিউজ
ভ্রাম্যমাণ এই ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের রাস্তার ওপর জেঁকে বসতে দেয়ায় পুলিশের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আইনজীবী ও ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের মতে, সিসিক ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে ট্যাক্স নেবে, সরকারকে আয়কর-ভ্যাট দেবো আর দিনের পর দিন এসব চলতেই থাকবে, তাতো হয় না! 

সরেজমিন দেখা গেছে, সিলেট সিটি পয়েন্ট ও কোর্ট পয়েন্টের মধ্যভাগে ফুটপাত ছেড়ে সড়কেই বসে ব্যবসা করছেন হকাররা। শুধু সড়ক নয়, সড়কের ডিভাইডার ঘেঁষেও বসেছেন ক্ষুদে ফল ব্যবসায়ীরা।  

সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী সড়কের অপর প্রান্তের কালেক্টরেট মসজিদের সামনে ১০টি সিএনজি অটোরিকশা ও হিউম্যান হলার দাঁড়ানোর কথা। অথচ সেখানে শ’খানেক যানবাহন দাঁড় করিয়ে যানজট সৃষ্টি করা হচ্ছে।
 
ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ লালা বলেন, মানুষ কেন খোলামেলা জায়গা ও উন্মুক্ত সড়কে চলাচল করতে পারবে না? পুলিশ কাদের কাছে ধরাশায়ী যে, তারা এতোটাই নিষ্ক্রিয়তা দেখাচ্ছে? সিলেটে ফুটপাত ছেড়ে হকাররা এখন রাস্তায়! ছবি-আবু বকর/ বাংলানিউজ
আদালতের নির্দেশে পুলিশ ফুটপাত দখলকারীদের যে তালিকা দিয়েছে, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু মানুষ এসে বলেন তাদের নামে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। অনেকে বলেন, নেপথ্যের মূল হোতাদের নাম তালিকায় আসেনি। ফুটপাত দখলের নেপথ্যের এই কুশীলবদের বিরুদ্ধে পুলিশের জোরালো আইনানুগ ভূমিকা চান তিনি। এজন্য বার অ্যাসোসিয়েশন যে সংগ্রাম শুরু করেছে, তার শেষও দেখে ছাড়বে।  

সিলেট চেম্বার অব কমার্স’র সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ফুটপাত সমস্যা নিরসনে স্থায়ী সমাধান দরকার। হকাররা এখন ফুটপাত ছেড়ে রাস্তা দখল করে ব্যবসা করছে। এই সমস্যা সমাধানে সিসিক ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বসবে সিলেট চেম্বার।   

তিনি বলেন, হকার সমস্যার কারণে শুধু ব্যবসায়ীরা নয়, সিলেটের পর্যটন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকরা ফুটপাত ধরে এমনকি রাস্তা ধরেও হাঁটাচলা করার জায়গা পান না। পুলিশি সহযোগিতা ছাড়া ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। সিলেটে ফুটপাত ছেড়ে হকাররা এখন রাস্তায়! ছবি-আবু বকর/ বাংলানিউজ এজন্য সিসিককে দায়ী করে তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে ট্যাক্স দিচ্ছি, সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছি। লক্ষ্ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি। কিন্তু বিনিময়ে কিছু পাচ্ছি না। এর স্থায়ী সমাধান দরকার।  

সিলেটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) নিকোলিন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, ভ্রাম্যমাণ খুদে ব্যবসায়ীদের আমরা তো সব সময়ই উঠিয়ে দিই। কিন্তু এরপরও তারা এসে বসে পড়ে। ফাঁড়ি পুলিশও তাদের তাড়িয়ে দিয়েও সামাল দিতে পারছে না। রাস্তা ও ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনও জরুরি বলে মনে করেন তিনি।  

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, হকার তুলে দেওয়া সিসিকের একার পক্ষে সম্ভব নয়। পুলিশকেই শক্ত ভূমিকা নিতে হবে। অভিযান চালালেও পরে এসে ঠিকই বসে যায় হকাররা। এক্ষেত্রে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
এনইউ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।