ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভাড়া ও খাবারের গলাকাটা দাম, ভর্তিচ্ছুদের নাভিশ্বাস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৭
ভাড়া ও খাবারের গলাকাটা দাম, ভর্তিচ্ছুদের নাভিশ্বাস ভাড়া ও খাবারের গলাকাটা দাম, ভর্তিচ্ছুদের নাভিশ্বাস, ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস ও মহানগরীতে ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ভাড়া ও খাবারের অতিরিক্ত দাম রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভর্তি পরীক্ষার আগের দিন থেকে বেড়ে গেছে সবকিছুর দাম। রিকশা ও অটো ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ইচ্ছেমতো।

মেসে অতিথি হয়ে থাকতেও টাকা দিতে হচ্ছে ভর্তিচ্ছুদের!

আবাসিক হোটেলগুলো দিগুণ ভাড়া আদায় করছে। আর সব ধরনের খাবারের দোকানে নেওয়া হচ্ছে গলাকাটা দাম।

ব্যবসায়ীদের পকেট কাটার অসম প্রতিযোগিতায় অতিষ্ট ভর্তিচ্ছুরা। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকরা। ভাড়া ও খাবারের গলাকাটা দাম, ভর্তিচ্ছুদের নাভিশ্বাস, ছবি: বাংলানিউজবিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহীন আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজে বলেন, 'আমি ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বরের খাবার দোকানে দুপুরের খাবার খেয়েছি। ' খাবারের মান একদম বাজে। অথচ তার বিনিময়ে দাম নেওয়া হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি। ভর্তিচ্ছু নয় এমন পরিচয় জানার পর তারা কিছু টাকা কম রেখেছে। '

আবুল খায়ের নামে এক ভর্তিচ্ছু বাংলানিউজকে জানান, ‌'তিনি রাজশাহী রেলস্টেশনের সামনের একটি খাবারে দোকানে এক প্লেট খিচুড়ি ও ডিম ভাজি খেয়েছেন। তার কাছ থেকে দাম রাখা হয়েছে ৪০ টাকা।

ঈশিতা পারভীন নামে এক শিক্ষার্থী জানান, 'তিনি ক্যাম্পাসের পরিবহন মার্কেট থেকে এক লিটার কোমলপানীয় নেন। যার মূল্য স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ টাকা বেশি রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন বাজারের হাফিজুর রহমান নামে এক খাবার দোকানদার বাংলানিউজকে বলেন, এখানকার দোকানিরা সারা বছর তেমন ব্যবসা করতে পারেন না। ভর্তি পরীক্ষার সময় একটু ব্যবসা না করলে চলবো কিভাবে। ভর্তি পরীক্ষার এ মৌসুমি ব্যবসায় কয়েকদিন সবাই একটু বেশিই নেয় বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে, মহানগরীতে থাকা আবাসিক হোটেলগুলোতে এখন আর রুম মিলছে না। আর মিললেও ভাড়া বেশি। রাবি ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শহরের আবাসিক হোটেলগুলোতে বাড়ানো হয়েছে ভাড়া। এক রাত ৪শ' টাকা ভাড়ার বদলে নেওয়া হচ্ছে ৭শ' থেকে ৮শ' টাকা।

নাজমুল ইসলাম নামে একজন অভিভাবক বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহীতে আত্মীয়-স্বজন নেই। তাই রাতে আবাসিক হোটেলে থাকতে হবে। তার বন্ধু কয়েকদিন আগে এক রাতের জন্য এক হাজার ৪শ' টাকায় ডাবল রুম বুকিং দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগরীর হোটেল সোনাদীঘিতে ৫শ' টাকার রুম ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৫শ' টাকা। হোটেল প্রবাসীতে ৬শ' টাকার রুম ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার টাকা। হোটেল সুরমায় ৪শ' টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১২শ' টাকা। এভাবে প্রায় সব হোটেলেই দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

রাজশাহী মহানগরীর মলোপাড়া এলাকার আবাসিক হোটেল আনামের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর বলেন, তাদের হোটেলে ডাবল রুম ১২শ' টাকা। কয়েকদিন আগে ছিলো ৮শ' টাকা। আর সিঙ্গেল রুম ৩শ' থেকে ৪শ' টাকা। তাদের হোটেলে কোনো রুম বুকিং বাকি নেই। চলতি মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্তু সব রুম বুকিং দেওয়া আছে বলে জানান এই হোটেল ম্যানেজার।

এদিকে, মেসে অতিথি হিসেবে থাকার জন্য ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে একজন বিচারকের মামলার প্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞার পরও তা মানছেন না অনেক মেস মালিক।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিনোদপুরের দৃষ্টি ছাত্রীনিবাস, সাইপা নীড়, স্বপ্নীল ছাত্রীনিবাস, গফুর মঞ্জিল, অপূর্ব ছাত্রীনিবাস, জান মোহাম্মাদ, মাহিন ছাত্রীনিবাস, শেফালি মহল, সামিয়া ছাত্রাবাস, ইখওয়ান ছাত্রীনিবাস, মনোরা ম্যানশনসহ বেশ কয়েকটি মেসে ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে প্রতি রাতের জন্য ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২শ' টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন মেস মালিকরা।

এমনকি কোনো মেসে বিছানায় থাকলে ২শ' টাকা এবং মেঝেতে থাকলে ১শ' টাকা নিয়মেও টাকা আদায় করার মত তুঘলকি কাণ্ড ঘটছে।

জানতে চাইলে টাকা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে মোজাম্মেল হক নামে এক মেস মালিক বলেন, ‘ভাড়া নির্ধারণের ব্যাপারে মেস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। ’ তবে রাজশাহী মেস মালিক সমিতির দাবি, তারা প্রত্যেক মেস মালিককেই ভাড়ার বিষয়ে জানিয়েছেন।

রাজশাহী মেস মালিক সমিতির সভপতি খোরশেদ আলম সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সব মেস মালিককেই আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। শুনেছি অনেকেই এ সিদ্ধান্ত মানছেন না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেবো। ’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, 'মেসে অতিথি থাকার জন্য ফি নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মেস মালিকদের বলা হয়েছে তারা যেন অতিথিদের সহযোগিতা করেন। তারা ফি নেওয়ার দাবি করেছিলেন কিন্তু আমরা তাতে রাজি হয়নি'।

তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পাসের ভেতরে কেউ যাতে খাবারের দাম বেশি না নিতে পারে তার জন্য মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি খাবারের দাম নেয়ার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৭
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।