ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বরাদ্দ নেই, পদ্মা-মেঘনার জেলেদের নিরন্ন জীবন! 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
বরাদ্দ নেই, পদ্মা-মেঘনার জেলেদের নিরন্ন জীবন!  পদ্মা-মেঘনার জেলেদের নিরন্ন জীবন! 

মুন্সীগঞ্জ: ২২ দিন নদীতে মাছ ধরমু না, তার লইগা সরকার চাল দিব ২০ কেজি। যেইখানে চাল লাগে ৬৬ কেজি। হুদা কি চাউল রান্না কইরা খামু আমরা। তেল,ডাল,লবণ আর সবজিও কিনতে হয় আমাগো। মাছ ধরা ছাড়া তো আর কিছুই পারি না। অল্প কয়ডা চাল দিব তাও দিতাছে না। নদীতে কি ইলিশ ছাড়া আর কিছু নাই, জাল নিয়া নামলেই জেলে ঢোকায়। 

সরকার ইলিশ বাঁচাইতে কত কিছু করতাছে!  আর এই দিক দিয়া আমাগো যে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়া, না-খায়া ঘরে বইয়া থাকতে অইতাছে সেইডা কেউই দেখে না।  

এভাবেই নিজেদের দু:খকষ্ট আর অভাবের ফিরিস্তি দিচ্ছিলেন পদ্মা ও মেঘনাপাড়ের আয় রোজগারহীন, ক্ষুধার্ত নিরুপায় একাধিক জেলে।

 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার দেশের ১১২টি উপজেলার জেলেদের সহায়তায় জন্য সাত হাজার ৬৮৯ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে বরাদ্দের খাতায় নেই মুন্সীগঞ্জ জেলার নাম। জেলার ইলিশ মাছ শিকারি ২হাজার ৯৭২ জেলে গত বছরের মতো এবারও বরাদ্দ নিয়ে নানা দুশ্চিন্তায় আছেন। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্‍্যন্ত জেলেদের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু আইন অমান্য করে অনেকে জেলে ও ব্যবসায়ী মাছ শিকার এবং বিক্রি করছেন। মৎস্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশের সাথে সমন্বয় করে এই অভিযান চালনা করা হয়।  

ইলিশ প্রজনন মৌসুমে আইন অমান্য করায় জেলে, ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা করা হয়। তবে মুন্সিগঞ্জের জেলেদের জন্য বরাদ্দ নেই বলে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।  গত ১৩ দিনে মুন্সীগঞ্জ অংশের পদ্মা ও মেঘনায় অভিযান চালিয়ে ২হাজার ৭৬৯ কেজি মা-ইলিশ, ৬৯.৭২ লাখ মিটার কারেন্ট জাল এবং ৯৭ জন জেলেকে জেল জরিমানা করা হয়েছে। বর্তমানে ২১ জন জেলে জেল হাজতে আছেন।  
পদ্মা-মেঘনার জেলেদের নিরন্ন জীবন! 
লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীর জেলে ঝিলু মাঝি বাংলানিউজকে জানান, মুন্সীগঞ্জের জেলেদের জুটেছে জেল-জরিমানা। অথচ নিষেধাজ্ঞার দিনগুলোর জন্য মেলেনি বরাদ্দের চাল।  

তিনি খেদ করে বলেন, অন্য জেলাগুলায় জেলেরা বরাদ্দের চাল পাইলেও আমাদের জেলাতে এবারও কোনো বরাদ্দ নাইক্কা। পরিবার-পরিজন লয়া সংসার চালাইতে হিমশিম খাইতাছি। আমরা সরকারি আইন মাইনা চলতাছি। তবু আমাগো লিগা বরাদ্দ নাই। ক্যান যে নাই কিছুই জানি না। ইলিশ বাঁচাইতে কতো ব্যবস্থা নিছে সরকারে। কিন্তু আমাগোর মতো গরিব জেলেগোর লিগা কোনো ব্যবস্থা নাই। আমরা তাইলে কি খায়া বাঁচমু? 

গজারিয়ার মেঘনা নদীর জেলে আকরাম মাঝি বাংলানিউজকে বলেন, জমানো সব টাকা শেষ। কি করমু, কি খামু! জাল ঘরে উঠায়া রাইখা দিছি। মাছধরার নৌকাও নদীর পাড়ে তোলা। কাজ-কাম নাই। অলস বইয়া বইয়া সময় পার করতাছি। পদ্মা, মেঘনা থিকা মাছ ধইরাই তো আমরা পেট চালাই। বরাদ্দ না থাকায় আমাদের সাথে থাকা অনেকেই বাধ্য হয়া নদীতে নাইমা  মা ইলিশ শিকার করতে গেছে। তাগোর জরিমানা হইছে, জেল হইছে। বরাদ্দ নাই তাই দিশাহারা হয়া পরিবার চালানোর লিগা বাধ্য হয়া অনেকেই ইলিশ শিকার করতাছে।  

মুন্সীগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ অলিয়ুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ইলিশ মাছ ধরে থাকে এমন ২হাজার ৯৭২ জেলেকে চাল বরাদ্দের জন্য অনেক আগেই মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে বরাদ্দের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া রবিবার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হবে এই বরাদ্দের বিষয়ে। ১৩দিনের অভিযানে ২হাজার ৭৬৯ কেজি মা-ইলিশ, ৬৯.৭২ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া ৯৭ জন জেলেকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। বর্তমানে ২১ জন জেলে জেল হাজতে আছে।  

জরিমানাকৃত ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৫শত টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা দেওয়া হয়েছে। জেলাতে মোবাইল কোর্ট ৩৮টি, অভিযান চালানো হয়েছে ১০৩টি।

লৌহজং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীর অংশ অন্যতম ইলিশ প্রজনন অঞ্চল হিসাবে পরিচিত। সাড়ে ছয় শতাধিক জেলে এখানে মাছ শিকার করছে। উপজেলায় ১৩ দিন অভিযান চালিয়ে  ৭৩ জনকে আটক, ৬ জনকে জরিমানা ও ১২ জনকে ১১দিন করে জেল দেওয়া হয়েছে। আটক অনেক জেলেই জাজিরা উপজেলার। লৌহজং উপজেলার জেলেরা আইন মেনে চলছে। তবে ব্যতিক্রমও আছে। বরাদ্দ প্রয়োজন জেলেদের জন্য, বরাদ্দের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।  
পদ্মা-মেঘনার জেলেদের নিরন্ন জীবন! 
গজারিয়া উপজেলা মৎস্য অফিসার আক্কাস আলি মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, গজারিয়া অংশের মেঘনা থেকে ইলিশের একটি বড় অংশ রয়েছে। ৯৫ কেজি মা ইলিশ, ২লক্ষ ৩০হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে।  মামলা করা হয়েছে ১১টি।  জরিমানা করা হয়েছে ২০হাজার টাকা। জেলে দেওয়া হয়েছে ৭ জনকে। ১৩দিন অভিযান চালিয়ে মা-ইলিশ, জাল জব্দ এবং দোষীদের জরিমানা করা হয়।  ইলিশ প্রজনন মৌসুমকে সামনে রেখে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।  

জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা বাংলানিউজকে জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দের ব্যাপারে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ হয়েছে। এছাড়া মা ইলিশের শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরু আগেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার যেই জেলাগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেগুলো আগের বারেও পেয়েছে। রোববার বরাদ্দের বিষয়ে যোগাযোগ করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।