ঢাকা, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিষে শেষ হালতিবিলের মাছ, প্রাণী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
বিষে শেষ হালতিবিলের মাছ, প্রাণী মরে ভেসে উঠেছে হালতিবিলের মাছ। ছবি: বাংলানিউজ

নাটোর: উত্তরাঞ্চলের অন্যতম সমৃদ্ধ মৎস্য ভান্ডার হিসাবে পরিচিত নাটোরের হালতিবিল। দেশি মাছের বিপুল সম্ভার থাকায় বিশাল এই জলাভূমিকে মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু বিলটিতে অবৈধ বাদাই জালের সাথে ক্ষতিকারক পাউডার ও বিষাক্ত গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে অব্যাহত ভাবে মাছ শিকার করা হচ্ছে।

এতে ডিমসহ মাছ যেমন বিনষ্ট হচ্ছে, তেমনি মরছে শামুক, কাঁকড়া, সাপ, পোকামাকড়সহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। ফলে নষ্ট হচ্ছে হালতিবিলের জীব ও জীববৈচিত্র্য।

বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ-প্রতিবেশ, দুষিত হচ্ছে পানি। ক্ষতিকর পন্থায় শিকার করা মাছের বিষক্রিয়ায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে জনস্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করছে।
 
অবাধে টনকে টন মা মাছ ও মাছের পোনাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মৎস্য অভয়াশ্রম ও বিল নার্সারি প্রকল্প। এতে মাছ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
 
মরে ভেসে উঠেছে হালতিবিলের শামুক।  ছবি: বাংলানিউজস্থানীয়দের অভিযোগ, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে মৎস্যজীবীদের দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ক্ষতিকর পন্থায় অবাধেই মাছ শিকার করে যাচ্ছেন। এতে উস্কানি দিচ্ছেন কতিপয় নেতা, জনপ্রতিনিধি।
 
হালতি বিলের জীব ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি শিশির চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, হালতিবিল মাছের নিরাপদ প্রজনন ক্ষেত্র। মৎস্য বিভাগ বিভিন্ন সময়ে রুই জাতীয়সহ দেশি মাছের পোনা অবমুক্ত করে। এতে নিরাপদে বেড়ে ওঠে দেশি মাছ। আর মাছের উপর নির্ভরশীল জেলেরাও জীবিকা নির্বাহ করেন। অথচ মাছের এই অভয়াশ্রমে ভর করেছে বিষপ্রয়োগ আতঙ্ক। মৎস্য বিভাগ মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কোন উদ্যোগ নেই।
 
হালতি বিলের নৌকা চালক মোমিন আলী জানান, বাদাই পার্টি ট্যাবলেট ও পাউডার ছিটিয়ে মাছ মারার কারণে মাছ,শামুক,কাঁকড়া মরে ভেসে উঠছে। এসব পচে চারিদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আগে কখনও এমন দেখা যায়নি।

হালতিবিলে মাছ শিকার।  ছবি: বাংলানিউজপাটুল হাপানিয়া হাই স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক এমএ ওয়ায়েস আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, এই সময় পোনা মাছ মারা নিষিদ্ধ থাকলেও অবাধে মারা হচ্ছে। আর ট্যাবলেট ও পাউডার ছিটিয়ে মাছ মারায় হালতি বিল মাছ ও জলজ প্রাণি শূন্য হয়ে পড়ছে।
 
পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিন বলেন, যারা মাছ ধরছে, তাদের নিজস্ব কোন বাদাই জাল নেই, তারা মৎস্যজীবীও না। প্রতিটি জালই প্রভাবশালী, আড়তদারদের। এভাবে মাছ মারার কারণে দুর্গন্ধযুক্ত এসব মাছ হাটে বাজারে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
 
নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গ্যাস ট্যাবলেট সাধারণত ফসলি জমির গর্তে ও গুদামজাত ফসলে পোকা মাকড় ও ইঁদুর নিধনে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা পানিতে ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত নয়। এটা দিলে পানিতে থাকা সকল পোকা মাকড়, অনুজীবসহ সকল প্রাণী মারা যাবে। পানি দুষিত হবে, পরিবেশের বির্পযয় ঘটবে।
 
মাছ ধরতে ব্যবহৃত হচ্ছে এই গ্যাস ট্যাবলেট।  ছবি: বাংলানিউজ নলডাঙ্গা উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ ইব্রাহিম হামিদ শাহিন বাংলানিউজকে বলেন, হালতিবিলে একটি অভয়াশ্রমসহ তিনটি বিল নার্সারি রয়েছে। বিলে পানি আসার শুরুতেই এসব বিল নার্সারির মাধ্যমে প্রায় তিন লাখ রুই জাতীয় পোনা মাছ ছাড়া হয়েছে।

সম্প্রতি রাজস্ব খাত থেকে এক মেট্রিক টন রুই জাতীয় পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে। এতে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হবে।
 
এছাড়া এই বিলে প্রাকৃতিকভাবে দেশি প্রজাতির প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বড় হওয়ার আগেই এসব মাছ মারা হলে সার্বিকভাবে মাছ উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
 
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) জেসমিন আক্তার বানু বাংলানিউজকে বলেন, হালতিবিলে অবৈধ জালে মাছ শিকার বন্ধে  আবারও মৎস্য বিভাগ ও পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।