ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

এক জোয়ারেই নিঃস্ব সোনাগাজীর শত পরিবার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৭
এক জোয়ারেই নিঃস্ব সোনাগাজীর শত পরিবার জেলে পাড়া নদী ভাঙা এলাকার খাতিজা খাতুনের কান্না, ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: একদিন আগেও তাদের স্বচ্ছল পরিবার। দিন পার হতেই উল্টে গেলো চিত্র। আকস্মিক এক জোয়ারই ভাসিয়ে নিয়ে গেলো পরিবারগুলোর বেঁচে থাকার শেষ সম্বল টুকুও! 

এখন তাদের দিন কাটছে উপোস। খাদ্যের অভাবে আগুন জ্বলেনি চুলায়।


 
শনিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ফেনীর সোনাগাজী উপকূলীয় এলাকায় হঠাৎ জোয়ারে এমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার। রোববার (২২ অক্টোবর) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ক্ষয়-ক্ষতির এ ভয়াবহ চিত্র।
 
উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের জেলে পাড়া, চর খোন্দকার গিয়ে দেখা যায় সব হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে সেখানকার বাসিন্দারা। কথা হয় জেলে পাড়া নদী ভাঙা এলাকার খাতিজা খাতুনের সাথে। তিনি জানান, শনিবার দুপুর ১টার দিকে জোয়ার আসতে শুরু করে, হঠাৎ করে পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে, এক পর্যায়ে বেড়িবাঁধের প্রায় পাঁচ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় জোয়ার। যা স্বাভাবিক সময়ের চাইতে চার/পাঁচগুণ বেশি। সর্বসাকুল্যে এক ঘণ্টার জোয়ার ভাসিয়ে নিয়ে যায় ঘরের মূল্যবান আসবাবপত্রসহ, ভাসিয়ে নিয়ে যায় ঘরের টিনের চালও।  উপড়ে গেছে বাড়িঘর, টিনের চাল, ছবি: বাংলানিউজখাতিজা বলেন, ঘরে প্রাপ্ত বয়স্ক তিন মেয়ের জন্য স্বর্ণালঙ্কার ছিল, ছিল নগদ হাজার পঞ্চাশেক টাকাও। জোয়ার সব ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। খাওয়ার জন্য একমুঠো চালও নেই। ঘরে টিনের চাল, বেড়া সবই ভেসে যায় অবশিষ্ট রয়েছে শুধু ভিটেমাটি।

এরপর কিছু দূর গিয়ে কথা হয় একই পাড়ার আবুল কালামের সঙ্গে। গেলো বছর নদী ভাঙনে ঘর বাড়ি হারিয়ে এ পাড়ায় বসত গড়েছিলেন তিনি। আরেকজনের জমিতে দোচালা ঘরই ছিল তার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল- জোয়ার তার ঘরটিও ভাসিয়ে নিয়ে যায়। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই পাড়ার রেহানা আক্তার জরিনা খাতুন ও আবদুল মান্নানের পরিবার।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানায়, সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলেও তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও উপজেলা প্রশাসন।  

অভিযোগের ভিত্তিতে কথা হয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলনের সঙ্গে। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে চিড়া, মুড়িসহ শকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। দুই-একটি পরিবার হয়ত বাদ পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সংগ্রহ করছে পরবর্তীতে সহায়তা বাড়ানো হবে।

উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া হিসেব মতে শনিবারের জোয়ারে মোট ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপজেলার প্রায় ছয় শতাধিক বসতবাড়ি। কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বেড়িবাধেঁর প্রায় পাঁচ ফুট উপর দিয়ে পানি প্রভাহিত হয়ে লোনা পানি ঢুকে পড়ে ফসলের মাঠ ও পুকুর জলাশয়ে।  

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান জানান, আকস্মিক এ জোয়ারে উপজেলায় প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৭
এসএইচডি/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।