ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

উত্তরা গণভবনের শতবর্ষী জীবিত গাছ কেটে সাবাড়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
উত্তরা গণভবনের শতবর্ষী জীবিত গাছ কেটে সাবাড় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নাটোর: মরা গাছের নামে নাটোরের উত্তরা গণভবনের শতবর্ষী জীবিত গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে।

এসব তাজা গাছ কেটে নেয়ার দৃশ্য গণভবনের নিরাপত্তায় স্থাপিত ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর বিভিন্ন দপ্তরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মনিরুজ্জামান ভুঞাকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল আলম, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীম ভূঁইয়া ও এনডিসি অনিন্দ্য মণ্ডল।

কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এর আগে সকালে জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন ও রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম জিল্লুর রহমানসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গণভবন পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পান।

পরে দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের উপস্থিতিতে গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হয়। এসময় তাজা গাছ কাটা এবং কম দামে নিলামে বিক্রি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

জেলা কালেক্টরেট অফিস সূত্রে জানা গেছে, উত্তরা গণভবনের চারপাশের লেকের ধারে শত বছরের অন্তত ৩০০ আম গাছ রয়েছে। এছাড়া মেহগনি, নারিকেল, কাঠ বাদামসহ আরো পাঁচ শতাধিক গাছ রয়েছে এখানে। সম্প্রতি ঝড়ে পড়া এবং মরে যাওয়া দু’টি আম, একটি মেহগনিসহ বেশ কিছু গাছের ডালপালার ইজারা আহ্বান করে স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগ।

বনবিভাগের কর্মকর্তা আবু আব্দুল্লাহর দেয়া মূল্য তালিকা অনুযায়ী, মাত্র ১৮ হাজার ৪০০ টাকার টেন্ডারের বিপরীতে অন্তত ১০ লাখ টাকার ১২ থেকে ১৬টি তাজা গাছ কেটে গণপূর্ত বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় সরিয়ে ফেলেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সোহেল ফয়সাল।  

বন কর্মকর্তা আবু আব্দুল্লাহ জানান, তিনি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে মরা, পচা ও ঝড়ে পড়া গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন মাত্র।

গণভবনের কর্মচারী সুজন পাল জানান, গণপূর্ত বিভাগ শুধু ভবনগুলোর দায়িত্বে থাকলেও তারা অন্যায়ভাবে গাছগুলো লিজ দিয়েছে। নিলামে কেনা ঠিকাদার শতবর্ষী অন্তত ১৫টি তাজা গাছ কেটে নিয়ে গেছেন।

গণভবনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য সোহেল হোসেন জানান, তিনি গাছের গুঁড়ি বাইরে নিয়ে যেতে বাঁধা দিয়েছিলেন। ওই সময় গণপূর্ত বিভাগের কর্মচারীরা নিলামের কাগজ দেখিয়ে তা ছাড়িয়ে নিয়ে যান।

ঠিকাদার সোহেল ফয়সাল জানান, তিনি কোনো অনিয়ম বা গোপনে কাঠ সরিয়ে ফেলেননি। নিয়ম অনুযায়ী গাছ কেটেছেন। গাছ কাটা ও পরিবহনের সময় জেলা প্রশাসন ও গণপূর্ত বিভাগের নিয়োগকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সার্বক্ষণিক উপস্থিত ছিলেন। গোপেনে সরিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেই।  

রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, নিলাম ডাকের চেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে। বিষয়টি বিভাগীয় তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, এখন যেসব কাটা গুঁড়ি পড়ে আছে তার আনুমানিক দাম দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। তিনি কমিটির সদস্য হলেও নিলামের বিষয়টি তাকে জানানো হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ