ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বিনিদ্র শ্রমে দূর হবে দুর্ভোগ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
বিনিদ্র শ্রমে দূর হবে দুর্ভোগ! কাজ করছেন শ্রমিকরা, ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: রাত পৌনে ১টা। রাজধানীর মালিবাগ রেলক্রসিং থেকে সুপার মার্কেট ঘেঁষে সোজা খিলগাঁও’র দিকে চলে যাওয়া রাস্তায় বিটুমিন পোড়া গন্ধ, ধোঁয়া ও আলোর রশ্মি।
 

বাঁকানো শাবল দিয়ে ইটের খোয়া গোতানোর শব্দ। ব্যালচা দিয়ে ঘষে বিটুমিন মেশানো পাথরখণ্ড মসৃণ করার চেষ্টা।

পাশেই দাঁড় করে রাখা রোলার কোস্টার। ম্যানুয়াল কাজ শেষ হলে এই যন্ত্রদানব চালিয়ে আরো মজবুত ও মসৃণ করা হবে সড়ক।
 
মধ্য রাতের এই কর্মযজ্ঞে শরিক হওয়া মানুষগুলোর বিনিদ্র শ্রমে অচিরেই দূর হবে মৌচাক-মালিবাগ-মগবাজার-শান্তিনগর রুটে যাতায়াত করা লাখো মানুষের দুর্ভোগ। বহুল প্রতীক্ষিত মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের মালিবাগ-শান্তিনগর অংশ খুলে দেওয়া হবে খুব শিগগিরই। কাজ করছেন শ্রমিকরা, ছবি: শাকিল আহমেদ
কিন্তু দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষগুলো হয়তো জানতেই পারবেন না, কত আমিনুল, কত জমিলা, কত মিজানুর আর কত আজিজুরের বিনিদ্র শ্রমে ও ঘামে তৈরি হলো নগর সভ্যতার সর্বশেষ সংযোজন এই ফ্লাইওভার; মেরামত হলো দুর্ভোগের সড়ক।
 
মালিবাগ চৌধুরীপাড়া থেকে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের মেরামত কাজ আগেই শেষ হয়েছে। রোববার (১৫ অক্টোবর) ফ্লাইওভারের এ অংশ উদ্বোধনের কথা ছিল। অনিবার্য কারণে সেটি হয়নি।
 
এই সুযোগে হয়তো কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই ফ্লাইওভারের আশ-পাশ ও সংযোগ সড়কের খানা-খন্দ মেরামত করে দৃষ্টিনন্দন করতে হবে। কারণ, বহুল প্রতীক্ষিত এই ফ্লাইওভার খুলে দিতে আসবেন সয়ং সরকার প্রধান।
 
তাই দিনের ব্যস্ত সড়কে যান চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি না করে গভীর রাতে কাজ শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এর অংশ হিসেবে মালিবাগ রেলক্রসিং থেকে সুপার মার্কেটের পূর্বপ্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০০ মিটার সড়কের মেরামত কাজ চলছিল রোববার গভীর রাতে। কাজের ফাঁকে রাতের ফ্লাইওভার, ছবি: শাকিল আহমেদ
 
আর এই কাজে অংশ নেন আমিনুল ইসলাম, জমিলাদের মতো প্রায় অর্ধশত শ্রমিক। তাদের বিনিদ্র শ্রমে ও ঘামেই অচিরেই দূর হবে নগরবাসীর দুর্ভোগ।
 
কথা হয় আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দিনের বেলায় গাড়ি চলে বলে ঠিক মতো কাজ করা যায় না। এ জন্য রাতে কাজ করতে হচ্ছে। কাজের ব্যাপারে একটু তাড়াহুড়োও আছে। শুনেছি খুব দ্রুতই ফ্লাইওভার উদ্বোধন হবে।
 
শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো কঠিন অনেক! নিজে উপস্থিত না থাকলে শ্রমিকরা বেশিরভাগ সময় কাজে ফাঁকি দেয়। তাই কাজ তদারকি করতে ঠিকাদার মিজানুর রহমান নিজেই মধ্য রাতে জেগে আছেন সড়কে। কথা হয় তার সঙ্গেও।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মূলত এ কাজ সিটি করপোরেশনের। কিন্তু রাস্তা যেহেতু নষ্ট হয়েছে ফ্লাইওভার করতে গিয়ে, তাই ফ্লাইওভার যারা করেছে, রাস্তা মেরামতের কাজও তারা করে দিচ্ছে। আমি এই অংশটুকুর ঠিকাদারী পেয়েছি। আজ রাতের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে।
 
রাত জেগে সড়ক মেরামতের কাজে ব্যাস্ত জমিলা বেগমও। ৪০০ টাকা হাজিরায় রাত ৮টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় তাকে। তবে তার আগেই যদি কাজ শেষ হয়ে যায় বাসায় ফিরতে পারবেন তিনি ও তার সহকর্মীরা।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দিনে অন্য কাজ করার পাশাপাশি রাতে এই রাস্তা মেরামতের কাজ করি। এতে দু’চার টাকা বেশি আয় হয়। তবে পরিশ্রমটাও অনেক বেশি। কাজ করতে করতে অনেক সময় ঘুম এসে যায়। তারপরও কাজ করতে হয় টাকার জন্য।
 
রাস্তা মেরামতের পাশাপাশি নবনির্মিত ফ্লাইওভার পাহারা দেওয়ারও ব্যাপার আছে। উদ্বোধনের আগেই কেউ তার উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেয় কিনা! দেশ ও জাতির শত্রুরা বহুল প্রতীক্ষিত ফ্লাইওভারের কোনো ক্ষতি করে কিনা! এসব দেখার জন্য এর মুখে রাতের প্রহরী নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই প্রহরীদেরই একজন মো. আজিজুর রহমান।
 
ফ্লাইওভারের এই অতন্দ্র প্রহরী বাংলানিউজকে বলেন, ১৫ তারিখে উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল, হয়নি। ২০ তারিখে উদ্বোধন হবে। সরকারের জিনিস সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর কোম্পানির (ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান) দায়িত্ব শেষ। আমাদের চাকরিও শেষ।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৭
এজেড/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।