ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কুয়েতে নিহত ৫ জনের গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
কুয়েতে নিহত ৫ জনের গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম কুয়েতে বিস্ফোরণে নিহত মা রোকেয়া ও তার ৪ সন্তানের পুরনো ছবি; ছবি: বাংলানিউজ

কমলগঞ্জ: কুয়েতের সালমিয়াত এলাকায় আবাসিক ভবনের এয়ার কন্ডিশনার বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে তাদের গ্রামের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। এরা সবাই মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা।

এরা হলেন কমলগঞ্জের কান্দিগাঁও গ্রামের মৃত তজমুল আলীর পুত্র জুনেদ আহমদের স্ত্রী রোকেয়া বেগম, তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। রোকেয়া বেগম মৌলভীবাজারের গুজারাই গ্রামের আব্দুল জব্বারের কন্যা।

মঙ্গলবার সকালে জুনেদের গ্রামের বাড়ি কমলগঞ্জের কান্দিগাঁও ও রোকেয়া বেগমের বাপের বাড়ি মৌলভীবাজারের গুজারাই গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম।

ছেলের বউ ও নাতি-নাতনীর একসঙ্গে এমন মর্মান্তিক অকাল মৃত্যুতে জুনেদের বৃদ্ধা মা মরিয়ম বেগম (৭০), জুনেদের বড় বোন মুসলিমা বেগম (৪৮) বড়মামা খিজির আহমদ খাঁন, পাশের বাড়ির আব্দুল আজিজ ও আত্মীয়-স্বজনসহ পুরো গ্রামের মানুষ শোক-বিহ্বল। কেউ কাঁদছেন, কেউবা আবার অধিক শোকে পাথর বনে গেছেন। শোকাহত পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে যান জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার শত শত মানুষ।

জুনেদ আহমদের শ্বশুরবাড়ি মৌলভীবাজারের গুজারাই গ্রামেও আহাজারি আর হাহাকারের অভিন্ন চিত্র। পরিবারটির আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসীদের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।

উল্লেখ্য, সোমবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টায় কুয়েত শহরের সালমিয়াত এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। গৃহকর্তা জুনেদ আহমদ বাসার বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

জুনেদ আহমেদের মামা খিজির আহমদ বাংলানিউজকে জানান, তার ভাগ্নে জুনেদ আহমদ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে কুয়েতে বসবাস করছেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জুনেদ সপরিবারে দেশে এসে চলতি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে কুয়েত ফিরে যান। এবছর ডিসেম্বর মাসে আবার তাদের দেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু সেটা আর হলো না। মৃত্যু এসে কেড়ে নিয়ে গেল তরতাজা ৫টি প্রাণ।

তিনি জানান, সোমবার বিকালে জুনেদ আহমদ বাসার বাইরে ছিলেন। আকস্মিকভাবে ভবনের ৫ তলার একটি বাসায় এসির কম্প্রেসার বিস্ফোরিত হয়। তাতে আগুন লেগে তা পুরো ভবনে দ্রুত ছড়িয়ে যায়। এসময় আতঙ্কিত হয়ে নামতে গিয়ে তিন তলার বাসিন্দা জুনেদ আহমদের স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৩৫), মেয়ে জামিলা আহমদ (১৫), ছেলে ইমাদ আহমদ (১২), মেয়ে নাবিলা আহমদ (৯) ও ছেলে ফাহাদ আহমদ (৫) ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ভবনের ভিতরেই মারা যান।

খবর পেয়ে জুনেদ আহমদ ভবনে ফিরে একসঙ্গে স্ত্রী-সন্তানদের মরদেহ দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি বাসায় ফিরেছেন। নিহত ৫ জনের মরদেহ কুয়েতের মোবারক আল কাবির হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

কমলগঞ্জের কান্দিগাঁও গ্রামে একমাত্র বৃদ্ধা মা মরিয়ম বেগম (৭০) ছাড়া জুনেদ আহমদের পরিবারে আর কেউ নেই। ঘটনার খবর পেয়ে সোমবার রাতেই জুনেদের বড় বোন মুসলিমা বেগম (৪৮) স্বামীর বাড়ি থেকে এসে মায়ের পাশে অবস্থান করছেন।

জুনেদের স্ত্রী রোকেয়ার বড় ভাই গুজারাই গ্রামের জাকারিয়া আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, ২০০০ সালে জুনেদের সাথে তার ছোট বোন রোকেয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের ৬ মাস পর তার বোনকে নিয়ে জুনেদ কুয়েতে চলে যান। তার ভাগ্নে-ভাগ্নি সবারই জন্ম হয়েছে কুয়েতে। কুয়েত থেকে লাশ দেশে আনার চেষ্টা চলছে। হয়তো কয়েক দিনের মধ্য দেশে লাশ আনা হতে পারে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আর তাদের জীবিত দেখার সুযোগ হলো না।

এদিকে কান্দিগাঁও গ্রামে শোকে কাতর জুনেদের বৃদ্ধা মা মরিয়ম বেগম বুক চাপড়ে সারাক্ষণ আহাজারি করে চলেছেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার নাতি-নাতনীরা আজকাল প্রায়ই ফোন করে দেশে আসার কথা বলতো। তাদের আর দেশে আসা হলোনা! হায়, এই শোক আমি কেমন করে সইবো!

আর কথা বলতে পারলেন না মরিয়ম। এটুকু কথা বলেই বাকরুদ্ধ হয়ে যান তিনি।

ভাতিজা খালেদ মাসুদ (২০) বাংলানিউজকে জানান, দুর্ঘটনার ৩০ মিনিট আগেও তিনি ফোন করে বাড়ি ঘরের খোঁজ খবর নেন। জুনেদ মিয়ার অপর দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই জুবের মিয়া সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য ভাই সুয়েব সপরিবারে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাস করছেন।

সকালে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমানসহ জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনেরা ছুটে এসে পরিবারটিকে সমবেদনা জানান।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে মা ও ৪ সন্তানের মর্মান্তিক এই মৃত্যু সবাইকে শোকার্ত  করেছে। সমবেদনা জানাতে এসে তিনি নিজেও বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।
তিনি জানান, মরদেহগুলো দেশে আনার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়:১৯২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
এম এ এইচ/ জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।