ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বজ্রপাতের সতর্কতায় বসছে সেন্সর

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৭
বজ্রপাতের সতর্কতায় বসছে সেন্সর

ঢাকা: ভূমিকম্পের মতো বজ্রপাতের কোনো পূর্বাভাস নেই। তবে উন্নত দেশে আকাশে মেঘের আনাগোনা থেকে বজ্রঝড়ের আভাস পাওয়া যায়। বাংলাদেশেও ঘনকালো মেঘ থেকে জানা যায় বজ্রঝড়ের আভাস। কিন্তু বজ্রঝড় থেকে কখন বজ্রপাত হবে তা জানা যায় না। ফলে বর্ষাকালে বজ্রপাতে প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণহানি।

বজ্রপাত থেকে প্রাণ রক্ষায় এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের আভাস জানতে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। দেশের আটটি স্থানে সেন্সর বসিয়ে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তৈরি করা হবে বজ্রপাতের পূর্বাভাস।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আগাম সতর্কতার মাধ্যমে সতর্ক করে প্রাণ রক্ষা করাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

মানুষসহ প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক প্রাণিকূলের ক্ষতি হলেও বজ্রপাতের কারণে কী পরিমাণ ক্ষতি হয় তার পরিসংখ্যান ছিল না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গত তিন বছর থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি-২) মো. মোহসীন তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে ২১৯ জন এবং চলতি বছরে ২৪৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। তবে ২০১৬ সালের সংখ্যাটি ছিল উল্লেখযোগ্য। ওই বছরে ৩৮০ জনের প্রাণহানি ঘটে। সফটওয়ারের মাধ্যমে নামসহ নিহতদের তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে।

সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন-জুলাই মাসে বজ্রপাত হয়ে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত পাঁচ বছরে এই ট্রেন্ড বদলে গেছে। গত দুই তিন বছর ধরে জানুয়ারি মাসেও বজ্রপাত হচ্ছে। অতীতের চেয়ে বজ্রপাতের সংখ্যাও বেড়েছে। এতে বেড়েছে মৃত্যের সংখ্যা।

বজ্রপাতে ঘরের মধ্যেও বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বজ্রপাত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বজ্রপাতের পূর্বাভাস নাই। পূর্ব প্রস্তুতিটাই আসল। তবে কিছু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চলছে।

বজ্রপাত ও বজ্রঝড় সম্পর্কে মো. মোহসীন বলেন, আকাশে ঘনকালো মেঘ থাকলে ২৫-৩০ মিনিট বজ্রঝড় হয়ে থাকে। এসময় বিজলি চমকানো, মেঘের ডাকাডাকি পর বিদ্যুতের ঝলকানি কোনো মাধ্যমে মাটিতে এসে পড়ে। এটাকে বলে বজ্রপাত। আর সেই মাধ্যম মানুষ বা কোনো প্রাণি হলে প্রাণহানি ঘটে।

বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানতে দেশের আট জায়গায় ডিটেক্টর বসানো হবে জানিয়ে যুগ্মসচিব মোহসীন বলেন, এজন্য বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছে। ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করবে আবহাওয়া অধিদফতর।

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মজিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার আগারগাঁওয়ে অধিদফতর ছাড়াও ময়মনসিংহ, সিলেট, পঞ্চপড়ের তেতুলিয়া, নওগাঁর বদলগাছি, খুলনার কয়রা, পটুয়াখালী এবং চট্টগ্রামে সেন্সর বসানো হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেন্সরগুলো আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কানাডাসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে এই সেন্সর ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে বজ্রপাত মনিটর করার কোনো সিস্টেম ছিল না। মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় কোনো তথ্য-উপাত্তও নেই।
 
বজ্রঝড়ের কোন দিকে আঘাত করতে পারে, আগাম সকর্কতার মাধ্যমে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে সেন্সর বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেন্সরগুলোর ইনস্টলেশনের কাজ চলছে, এ বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে জানান আবহাওয়াবিদ মজিদুল ইসলাম।  

বজ্রপাত থেকে রক্ষায় বিল্ডিং কোডের মধ্যে অ্যারেস্টার বসানোর নির্দেশনা রাখা হয়েছে জানিয়ে যুগ্মসচিব মোহসীন বলেন বলেন, কিছু দিনের মধ্যে বিল্ডিং কোডের গেজেট প্রকাশ হয়ে যাবে। ভবন করতে হলে অ্যারেস্টার বসাতে হবে। এই অ্যারেস্টারের মাধ্যমে বজ্রপাত মাটিতে চলে যাবে। এতে প্রাণহানি কমে যাবে।

বাড়িঘরের লোকজন রক্ষা পেলেও বজ্রপাতে বাইরের লোকজন রক্ষা পাচ্ছে না জানিয়ে মো. মোহসীন বলেন, ভবিষতে বড় বড় মাঠ বা বিলের মধ্যে শেল্টার এবং তাতে অ্যারেস্টার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

বজ্রপাত থেকে রক্ষায় সারা দেশে ১০ লাখ তালগাছ লাগানো অব্যাহত রয়েছে বলে জানান যুগ্মসচিব।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।