ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দাম নেই, হিমাগার থেকে আলু তুলছে না কৃষক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৭
দাম নেই, হিমাগার থেকে আলু তুলছে না কৃষক হিমাগারে আলুর খামাল। ছবি: বাংলানিউজ

মুন্সীগঞ্জ জেলায় আলুর বাজার দর কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু নিয়ে  চরম বিপাকে পড়েছেন। চলতি বছর জেলায় ৩৯ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে মোট ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়। এর মধ্যে জেলার ৭৪টি হিমাগারে রাখা হয় ৫ লাখ ৪০ হাজার টন আলু। হিমাগারে রাখা সেই আলুর প্রায় ৪ লাখ টন এখনো অবিক্রিত থাকায় ১শ’ কোটি টাকারও বেশি লোকসান গুণতে হবে।

বস্তা প্রতি (৮০ কেজি) আলুর উৎপাদন খরচ ১৩৫০-১৪০০ টাকা, আর বর্তমান বাজার দর ৬০০-৭০০ টাকা। তাই হিমাগার থেকে অনেকেই আলু তুলছেন না।

তারওপর আলু রেখে হিমাগারের মালিকের কাছে নেওয়া ঋণ পরিশোধে দেরি হচ্ছে।

এলিট হিমাগারের ম্যানেজার আওলাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন,  আলুর বাজার শুরু থেকেই মন্দা। আলুর দাম কম হওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে। বর্তমানে জেলার হিমাগারগুলো আলুতে পরিপূর্ণ। বর্তমানে কাঁচা আলু ৬০০-৬৫০ টাকা, এই বাজার দরে আলু চাষিকে ৬০০-৭০০ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।

সদর উপজেলার কদম রসূল হিমাগারের ম্যানেজার দুলাল মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, জেলার প্রত্যেক হিমাগার এখন আলুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে বিগত আলু মৌসুমের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি আলু সংরক্ষিত আছে। ব্যাংক ঋণ নিয়েই হিমাগার পরিচালনা করছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে কৃষকরা তাদের নিজস্ব অর্থ ও এনজিও কিংবা অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ নিয়ে হিমাগারে আলুর মজুদ রেখেছেন। কিন্তু আলুর দাম কমে যাওয়ার কারণে কোনো ব্যবসায়ী কিংবা কৃষক এখন হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না।

‌আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক।  ছবি: বাংলানিউজআলু ব্যবসায়ী হাসান মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন,  আলু যখন হিমাগারে রাখা হয়েছিল তখন ভাড়াসহ সব মিলিয়ে ১৩০০-১৩৫০ টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু এখন প্রতি বস্তায় ৬০০-৭০০ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। খাদ্য তালিকায় উপস্থিতি কমে যাওয়ায় অনেকেই আলু ক্রয়ে অনিহা দেখাচ্ছেন।

আলু চাষি জামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ৫ দিন ধরে আলু নিয়ে বসে আছি। কেউই কিনতে আসছে না। ১০০ বস্তা আলুর মধ্যে ১০ বস্তাই ফেলে দিতে হচ্ছে পচে যাওয়ায়। আগামী মৌসুমে আমার পাশাপাশি অনেক আলু চাষিই মুখ ফিরিয়ে নেবেন। মূলধন উঠে আসবে কি না তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন,  ৬০০-৭০০ টাকা দরে হিমাগার থেকে আলু বিক্রি করা হচ্ছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছে এ বছর। যারা আলু উত্তোলন করে বিক্রি করেছে তারাই লাভবান হয়েছে। চাহিদার তুলনায় এবার উৎপাদন বেশি। বাজার দর কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আলু ব্যবসায়ী, কৃষক এবং হিমাগার মালিকরা।

আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক।  ছবি: বাংলানিউজবাংলাদেশ হিমাগার অ্যাসোসিয়েশন চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন পুস্তি বাংলানিউজকে বলেন,  আলুর বর্তমান বাজার দর ৫৫০-৬০০ টাকা বস্তা, অথচ কৃষকের বস্তা প্রতি মোট খরচ হয়েছে ১৩৫০-১৪০০ টাকা। ফলে কৃষক বাধ্য হয়েই আর আলু বিক্রি করতে আসে না। এ বছর এখন পর্যন্ত ৪০ ভাগ আলু খালাস হয়েছে। অন্যান্য বছর এ সময়ে ৮০ ভাগ আলু  খালাস হতো। যদি কৃষক আলু না নেন তবে আমরা লোকসানের  সম্মুখীন হবো। আমরা কৃষকদের আলু বপনের পূর্বে ঋণ সহায়তা দিয়েছি, সেই টাকা আমাদের উঠবে না। বর্তমানে দেশ থেকে ২০ ভাগ আলু বহি:বিশ্বে রপ্তানি করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি অধিদপ্তর এবং ব্যবসায়ীদের নিয়ে সমন্বয় করে আলু রপ্তানি বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা হিমাগার ব্যবসায়ীরা এখন চরম হতাশাগ্রস্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad