ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হারুণ পাটওয়ারী, শরীরজুড়ে যার শত টিউমার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
হারুণ পাটওয়ারী, শরীরজুড়ে যার শত টিউমার! এভাবেই বিশাল টিউমারের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন হারুণ; ছবি: বাংলানিউজ

চাঁদপুর: শরীরের নিচের দিকে ১৫ কেজি ওজনের একটি বড় টিউমার। এছাড়া সারা গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোট ছোট অসংখ্য টিউমার। ছোটগুলো নতুন করে উঠে আবার শরীরের সাথে মিশে যায়। গত ৪২ বছর ধরে এসব টিউমারের ব্যথা আর যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। কথা বলার সময় খুব সহজভাবেই রোগের বর্ণনা দিচ্ছিলেন হারুন পাটওয়ারী (৫০)। যার পেশা এখন ভিক্ষাবৃত্তি।

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার ৪নম্বর নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর এলাকার চাপাতিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল ছাত্তারের ছেলে হারুন। ২০ বছর আগে এমন এই অসুস্থতা নিয়েই বিয়ে করেন জয়তুন্নেছা বেগমকে।

এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে তাদের। ছেলে পঞ্চম শ্রেণী শেষে অভাবের কারণে দিনমজুরের কাজ করে। মেয়ে মুক্তা এলাকার উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণীতে পড়ে।

রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় হারুন পাটওয়ারীর বাড়িতেই কথা হয় তার স্ত্রী জয়তুন ও অন্যদের সাথে।

স্ত্রী জয়তুন্নেছা বাংলানিউজকে বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে ২০ বছর আগে। স্বামীর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জেনেছি, আমার স্বামীর বয়স যখন ৮ বছর তখন থেকেই কোমরের পাশে ছোট আকারে টিউমার হয়। চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে তার অপারেশন করে। তারপর আবারও টিউমার বড় হয়। অর্থাভাবে আর চিকিৎসা করা হয়নি। সঠিক চিকিৎসা হলে হয়তো সে সুস্থ হতো। বর্তমানে বাজারে বাজারে ভিক্ষা করে যা পায় তা দিয়ে কোনো রকমে আমাদের দিন কাটছে।

হারুন পাটওয়ারীর চাচাত বোন পাখি বেগম। পাখি বেগম বলেন, ছোট বেলায় তার কোমরের কালো দাগের মত ছিলো। পরে এটি বড় হয়ে যায়। এখন পুরো শরীরের ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে টিউমার। হারুনরা ৫ ভাই। কিন্তু সবারই দিন-আনি-দিন খাই অবস্থা। তাই তার চিকিৎসা করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেন না।

পরিবার পরিজনের সঙ্গে হারুণহারুনের পাশের বাড়ির (সম্পর্কে ভাই) আব্দুল মান্নান প্রধানিয়া বাংলানিউজকে বলেন, হারুন টিউমার হওয়ার প্রথম দিকে মানুষের কাজ করলেও এখন মতলব বাজার, জোড়পুল, নারায়ণপুর, ছেঙ্গাতলী, কচুয়া, বাকিলা, রঘুনাথপুরসহ আশপাশের বাজারে ভিক্ষা করে। ভিক্ষা করে ৩-৪শ টাকা পায় আর এ দিয়ে চলে তার সংসার। তার চিকিৎসার জন্য সরকার কিংবা ধনবান ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে এখনো তার চিকিৎসা করা সম্ভব।

হারুন পাটওয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, ৮ বছর বয়স থেকে টিউমার শুরু হলেও তখন চিকিৎসা করানো হয়নি। যখন বড় হই তখন প্রথমে হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করি। আবার অনেকের কথায় কবিরাজের মাটিপড়া চিকিৎসাও নিই। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। উল্টো টিউমার আরো বড় হতে থাকে এবং শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে ডাক্তাররা অপারেশন করেন। দুই মাস হাসপাতালে থাকার পর কিছুটা সুস্থ হলে ঢাকায় একটি হোটেলে কাজ শুরু করি। হঠাৎ অসুস্থতা বাড়ে। হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতে চলে আসি। ডাক্তার ৩ মাস পর পর দেখা করার কথা বলেন। কয়েকবার গেলেও পরে আর যাওয়া হয়নি। চিকিৎসা না নিয়ে আজ এই অবস্থা। এ অবস্থায় আমার চিকিৎসার জন্য সরকার যদি সহায়তা করে তাহলে হয়তো ব্যথা-যন্ত্রণার কিছুটা লাগব হবে।

হারুন আরো জানান, বর্তমানে তিনি ব্যথা বাড়লে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে রিজারভিক্স নামের ঔষধ সেবন করেন।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শফিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের রোগীর বিষয়ে এর আগে শুনিনি। জটিল টিউমারে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি যদি চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে আসেন, তাহলে আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বাংলাদেশ সময়:১৫১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
জেএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।