ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে রাওদার মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যাই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে রাওদার মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যাই রাওধা (ফাইল ছবি)

রাজশাহী: ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদকন্যা উঠতি মডেল রাওদা আতিফ রাজশাহীতে আত্মহত্যাই করেছিলেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন কথাই বলা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে (১) এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। আদালত প্রতিবেদনটি আমলে নিলেও কোনো আদেশ দেননি।

এর আগে দু’দফার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয় মালদ্বীপের এই মডেল আত্মহত্যা করেছেন।

রাজশাহী কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক আবুল হাশেম বাংলানিউজকে বলেন, রাওদা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক আসমাউল হক সোমবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তাদের কাছে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। মঙ্গলবার দুপুরে তারা রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে (১) ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

হাশেম জানান, মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। রাওদাকে হত্যা করা হয়েছিল, এমনটিও বলা হয়নি। তাই বাদীপক্ষের আইনজীবী এই প্রতিবেদনে নারাজি দিতে চান। এজন্য তিনি বিচারক মাহবুবুর রহমানের কাছে সময় প্রার্থনা করেছেন। তবে এ বিষয়ে আদালত এখনও কোনো আদেশ দেননি। দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক আসমাউল হক বাংলানিউজকে বলেন, দুই দফার ময়নাতদন্ত, ভিসেরা ও মুঠোফোন পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, রাওদা আত্মহত্যাই করেছিলেন। এরপরই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত শেষে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রতিবেদন দাখিলের আগে রাওধার বাবাকেও বিষয়টি জানানো হয়।

আসমাউল জানান, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে রাওদা আত্মহত্যা করেন। মালদ্বীপের শাহী গণি নামে এক যুবকের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই যুবক পড়াশোনার জন্য লন্ডনে থাকেন। রাওদার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে জানা গেছে, শাহীর সঙ্গে রাওদার সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল। এ নিয়ে মানসিক চাপে ছিলেন রাওদা। আত্মহত্যার আগের রাতেও শাহীর সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও তদন্তের পর অন্য রিপোর্ট মিলিয়ে তাই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

গত ২৯ মার্চ রাজশাহীর শাহ মখদুম থানার নওদাপাড়ায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রীনিবাস থেকে রাওদা আতিফের (২২) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।  

তিনি ওই কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মালদ্বীপের নীলনয়না মেয়ে রাওদা বাংলাদেশে এসেছিলেন পড়তে। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি মডেলিং করতেন।

রাওদার মৃত্যুর দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ শাহ মখদুম থানায় অপমৃত্যুর মামলা করে। রাওদার মরদেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজশাহী মহানগরীর হেতমখাঁ গোরস্থানে দাফন করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাওদা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।  

এরপর মালদ্বীপরে দুই পুলিশ কর্মকর্তা রাজশাহীতে গিয়ে তদন্ত করেন। এছাড়া রাওদার মৃত্যুর ঘটনায় কলেজের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিও তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রাওদা আত্মহত্যা করেছেন। তবে রাওদার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ এসব প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে গত ১০ এপ্রিল রাজশাহীর আদালতে হত্যা মামলা করেন।

এ মামলায় রাওদার সহপাঠী ভারতের কাশ্মিরের মেয়ে সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়। কিন্তু সিরাতকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। গত ১৪ এপ্রিল হত্যা মামলাটি উচ্চতর তদন্তের জন্য শাহ মখদুম থানা থেকে সিআইডিতে স্থানান্তর হয়। এরপর কবর থেকে মরদেহ তুলে দ্বিতীয়বারের মতো রাওদার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। সে প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, হত্যা নয়, রাওদা আত্মহত্যা করেছেন।

তবে মোহাম্মদ আতিফ এখনও দাবি করছেন, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। মামলার পর থেকে তিনি রাজশাহীতেই অবস্থান করছেন। রাওদাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান টেলিভিশন চ্যানেল ‘নাইনের’ একটি দল রাজশাহীতে গিয়ে সম্প্রতি একটি প্রমান্যচিত্রও নির্মাণ করে।

বাংলাদেশ সময়:  ১৫৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
এসএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।