ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাউলতত্ত্বের তৃষ্ণা জনমনে জাগছে এবং জাগবে

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
বাউলতত্ত্বের তৃষ্ণা জনমনে জাগছে এবং জাগবে আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ। ছবি: বাংলানিউজ

ছেউড়িয়া (কুষ্টিয়া) খেকে: ১২০ বছর আগে প্রমত্তা পদ্মা নদীর বুকে যে চর জেগেছিলো, সেখানে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ওখানকার বাউলদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের বাউলতত্ত্বের মূল কথা কি? প্রাজ্ঞ ও পৌড় এক বাউল তখন বললেন, মানুষ ভজন আমাদের তত্ত্বের মূল কথা।

রবীন্দ্রনাথ আবার প্রশ্ন করলেন, তোমাদের তত্ত্ব জানার জন্য মানুষ কি তোমাদের কাছে আসে? বাউল উত্তর দিলেন, যার তৃষ্ণা জাগবে, সেই তো নদীর কাছে আসবে, চরের কাছে আসবে। রবীন্দ্রনাথ এবার জানতে চাইলেন, মানুষের মনে কি সেই তৃষ্ণা জাগছে? বাউল হেসে উত্তর দিলেন, জাগছে এবং জাগবে।

১২০ বছর আগে রবীন্দ্রনাথ যে উত্তর পেয়েছেন, তার সত্যতা আজ পরিলক্ষিত করা যায়। ’ এমনটাই বলছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট লালন গবেষক ড. আবুল আহসান চৌধুরী।

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) রাতে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় বাউল সম্রাট লালন শাহের ১২৭তম তিরোধান দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানের ২য় দিনে প্রধান আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, লালন লেখাপড়া জানতেন না, কিন্তু পড়েছেন জীবনের বিশ্ববিদ্যালয়ে। লালনের গানে যে ভাব, ভাষা, গাম্ভীর্য তা তার ফকির বাঙালির দার্শনিক হৃদয়ের দর্শন।

লালন সামাজিক বর্ণ বিন্যাসের গোড়া কেটে দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন- ‘দেব দেবতাগন করে আরাধন/জন্ম নিতে এই মানবে’। এমন মানব গভীর মানবসাধক বাংলায় আর জন্মগ্রহণ করেনি। তার বাণী, দর্শন ও সাধনায় গভীর ভাবের মূল্যায়ন রয়েছে যা তার গানে প্রভাবিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন: লালন মানবতার প্রতীক
জ্ঞানতাপসীদের সঙ্গে লালনের সম্পর্ক নিয়ে প্রধান আলোচক বলেন, বঙ্কিম চন্দ্র চট্টপাধ্যায় বাংলার উপন্যাস সাহিত্যে অসাধারণ শিল্প উপন্যাস নির্মাতা। তিনি এক সময় খুলনা অঞ্চলে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখেনে তিনিও লালনের গান শুনে তা থেকে জ্ঞানলাভ করেছিলেন। বঙ্কিম চন্দ্রের গানে এর ভাব পাওয়া যায়। এছাড়া বিদ্যাসাগরও মনের শান্তি পেয়েছিলেন লালনের ভাবে। আর ঠাকুর পরিবার লালনের গান শুনেছেন, সমাদর জানিয়ে সম্মান করেছেন। লালন ফকির মরমী, পাশাপাশি যোগী।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালন আবিষ্কারে প্রধান ভূমিকা পালন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অমীয়বাণী গানের সঙ্গে পরিচয় হয়ে জন্ম হলো নতুন রবীন্দ্রনাথের। তার ‘দুই পাখি’ কবিতার খাচার পাখি হলো রবীর শহুরে জীবন ও বনের পাখি শিলাইদহের জীবন। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ নিজেই নিজেকে রবীন্দ্রবাউল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

বর্তমান গবেষণার উল্লেখ দেখিয়ে আবুল আহসান বলেন, ঊনিশ শতকে বাংলার গণজাগরণের নায়ক শুধু একা রাজা রাম মোহন রায় নয়, সেখানে আরো একটি নামও রয়েছে। তিনি লালন ফকির। শহুরে জনগণকে জ্ঞান দিয়ে জাগিয়েছেন রামমোহন আর গ্রামে জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন লালন শাহ।

ইউনেস্কো বাংলার বাউল গানকে বিশ্ব ঐহিত্য হিসেবে উল্লেখ করছেন। আর এ গান শুধু লালনের গান। তা নির্বিশেষে বাউল গান নয় বলেও উল্লেখ করেন এ আলোচক। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা সংস্কৃতি ও সাম্প্রদায়িকতার যে যুদ্ধে লিপ্ত, তাতে লালনকে আমাদের পাথেয় হিসেবে নেওয়া উচিত। তার দীক্ষা আমাদের পথ দেখাবে।  

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, মনের মানুষ সম্পর্কে জানার আগ্রহ অনেক আগে থেকেই। সেই তৃষ্ণা আরো বেড়ে গেলো এ আয়োজনে এসে।  

প্রধান অতিথি বলেন, লালন বর্তমানে পৃথিবীতে একটা গবেষণার অংশ হয়ে গেছে। তিনি ধর্ম, বর্ণের সর্বোচ্চ আসনে উঠে মানবতার কথা বলেছেন। সেই মানবতার মতোই আমরা বর্তমানে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করছি। বাঙালির মতো এমন মানবতা আর কে দেখাতে পারে!

লালনের তীর্থ ভূমিতে পা রাখার অনুভূতি ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেন, লালন ভক্তদের কাছে এসে জেনে গেলাম, লালনকে কুষ্টিয়াবাসী কিভাবে হৃদয়ে পুষে রেখেছেন! কিভাবে তাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করেন। এ অভিব্যক্তি অনন্য।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ, কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম মেহেদী হাসান সহ বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ত্ব করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মো. জহির রায়হান।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
এইচএমএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।