ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ব্যাংক ম্যানেজারের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৭
ব্যাংক ম্যানেজারের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

কিশোরগঞ্জ: সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের কিশোরগঞ্জ শাখা ম্যানেজার সাইফুদ্দিন সবুজের বিরুদ্ধে গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন রেখে অভিযুক্ত ব্যাংক ম্যানেজারকে ১৭ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে ময়মনসিংহ জোনাল অফিসে বদলি করে দিয়েছে।

এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

পরে মামলাটি থানা থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয় ময়মনসিংহে পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও অভিযোগে জানা গেছে, সাইফুদ্দিন সবুজ কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংক শাখায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সম্প্রতি ৭০ থেকে ৮০ জন ব্যবসায়ীকে মোটা অংকের টাকা ঋণ দেয়ার নামে গ্রাহকের কাছ থেকে তাদের ব্ল্যাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর নেন তিনি। গ্রাহকদের নামে ঋণ মঞ্জুর হলেও গ্রাহকরা অ্যাকাউন্টে খবর নিয়ে দেখেন তাদের একাউন্টে টাকা নেই, সব টাকা তোলা হয়ে গেছে। এছাড়া অনেক গ্রাহকের কাছ  থেকে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেয়ার কথা বলে রশিদ নেয়া হলেও একাউন্টে খবর নিয়ে দেখেন তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা নেই।   বিষয়টি জানাজানি হলে সব গ্রাহক ব্যাংকে এসে খবর জানতে ভিড় করছেন। অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় অনেক গ্রাহকরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এখন তারা কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

কিশোরগঞ্জ শহরের উকিলপাড়া জামিয়া রোডের বাসিন্দা ঠিকাদার আশিক জামান এলিন বাংলানিউজকে জানান, তিনি সোনালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখায় চার লাখ ২০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখন তার একাউন্টে কোনো টাকাই নেই। পুরো টাকাই শাখা ম্যানেজার তুলে নিয়েছেন।

পাগলা মসজিদ এলাকার বিছমিল্লাহ লাইব্রেরির মালিক জুলহাস সওদাগর বাংলানিউজকে জানান, তিনি কয়েকদিন আগে ব্যাংকে ৮০ হাজার টাকা জমা দিয়ে রশিদ নিয়ে চলে যান। এরপর ১৩ অক্টোবর তিনি টাকা তুলতে গেলে তার একাউন্টে কোনো টাকা নেই বলে ব্যাংক থেকে বলা হয়।

কিশোরগঞ্জ সদরের মোল্লাপাড়া এলাকার ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের মালিক মো. আক্তার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তিনি তিন মাস আগে ১০ লাখ টাকা ঋণের জন্যে আবেদন করেন। এ সময় শাখা ম্যানেজার সাইফুদ্দিন সবুজ তার কাছ থেকে তিনটি খালি চেকে স্বাক্ষর করে রাখেন। কয়েকদিন আগে ব্যাংকে এসে খবর নিয়ে দেখেন যে, তার নামে ১০ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে।

অ্যাকাউন্টে টাকা নেই এ ধরনের অনেক অভিযোগ ইতোমধ্যে জমা পড়ছে। প্রতিদিন শাখা ম্যানেজার সাইফুদ্দিন সবুজের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

ধারণা করা হচ্ছে, ৭০ থেকে ৮০ জন গ্রাহকের অন্তত ১৫ কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শাখা ম্যানেজার সাইফুদ্দিন সবুজের ব্যক্তিগত মোবাইল (০১৭৪৭৭৯৮২৩২) ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের নতুন যোগদান করা শাখা ম্যানেজার মো. মাহবুবুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে জানান, এখন পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি দু’টি টিম তদন্ত করছে।

কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নুর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে জানান, এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে শাখা ম্যানেজার সাইফুদ্দিন সবুজের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

প্রাথমিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। নতুন নতুন অভিযোগ আসছে। সবগুলোই আমলে নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার শওকত জাহান বাংলানিউজকে জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা থাকায় মামলাটি দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ময়মনসিংহে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, ২২ অক্টোবর, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।