ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তিন প্রতিবন্ধী ছেলের শিক্ষা, চিকিৎসা নিয়ে মায়ের আর্তি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৭
তিন প্রতিবন্ধী ছেলের শিক্ষা, চিকিৎসা নিয়ে মায়ের আর্তি ভাগ্যের ফের। তিন ছেলের তিনজনই প্রতিবন্ধী; ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে মরিয়ম বেগমের সংসার। কিন্তু সোনার টুকরো তিন ছেলের তিনজনই প্রতিবন্ধী। ভাগ্যের এমনই নির্মম পরিহাস স্বামীহারা মরিয়ম বেগমের। স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছায়েদ আলী আকন্দ জটিল রোগে ভুগে মারা গেছেন প্রায় বছর দুয়েক আগে। আর এখন প্রতিবন্ধী তিন ছেলে নিয়ে ঘোর বিপদে আছেন দুর্ভাগা এই নারী।

মরিয়ম বেগমের সংসারে রয়েছে প্রচণ্ড অভাব। মুক্তিযোদ্ধার স্বামী ও ছোট ছেলের ভাতার টাকায় চলছে তার অভাবী সংসার।

এই টাকায় খাওয়ার পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচও যোগাতে হচ্ছে। চালাতে হচ্ছে ছোট ছেলের চিকিৎসার ব্যয়ভারও।

‘কিন্তু এভাবে আর কতদিন ?’—নিজের কাছেই নিজের প্রশ্ন হতভাগা এই মায়ের। তবে ছেলেরা প্রতিবন্ধী হলেও ছাড়াননি তাদের লেখাপড়া। এতো প্রতিকূলতা, এতো যে অভাব, এতো যে নিরুপায়, নি:সহায় অসহায়ত্ব তবুও হারার আগে হার মানতে রাজি নন মরিয়ম। যতোক্ষণ শ্বাস আছে ততোক্ষণ আশা জিইয়ে রাখতে চান মনে। লড়াই চালিয়ে যেতে চান জীবনের সঙ্গে।

মরিয়ম বেগমের হার-না-মানা লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সুবাদে এরই মধ্যে স্কুল ছেড়ে বেশ সাফল্যের সঙ্গেই কলেজের বারান্দায় পা রেখেছে দু’ভাই। উচ্চশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছাতে চায় তারা। রীতিমতো পণ করেছে তারা সফল একদিন হবেই হবে। মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার লোহাগাড়া (আটাপাড়া) গ্রামে সামান্য জায়গার ওপর ঘর তুলে বসবাস করছে এই পরিবারটি। বসতভিটার সামান্য জায়গা ছাড়া আর কোনো জমিজমা নেই তাদের।  

মাহমুদুল হাসান সাবিন। ভাই-বোনদের মধ্যে বড়। শিশুকালে পোলিও রোগের শিকার হয় সে। সেই থেকে র ডান পা বিকল। চিকিৎসা করেও স্বাভাবিক হয়নি সেই পা। কিন্তু লেখাপড়া ছাড়েনি সে। বর্তমানে সে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।

মেজ ছেলে মোস্তফা কামাল সাদ্দাম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ২০১০ সাল থেকে তার দু’চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে। চিকিৎসা করেও দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক করা যায়নি আর। এছাড়া সে স্পষ্টভাবে কথাও বলতে পারে না। একইসঙ্গে সে দৃষ্টি ও বাকপ্রতিবন্ধী। বিপদের ওপর বিপদ বুঝিবা একেই বলে! এরপরও লেখাপড়া অব্যাহত রেখেছে সে। বগুড়ার সরকারী শাহ সুলতান কলেজের স্নাতকের ছাত্র সে।

ছোট ছেলে মাজহারুল ইসলাম সেলিম(২০)। শিশুকালে লেখাপড়ার শুরুতেই তার ডান হাত ও ডান পা বিকল হয়ে যায়। কথাবার্তাও তেমন স্পষ্ট বলতে পারে না। হুইল চেয়ারে বসে অন্যের সহযোগিতা নিয়ে তাকে চলাফেরা করতে হয়। তারও চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করা সাধ্যের বাইরে তার।  

একমাত্র মেয়ে সাবরিনা সুলতানা শরীরিকভাবে সুস্থ রয়েছে এখনো। সে-ও তার ভাইদের মতো লেখাপড়া করছে।

এরই মধ্যে তাদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছায়েদ আলী ২০১৫ সালে শ্বাসকষ্ট ও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মারা যান তিনি। ফলে পিতৃহীন হয়ে পড়ে এই চার অসহায় ভাইবোন। বিধবা হবার পর  মরিয়ম বেগমের পায়ের তলার মাটি সরে যায়। স্বামীহীন, সহায় সম্বলহীন মরিয়ম সেই থেকে একাকী টেনে চলেছেন জীবনের দুর্বহ ঘানি।

মরিয়ম ছায়েদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘শত বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে আমার পিতৃহীন ছেলে-মেয়েরা। বর্তমানে মৃত স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা-ভাতা ও ছোট ছেলের প্রতিবন্ধী-ভাতার টাকায় কোনোমতে খুঁড়িয়ে চলছে অভাবের সংসার। বাড়ির সামান্য জায়গা ছাড়া কোনো জমিজমাও নেই।

এ অবস্থায় সন্তানদের লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসার চালানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে তার জন্য। এছাড়া অসুস্থ ছেলের চিকিৎসার খরচও চালাতে হচ্ছে। যার সাধ্য মরিয়ম বেগমের একেবারেই নেই। সব মিলে দিশেহারা মরিয়ম বেগম। তাই সরকারের কাছে অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা ও অন্য সন্তানদের মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় চাকরির প্রত্যাশা করেন হতভাগী এই মা। বাংলাদেশ সময়:১৫৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৭
এমবিএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।