ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই সৎ ভাইকে হত্যা, গ্রেফতার ৫

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৭
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই সৎ ভাইকে হত্যা, গ্রেফতার ৫ পুলিশের সংবাদ সম্মেলন; ছবি: বাংলানিউজ

কুমিল্লাঃ জেলার মেঘনা উপজেলায় প্রতিপক্ষকে হত্যা মামলায় ফাঁসাতে আমির হোসেন (৪২) নামের এক ব্যক্তিকে তারই সৎ ভাই দেলোয়ার হোসেন সহযোগীদের নিয়ে হত্যা করেছে। পরে ঘাতকচক্র প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করার ব্যাপারে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সহযোগিতা চাইতে এসে নিজেরাই ফেঁসে যায়।

এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয়া ২ ঘাতক এবং তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহায়তাকারী এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ আরও ৩ জনকে।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের রোমহর্ষক কাহিনি তুলে ধরেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর রাতে উপজেলার চালিভাঙ্গা (ইসলামপুর) গ্রামের হানিফ মিয়ার পুত্র দেলোয়ার হোসেন তার প্রতিপক্ষ একই এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন ও তার গ্রুপের লোকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার ফাঁদ পাতার জন্য সহযোগীদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় গোপন বৈঠক করে। পরে দেলোয়ার তার সৎ ভাই আমির হোসেনকে (৪২) মোবাইলফোনে বাড়ি থেকে নৌকাযোগে সোনারগাঁ এলাকায় ডেকে নেয়।

সেখান থেকে বাড়ি ফেরার কথা বলে মেঘনা উপজেলার পাগাড়িপাড়া এলাকায় খালে এসে নৌকার ভেতরই তারা আমির হোসেনকে চাপাতি ও ছোরা দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। এরপর লাশ পানিতে ফেলে দেয় ঘাতকচক্র। অথচ  পাষণ্ড দেলোয়ার ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর তার উপর প্রতিপক্ষ হামলা চালিয়েছে বলে এলাকাবাসী ও পুলিশে খবর দেয়।

গত ১৭ অক্টোবর পাগাড়িপাড়ার খাল থেকে থানাপুলিশ আমির হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করে। একই দিন দুপুরে নিহতের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন জানান, মরদেহ উদ্ধারের দিন স্থানীয় চালিভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান লতিফ সরকার ও মেম্বার নুরুল ইসলামকে নিয়ে দেলোয়ার হোসেন আমার কার্যালয়ে এসে ঘটনার উল্টো বর্ননা দেয়। তারা হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রতিপক্ষ হুমায়ুন চেয়ারম্যান গ্রুপকে দায়ী করে।

এ সময় তাদের বক্তব্য সন্দেহজনক মনে হওয়ায় জেলা গোয়েন্দা শাখায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ব্যবস্থা করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তাদের মুখ থেকেই আসল সত্য বেরিয়ে আসে। অবশেষে  গ্রেফতার করা হয় ঘাতক, পরিকল্পনাকারীসহ ৫ জনকে।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনসহ গ্রেফতার অভিযানে অংশ নেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুন, সহকারী পুলিশ সুপার(দাউদকান্দি সার্কেল) মহিদুল ইসলাম, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একেএম মঞ্জুর আলম, মেঘনা থানার ওসি শামসুদ্দিন আহমেদ, ডিবির এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি মো. আলমগীর হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) আমিরুল্লাহ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এসআই শাহ কামাল আকন্দ জানান, প্রধান ঘাতক দেলোয়ার ও তার সহযোগীরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। গত কয়েক বছর আগে সন্ত্রাসী দেলোয়ারের হাতেই তার বাবা হানিফ খুন হন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। দেলোয়ারের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে অপর ঘাতক একই গ্রামের মানিককে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়। দেলোয়ার ও মানিক বুধবার কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী আরাফাত উদ্দিনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িতদের পাশাপাশি পরিকল্পনাকারীদের বিষয়ে মূল্যবান তথ্য দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ মামলায় ঘাতক দেলোয়ার ও মানিকসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অপর আসামিরা হচ্ছে, স্থানীয় চালিভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ সরকার (৫৫), পরিষদের সদস্য নুরুল আমিন মেম্বার (৪৫), একই গ্রামের সাইদুল ইসলাম (২৪)।

এদিকে আমির হোসনের সকল ঘাতক এবং পরিকল্পনাকারীর গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।

বাংলাদেশ সময়:২০১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।