ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

টানা বর্ষণে নাটোরে রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৭
টানা বর্ষণে নাটোরে রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নাটোর: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে টানা দু’দিনের অবিরাম বর্ষণে নাটোর জেলার সাতটি উপজেলায় রোপা আমনসহ শাক সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার অনেক গাছপালা উপড়ে পড়েছে। অনেক স্থানে রোপা আমন পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং উঠতি পাকা ধান গাছ জমিতে ন্যুইয়ে পড়েছে। এছাড়া অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার সাতটি উপজেলা এবার বন্যা কবলিত হওয়ার পরও ৫৬ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান এবং ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। দু’দিনের বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির ধান ন্যুইয়ে পড়েছে।

এছাড়া করলা, বেগুন, বরবটি, মুলা, বাধা কপি, লাল শাক, পালং শাকসহ প্রায় ৫শ’ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে।
 
বড়াইগ্রামের তিরাইল গ্রামের কৃষক হানিফ শেখ বাংলানিউজকে বলেন, তিন বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছেন তিনি। যা এখন পানির তলে। তিন/চারদিনের মধ্যে জমি থেকে পানি না নামলে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তিনি।
 
নলডাঙ্গা উপজেলার বুড়ির ভাগ গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান ও আবুল কাশেম জানান, তাদের জমির প্রায় ৯৫ ভাগ রোপা আমন ধান পেকে গেছে। দুই/একদিনের মধ্যে এসব ধান কাটতেন। কিন্তু এরই মধ্যে বাতাসে পাকা ধান পড়ে গিয়ে অনেকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এ ধান কাটতে তাদের অতিরিক্ত শ্রমিক খরচ গুণতে হবে।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, দুই/একদিনের মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেলে কৃষকের কোনো ক্ষতি হবে না। আর বর্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হলে কিছুটা ক্ষতি হবে। তবে ধান কাটার খরচ কিছুটা বাড়বে।
 
এদিকে, দু’দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে বেশি বিপাকে রয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আগাম শীতকালীন সবজিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
 
এছাড়া অনেকটাই বিপর্যস্ত অবস্থায় সময় কাটাচ্ছেন স্কুল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, দিনমজুর, কৃষকসহ নানা পেশার মানুষ। বাড়ির নারী ও শিশুরাও এ বৈরী আবহাওয়ায় ভালো নেই। বিশেষ করে শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত রোগে ক্রমশই আক্রান্ত হচ্ছে।
 
সরেজমিনে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ফসলি জমি ও স্কুলগুলোর মাঠেও পানি জমে আছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতিও কম। শহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। হাট-বাজার বা রাস্তা-ঘাটে মানুষের চলাচলও ছিল অতি সামান্য।
 
শহর ও বিভিন্ন বাজারগুলোতে দোকানপাট স্বাভাবিক দিনের চেয়ে একটু দেরিতে খুলেছে, গণপরিবহনের সংখ্যাও অনেকটা কম দেখা গেছে।

অপরদিকে নদী এবং চলনবিল ও হালতিবিলে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির উচ্চতা কিছুটা বেড়েছে।
 
ঝড়ো বাতাসে বেশ কিছু এলাকার গাছপালা ভেঙে ও উপড়ে পড়েছে। সড়কের ওপর গাছ ভেঙে পড়ায় শনিবার সকাল নাটোর-বগুড়া সড়কের সেরকোল ও নলডাঙ্গা এলাকায় প্রায় ঘণ্টা ধরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) রাত ৮টা থেকে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাযালয়ের উপ সহকারী কৃষি অফিসার এমকে হেলাল হেলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৪৭ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দিনের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ছিল ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
 
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার নিতাই চন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে জানান, বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকলে এবং গাছপালা কেটে সরানো না গেলে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৭
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad