ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নিষেধাজ্ঞার শেষ মুহূর্তে জেলেদের ইলিশ শিকারের অপেক্ষা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৭
নিষেধাজ্ঞার শেষ মুহূর্তে জেলেদের ইলিশ শিকারের অপেক্ষা নিষেধাজ্ঞার শেষ মুহূর্তে জেলেদের ইলিশ শিকারের অপেক্ষা

মুন্সীগঞ্জ: বরাদ্দের ২০ কেজি চাল না জুটলেও মুন্সীগঞ্জ অংশে পদ্মা, মেঘনার জেলেদের কপালে জুটেছে জেল-জরিমানা। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। শেষ মুহূর্তে এসে নদীতে মাছ শিকারের অপেক্ষায় রয়েছেন জেলেরা।

মুন্সীগঞ্জ অংশের পদ্মা, মেঘনার পাড়ের মাছ শিকারের নৌকাগুলো অলস সময় শেষে এবার ব্যস্ততায় ফেরার অপেক্ষায়। ব্যস্ততা চলছে আড়ৎদার, টলার মালিক এবং জেলেদের মধ্যে।

রাত ১২টার পর জেলেরা নদীতে মাছ শিকারে যাবেন। বরাদ্দ না পাওয়া জেলেদের মুখে হাসি ফুটবে। পরিবারের আর্থিক চাকা আবার সচল হবে। এমন আশাবাদের কথাই শুনিয়েছেন নি:স্ব-রিক্ত, বরাদ্দহীন অভুক্ত-অর্ধভুক্ত জেলেরা।  

মুন্সীগঞ্জ জেলার পদ্মা, মেঘনা নদীর অংশের জেলেরা জাল, মাছ শিকারের নৌকা, সরঞ্জাম মেরামত ও গোছাতে ব্যস্ত। ২২ দিন বন্ধ থাকার পর আজ রোববার দিনগত রাত ১২টার পর নদীতে মাছ ধরতে নামবেন জেলেরা।  

জেলাতে এবারও বরাদ্দ না আসায় অনেক জেলে অভাব অনটনে দিনযাপন করেছেন। তবে আইন অমান্য করে অনেকে জেলে ও ব্যবসায়ী মাছ শিকার এবং বিক্রি করছেন। মৎস্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশের সাথে সমন্বয় করে অভিযান চালনা করা হয়। ব্যবসায়ীদের ইলিশ মাছ বিক্রি শুরু করতে বাধা না থাকায় লৌহজংয়ের উপজেলার মাওয়ায় চলছে ইলিশের অপেক্ষা।  
 
জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর বিকাল পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে ৭১টি, অভিযান  ১৮২টি এবং হাট বাজার পরিদর্শন হয়েছে ১৫১২টি। অভিযানে মা-ইলিশ জব্দ করা হয়েছে ৪.৪১৯ মেট্রিক টন (৪৪১৯ কেজি) এবং জাল ৮৫.৯৬৬ লাখ মিটার, ৯১ জেলে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। ১৭৮টি মামলা করা হয়েছে এবং জরিমানাকৃত ২ লক্ষ ২২হাজার ১শ টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা দেওয়া হয়েছে। জব্দ করা মা-ইলিশ বিভিন্ন এতিমাখানা ও মাদ্রাসায় বিতরণ এবং আটক করা জাল পুড়িয়ে বিনিষ্ট করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার শেষ মুহূর্তে জেলেদের ইলিশ শিকারের অপেক্ষা

জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, মধ্যরাতে আমরা জেলেরা ট্রলার নিয়ে নদীতে ইলিশ শিকারে বের হবো। এখন জাল, ট্রলার ঠিকাঠাক আছে কিনা দেখছি। যা ধারদেনা হয়েছে সব পরিশোধ করতে হবে জেলেদের। আর জেলেদের নিরাপদ মৎস্য শিকার নিশ্চিত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত জলদস্যু দমন অভিযান পরিচালন করা।  

পদ্মা নদীর ইলিশ মাছ শিকারি দর্পণ মাঝি জানান, কিস্তি থেইকা টাকা তুইলা খাইয়া না খাইয়া আছিলাম। আমাগো কেউই দেখতে আহে নাই। গত বছরের মতো এইবারেও কোনো চাউল পাই নাই। আমাগো লগের অনেকেই এখনো কারাগারে আছে। মাছ ধরার জাল পোড়াইয়া দিছে। এহন নতুন জাল লইয়া নদীতে নামমু। শহরে বাজারে যাইয়া বড় ইলিশ কিইন্না লইয়া যাইবেন, আর আমাগো তো এই কয়দিনের দেনা মিটাইতে হইব।  এহন জাল ঠিক করাতছি রাতে নদীতে মাছ ধরতে নামমু।  

মেঘনা নদীর মাঝি দিদারুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ২২টা দিন ধইরা খাইয়া-না খাইয়া আছিলাম। কেউই আমাগো দেখতে আহেন নাই। অহন আমরা মাছ ধরতে পারমু নদীতে। রাত ১২টার পর থেইকা নৌকা লইয়া নদীতে নামমু। জাল ঠিক করতাছি আর নৌকাডা একটু মেরামত করতাছি। আমাগো লগের অনেকই জেল থেইকা ছাড়া পাইছে তারাও আমাগো লগে মাছ ধরবো। ঘরে একটা টাকাও ছিল না, আমাগো জরিমানা করছে সরকারের লোকেরা। এহন আমাগো শুধু মাছ ধইরা টাকা ইনকাম করতে হইব।  

মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সরোজিৎ কুমার ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, আমরা জেলেদের পাশে আছি। তারা যাতে নিরাপদে ইলিশ শিকার করতে সেজন্য আমরা তাদের পাশে আছি। রাত ১২টার পর নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। জেলেরা যাতে নদীতে নামে শংকা ছাড়াই মাছ শিকার করতে পারে তা নিশ্চিত করা হবে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলিয়ুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, রাত ১২টার পর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। জেলেরা মাছ শিকার করতে পারবেন। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে আমরা জেলেদের জেল-জরিমানা করেছি। এছাড়া লৌহজং উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তারা পদ্মায় অভিযান চালাতে গিয়ে আহত হয়েছেন জেলেদের হামলায়। জেলাতে ৪.৪১৯ মেট্রিক টন (৪৪১৯ কেজি) ইলিশ, ৮৫.৯৬৬ লাখ মিটার জাল এবং ৯১ জেলে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৭
এসএইচ/ জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।