ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সাইমের ভাঙা মোবাইলের ফরেনসিক করবে পুলিশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
সাইমের ভাঙা মোবাইলের ফরেনসিক করবে পুলিশ সাইমের হাতে আাঁকা নীল তিমি। ছবি: প্রশান্ত মিত্র

ঢাকা: বাবার দ্বিতীয় বিয়ের পর দাদা-দাদীর সঙ্গেই থাকতো কিশোর সাইম দেওয়ান (১৫)। ৬ষ্ঠ শ্রেণীর পর আর লেখাপড়া করেনি সে। মাঝে-মধ্যে নিজেদের বইয়ের দোকানে সময় দিলেও অধিকাংশ সময় বাসাতেই থাকতো সাইম।

সোমবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর পশ্চিম কাজীপাড়ায় তাদের ভাড়া বাসা থেকে সাইমের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন মরদেহের বাম হাতে 'তিমি মাছ' আঁকার বিষয়টি নজরে আসে।

তিমি মাছের ট্যাটু দেখে পরিবারের লোকজন ধারণা করছেন, 'ব্লু হোয়েল' গেমের ফাঁদেই সাইম আত্মহত্যা করেছে। পুলিশও প্রাথমিক ধারণায় ব্লু হোয়েলের কথা জানালেও নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি।

মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সাইম ল্যাপটপ ব্যবহার করতো না। আত্মহত্যার আগে সে তার নিজের ব্যবহৃত মোবাইলটি ভেঙে ফেলে। মৃত্যুর আলামত হিসেবে ভাঙা মোবাইলটি সংগ্রহ করা হয়েছে। সে আসলেই 'ব্লু হোয়েলে' আসক্ত ছিল কি না তা নিশ্চিত হতে তার ভাঙা মোবাইলটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সকালে ঘটনাস্থল পশ্চিম কাজীপাড়ায় ৭৬০ নং বাসায় গিয়ে, তাদের ঘরে কাউকে পাওয়া যায়নি। টিনসেড ভবনের একটি রুমে দাদা-দাদীর সঙ্গে বসবাস করতো সাইম।

পাশের রুমের বাসিন্দা গৃহিনী মুন্নি বাংলানিউজকে জানান, চলতি অক্টোবর মাসের ১ তারিখে তারা ভাড়ায় উঠেছে। তাদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ ছিল না, তবে ছেলেটাকে আসতে যেতে দেখতেন তিনি। সাইমের বাবা মা ওই এলাকাতেই অন্য বাসায় থাকতেন।

তিনি আরো জানান, সাইমের দাদার এখানেই কোথাও দোকান আছে শুনেছি, সেই দোকানেই নাকি সাইম বসতো। তার দাদীও কোথায় কি কাজ করতো, তাই সারাদিন বাসায় কেউ থাকতো না। সাইম একাই বেশিরভাগ সময় বাসায় থাকতো, মাঝে-মধ্যে তার সঙ্গে কয়েকজন ছেলেও আসতো। তবে, তার দাদা-দাদীর সঙ্গে কখনো ঝগড়ার বিষয় তিনি শোনেননি।

ঘটনার দিনের বর্ণনায় তিনি বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় সাইমের দাদীর বোনের মেয়ে তাদের বাসায় আসে। এসে দরজায় নক করলে ভেতর থেকে কেউ সাড়া না দিলে সে আমাদের জানায়। আমরা তাকে দরজা জোরে ধাক্কা দিতে বলি। তখন ওই নারী দরজা ধাক্কা দিলে দরজা খুলে যায়। কারণ দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিল না। তারপর ফাঁসি দেওয়া অবস্থায় সাইমকে দেখে চিৎকার শুরু করে, তখন তার দাদা-দাদী, বাবা-মা আসে। এরপর পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।

সাইমের বাবা বাবু দেওয়ান জানান, গত দুই-তিনদিন ধরে সাইমের অনেক পরিবর্তন দেখা দিয়েছিলো। সে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতো না, অন্যদের সঙ্গে কথা বলতো না।

সাইম সব সময় ফুলহাতা শার্ট পরতো বলে তার হাতে আঁকা তিমি মাছটি আগে কেউ দেখতে পাননি বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে সাইমের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, এর আগে অনেক মানুষের ময়নাতদন্ত করেছি, তাদের হাতে ট্যাটু বা বিভিন্ন ধরনের লেখা পেয়েছি। কিন্তু এই প্রথম সাইমের বাম হাতে একটি তিমি মাছ আঁকা দেখলাম। এটা দেখে মনে হলো, সুঁচালো কিছু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তিমিটি আঁকা হয়েছে।

মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান জানান, মৃত সাইমের বাম হাতে একটি তিমি আঁকা পাওয়া যায়। ব্লু হোয়েল গেমসের কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্ত শেষ হলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
পিএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।