ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
‘প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান’ সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান হবে। অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

‘তবে তিনি এখনও প্রধান বিচারপতি আছেন। প্রধান বিচারপতি একটি প্রতিষ্ঠান ও সাংবিধানিক পদ।

তার বিরুদ্ধে তাড়াহুড়া ও খামখেয়ালি করে কোনো কিছু করা সমীচীন হবে না’ বলেও মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী।

রোববার (১৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।

‘প্রধান বিচারপতি স্বেচ্ছায় ছুটি নিয়ে ব্যক্তিগত সফরে বিদেশে গেছেন। রাষ্ট্রপতি তাকে ছুটি এবং তার অনুপস্থিতিতে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্‌হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির অনুরুপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব দিয়েছেন। এ নিয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই, একটি রাজনৈতিক মহল কোনো ইস্যু না পেয়ে খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো করে বিতর্ক তৈরি অপচেষ্টা চালাচ্ছেন’ বলেও মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী।

‘যারা এ নিয়ে বিতর্ক করছেন, তাদের একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। সেটি হাসিল হয়নি বলেই তাদের এ মায়াকান্না’।

ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রাক্কালে দেওয়া লিখিত বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি নিজেকে সম্পূর্ণ সুস্থ বলে উল্লেখ করায় আমি হতভম্ব। তিনি রাষ্ট্রপতিকে লিখেছেন, তিনি অসুস্থ। অথচ সাতদিন পরে বলছেন, সুস্থ। আসলে যখন প্রথমে বললেন, তখনই ডাক্তারি পরীক্ষা করার দরকার ছিল, কিন্তু তা হয়নি’।

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ-৪৪৭ ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন বিচারপতি সিনহা। রাত ০৯টা ৫৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বিবৃতিটি দিয়ে যান।

দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে দ্বিমত প্রকাশ করে ওই বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত প্রবীণতম বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো রেওয়াজ নেই। তিনি তার রুটিনমাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে’।

বিচারালয়ে পরিবর্তন নিয়ে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদের কথা তুলে ধরে আইনমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত বা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি যিনি আছেন, প্রধান বিচারপতি যা কাজ করতে পারেন, তিনিও ঠিক সেই কাজ করতে পারেন। যদি কোনো প্রশাসনিক পরিবর্তন তিনি আনতে চান, তাহলে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ তাকে সে ক্ষমতা দিয়েছে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমাকে বলতে হয়, এটি নিয়ে প্রধান বিচারপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি আইনসঙ্গত নয়’।

প্রধান বিচারপতির বিবৃতি প্রসঙ্গে শনিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট। রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বক্তব্যটি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছেন। এর মধ্যে বিদেশে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে’।

‘এসব অভিযোগের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে’- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অনুসন্ধান হবে, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা হবে। তারপর প্রশ্ন আসবে, কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। আইন অনুসারে সবকিছু করা হবে’।

‘এখানে পরিস্কারভাবে আমি বলতে চাই, কেউ কিন্তু আইনের ঊর্ধে নন। সেহেতু আইনে যা বলা আছে সকলের ব্যাপারেই সেটি পালন করা হবে’।
 
অভিযোগের অনুসন্ধান কে করবে- প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আওতায়। তাহলে আপনারা বুঝতেই পারছেন, কে এর অনুসন্ধান করবে, কে তদন্ত করবে’।

‘আমাকে কি বলে দিতে হবে যে, ২০০৪ সালের আইনে একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন আছে?- প্রশ্ন রাখেন আইনমন্ত্রী।
 
অভিযোগগুলো কি আইন মন্ত্রণালয় দুদকে পাঠাবে?- প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দুদকে পাঠানোর আইন ও নিয়ম আছে। দুদক নিজেও করতে পারে, সেটিও বলা আছে আইনে’।
 
‘আপনারা পাঠাবেন কি-না?’- প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সে বিষয়ে বিবেচনা করবো’।

অপরাধ প্রমাণিত হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে একটি শূন্যতা আছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কিছু ইনহ্যারেন্ট পাওয়ার আছে। সেটি তিনি ব্যবহার করতে পারেন। অভিযোগগুলোর অনুসন্ধান হতে হবে, অনুসন্ধানের সত্যতা পাওয়া গেলে এর ভিত্তিতে মামলা হবে। মামলা হলে তদন্ত হবে। তারপরে প্রশ্ন আসবে, প্রধান বিচারপতির ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেটি আইনি প্রক্রিয়ায় হবে’।
 
অভিযোগের পরও কেন তাকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘যে ১১টি অভিযোগ তার বিষয়ে আমি কোনো কথা বলবো না। তার কারণ হচ্ছে, তাহলে একটা পক্ষ নেওয়া হবে বলে মনে করি। আমরা নিরপেক্ষ থাকতে চাই। এগুলো নিয়ে ইনকোয়েরি হবে, ইনভেস্টিগেশন হতে পারে। এসব বিষয়ে কোনো বক্তব্য নিতে রাজি নই’।

তবে ‘দেশে থাকা অবস্থায় ওইসব অভিযোগ সরকারের হাতে এলেও বিচারপতি সিনহাকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হল কেন’- প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইন অনুসারে তিনি এখনও প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি একটি প্রতিষ্ঠান ও সাংবিধানিক পদ। ফলে তার বিরুদ্ধে তাড়াহুড়া ও খামখেয়ালি করে কিছু করা সমীচীন হবে না’।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
এমআইএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।