ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

নাম তার তালমন! 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৭
নাম তার তালমন!  হবিগঞ্জের রসালো তালমোহন রসনাবিলাসী মানুষের প্রিয় পিঠা

হবিগঞ্জ: তালমন। কারো কারো মতে তালমোহন। নাম যাই হোক বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠাগুলোর একটি এটি।অতীতকাল থেকেই বাংলার রসনাবিলাসীদের তৃপ্ত করে আসছে রসালো এই পিঠা। 

হবিগঞ্জে তালমন একটি জনপ্রিয় পিঠা। জেলা শহরের তুলনায় বাহুবল ও চুনারুঘাট উপজেলা সদরের বাজারগুলোতেই তালমোহন বেশি দেখা যায়।

 

পাকা তাল থেকে রস বের করে ময়দাসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে গোল করে পিঠাগুলো ভেজে নেন কারিগরেরা। তারপর সেগুলো চিনির সিরায় ডুবিয়ে রাখা হয়। পরে কমলা রংয়ের রসালো তালমন যখন কাচের শো-কেসে সাজিয়ে রাখা হয়, তখন রসনাবিলাসীরা আকৃষ্ট না হয়ে পারেন না।  

হোটেল-রেস্টুরেন্ট ছাড়াও সারা বছর বিভিন্ন লোকজ মেলায়ও তালমনের পসরা বসে। হবিগঞ্জ শহরের কালিবাড়িতে প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিতে মেলা বসে। ওই মেলায় এক বা একাধিক তালমনের স্টল থাকেই। শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে পইল গ্রাম। ওখানেও প্রতি বছর বসে বিশাল ’মাছের মেলা’। মেলা মাছের হলেও খাবারের স্টল তো থাকেই। পইলের মেলাতেও তালমনের অনেকগুলো দোকান বসতে দেখা যায়। আর গরম গরম তালমনের লোভে সেসব দোকানে ভিড় জমাতে দেখা যায় লোকজনকে।  
  
হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার এলাকায় ’জননী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’-এ প্রায় নিয়মিতভাবেই তালমন বানানো হয়। হবিগঞ্জ শহরে তো বটেই, উপজেলা সদরসহ জেলার বিভিন্ন হাটবাজারের রেস্টুরেন্টগুলোতে তালমনের পসরা চোখে পড়ে। শুধু হোটেল-রেস্টুরেন্ট নয়, গ্রামে-গঞ্জে গৃহিনীরা অনেকেই তালমন তৈরিতে অভ্যস্ত। তারা পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রায়ই এ পিঠা তৈরি করেন।

জননী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সত্ত্বাধিকারী অমিত নারায়ণ মোদক জানান, তালমোহন সারা বছরই চলে। তবে শীত মৌসুমে এর বিক্রি বেড়ে যায়। তখন প্রতিদিন গড়ে ২০ কেজির মতো তালমন বিক্রি হয়। প্রতি কেজি তালমন তৈরিতে খরচ পড়ে প্রায় ৫০ টাকা। বিক্রি হয় ৭০-৮০ টাকা কেজি।

তার দোকানে তালমন কিনতে আসা হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রামপুর গ্রামের সুফিয়া বেগম জানান, তার ছেলেমেয়েরা তালমন খুব পছন্দ করে। তাই তিনি নিয়মিত হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে তালমন কিনে নিয়ে যান।
সুস্বাদু এ পিঠা তৈরির কৌশল বলেছেন অমিত নারায়ণ মোদক।  
তালমন! তিনি বলেন, ভাদ্রমাসে প্রচুর তাল পাওয়া যায়। চারটি পাকা তাল থেকে বেতের চালুনি দিয়ে প্রথমে রস সংগ্রহ করা হয়। রস কিছুক্ষণ কাপড়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখলে পানি ঝড়ে পড়ে। রাতে এ তালের রসের সঙ্গে মেশানো হয় তিন কেজি ময়দা, এক কেজি চালের গুড়া ও এক কেজি পানি। সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে রাখা হয় সারারাত। সকালে ওই মিশ্রন গোলাকার করে গরম তেলে ভাজার পর চিনির সিরায় ভেজালেই তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু তালমন।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।