ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শীতের সবজিতে স্বপ্ন বুনছেন সৈয়দপুরের চাষিরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
শীতের সবজিতে স্বপ্ন বুনছেন সৈয়দপুরের চাষিরা সৈয়দপুরে আগাম সবজির ক্ষেতে সিমের ফুল

নীলফামারী: আলু, ধানসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে একের পর এক লোকসান গুনে এবার শীতের সবজিতে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের কৃষকরা।

নীলফামারীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার সৈয়দপুরে শীতের আগাম সবজি উঠতে শুরু করেছে। ইজিবাইক, রিকশা ভ্যানে এসব সবজি সরাসরি এই পাইকারি বাজারে আসছে।

বিক্রি বাট্টাও ভালো। ফলে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

উপজেলার কামারপুকুর, কাশিরাম বেলপুকুর, খাতামধুপুর, বাঙ্গালিপুর ও বোতলাগাড়ি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ করা হয়েছে বোতলাগাড়ির শ্বাসকান্দর, পোড়ারহাট, বেংমারী, অচিনার ডাংগা প্রভৃতি এলাকায়। সেখানে দিনরাত পরিশ্রম করে সবজির পরিচর্যা করছেন কৃষকরা।

বাড়তি আয়ের আশায় পোকা- মাকড় দমনে কেউ স্প্রে করছেন, কেউবা নিড়ানির জন্য শ্রমিক নিয়োগ করেছেন। জমিতে শ্যালো ইঞ্জিনের পানির পাম্প বসিয়ে চলছে সেচের ব্যবস্থাও। চারিদিকে শীতের সবজির সমারোহ। বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা, করলা, লাল শাক, পালং শাক, শিম, টমেটো, বেগুন, লাউ, শসা, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, ডাটা, চিচিঙা, পটল, ঢেঁড়স, কাঁচা মরিচ প্রভৃতি ফসলে গাছ ভরে গেছে। আগাম চাষ করে বাজারে তোলায় দামও পাচ্ছেন কৃষকরা। সৈয়দপুরের ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে বোতলাগাড়িতে সবচেয়ে বেশি শাক-সবজি আবাদ হয়। ফলে এখানকার উৎপাদিত শাক- সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বাইরের জেলাগুলোতে সরবরাহ হচ্ছে। এই কারণে ইউনিয়নটি শাক- সবজির এলাকা হিসেবে সর্বত্র পরিচিতি লাভ করেছে। সৈয়দপুরে আগাম সবজির ক্ষেতে কাজ করছে চাষিরা  উপজেলার শ্বাসকান্দর এলাকার চাষি আনোয়ার, মহেশ চন্দ্র ও সাবের আলী জানান, টানা কয়েক বছর ধান চাষে কৃষকরা দাম না পাওয়ায় শীতের সবজি আবাদ করে দুটো পয়সার মুখ দেখছেন। বিশেষ করে এলাকায় আগাম শীতকালীন সবজিতে এখানকার কৃষকরা স্বাবলম্বী স্বপ্ন দেখছেন বলে জানান তারা।

সৈয়দপুরের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে,  শিম প্রতিকেজি ১০০ টাকা, বাঁধা কপি ৮০ টাকা, ফুল কপি ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৯০ টাকা, ধনেপাতা ২৫০ টাকা, সরিষা শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ৩৫ টাকা, মুলা ৫০ টাকা ও টমেটো ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখানকার পাইকারি বাজার থেকে কিনে খুচরা দোকানিরা কেজিতে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা লাভ করছেন। অথচ পাইকারি বাজার থেকে খুচরা দোকানিদের দূরত্ব মাত্র ১শ’ গজ। এছাড়া এই বাজার থেকে পাইকাররা শীতের সবজি কিনে ট্রাকযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।

পাইকারি বাজারের আড়তদাররা জানান, চাষিরা সরাসরি এই বাজারে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেন না। তারা সবজি প্রথমে আড়তে আনেন, তারপর আড়তদারই চাষির সবজি বিক্রি করে দেন। বিনিময় আড়তদারকে পণ্য অনুযায়ী কমিশন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ২শ’ টাকা গুণতে হয়।

উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল হেলাল চৌধুরী জানান, তাঁর ইউনিয়নের জমি শাক- সবজি চাষের উপযোগী। এ কারণে এখানকার ৮৫ ভাগ মানুষ শাক-সবজির চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখানকার চাষিরা সবসময় আগাম জাতের শাক-সবজি আবাদ করে থাকেন।

সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হোমায়রা মন্ডল জানান, এই উপজেলার প্রায় সব জমি সবজি চাষের জন্য উপযোগী। আলু, ধান ও অন্যান্য ফসল আবাদ করে কৃষকরা তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। ফলে চলতি মৌসুমে ব্যাপকহারে সবজির আবাদ করা হয়েছে। এতে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন এবং ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।