বাধ্য হয়ে ধারদেনা করে কোনোরকম সংসারটা আগলে রেখেছিলো মর্জিনা। অবশেষে অভাব মর্জিনার পিছু ছেড়েছে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
আশুলিয়ার মধ্য ঘোষবাগ এলাকার মেয়ে শারমিনসহ মর্জিনা ভাড়া বাসায় থাকতেন। মাসের বেতন দিয়ে কোনো রকম সংসারটা চালিয়ে নিতেন তিনি। তবে অভাবের সংসার ও অসুস্থ স্বামীর জন্য মাঝে মধ্যে দোকানি ও প্রতিবেশীদের কাছে ধারদেনা করতে হতো মর্জিনাকে।
তবে সেই অংকও কিন্তু আহামরি নয়- সাকূল্যে ৩০ হাজার টাকার মতো! কিন্তু এই সামান্য টাকাই যে মর্জিনার জীবনে অভিশাপ হয়ে যাবে, তা হয়তো জানা ছিলো না মর্জিনার। যার খেসারত দিনের পর দিন দিতে হয়েছে। টাকার জন্য মা-মেয়েকে বেঁধে মারধর, অপমান। মর্জিনা ও তার মেয়েকে একটি কক্ষে আটকে রেখে পাওনা টাকার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এমনকি মৃত্যুর আগ মূহুর্তে পানিও দেয়নি পাওনাদাররা। এভাবে সম্মান হারিয়ে নিজেকে চিরতরে মুক্তি দিয়েছেন মর্জিনা।
আটকে রাখা ঘরে মর্জিনার আত্মহত্যা করেন। ভোরে মেয়ে মায়ের মৃতদেহ ঝুলতে দেখে চিৎকার শুরু করে। পরে স্থানীয়রা পুলিশের সহায়তায় ঘরের তালা ভেঙে লাশ উদ্ধার করে। এর মাঝে পালিয়ে যায় নির্যাতনকারী দোকানি ও বাড়িওয়ালা।
মৃত মর্জিনা বেগম রংপুর জেলার কোতয়ালী থানার শাহাজাদপুর গ্রামের শাহিন মোল্লার মেয়ে। তিনি আশুলিয়ার মধ্য ঘোষবাগ এলাকায় থেকে স্থানীয় নাসা গামের্ন্টেসে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।
মর্জিনার পারিবারিক সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে মর্জিনা আশুলিয়া এসে চাকুরি নেন। প্রতিমাসের বেতনে কোনো রকমের সংসার চালান। এছাড়া বাড়িতে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসাও তিনি করান। এ নিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তাই বাধ্য হয়েই আশপাশের দোকানে বাকিতে নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিস ও প্রতিবেশীদের কাছে ধারদেনা করে সংসার চালাতেন। এই টাকার জন্য বার বার চাপ দিতে থাকে পাওনাদাররা।
গ্রামের ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই মর্জিনার। তার পরও মর্জিনা আপ্রাণ চেষ্টা করেন ঋণ পরিশোধের। তিনি পাওনাদারদের কাছে এ জন্য কয়েকমাসের সময় চান। কিন্তু তারা অপেক্ষা করতে নারাজ। পাওনা আদায়ে দোকানি ও বাড়িওয়ালা সবার সামনে মারধর করে।
বুধবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে মাছ বিক্রেতা বাতেন তার পাওনা টাকার জন্য রফিকের বাড়ির একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে মর্জিনাকে। এসময় পাশের মুদি দোকানি রফিক, জসিমসহ আরও কয়েকজন পাওনাদার এসে জড়ো হয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ গ্রামের বাড়ি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকে।
এভাবে তিন দিন মর্জিনা ও তার কিশোরী কন্যা শারমিনকে আটকে রাখে তারা। এ সময় তাদের ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হয়নি। এই আটকাবস্থায় মান-সম্মান হারিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় মর্জিনা বেগম।
মর্জিনার মেয়ে শারমিন বলেন, দোকানিসহ আশপাশের কয়েকজন পাওনাদার তাদেরকে তিনদিন একটি কক্ষে আটকে রাখে। ঠিকমতো খাবার দিতো না তাদের। কয়েকদিন আগেও দোকানের সামনে দোকানি ও আরও কয়েকজন তার মাকে মারধর করেছে।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আওয়াল বলেন, মর্জিনা আত্মহত্যা করেছে নাকি হত্যা করা হয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি আত্মহত্যার ঘটনা।
তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে প্রথমে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে আত্মহত্যা প্ররোচণাকারীদের নামেও মামলার প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্তরা পলাতক। তবে তাদের আটকের জন্য অভিযান চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
এমএইউ/