ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নিজেরা খড়ের ঘরে, গরু বিল্ডিংয়ে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৭
নিজেরা খড়ের ঘরে, গরু বিল্ডিংয়ে নিজেরা খড়ের ঘরে, গরু বিল্ডিংয়ে

খুলনার বটিয়াঘাটার তিতুখালী থেকে ফিরে : ‘আমাগে মতোন গরু তো আর কথা কতি (বলতে) পারে না। সেই জন্যি ওগে গরডা (ঘরটা) পাকাপক্তো কইরে বানাইছি। যাতি ওরা ভালো ভাবে থাকতি পারে। ওগে যত্ন করলি আমাগেও আয় বাড়ে। যার জন্যি নিজেরা নাড়ার (খড়) গরে (ঘরে) থাকলিও ওগে টিন সেটের বিল্ডিং করছি।

খুলনার বটিয়াঘাটার তিতুখালী গ্রামের গৃহিনী সবিতা হালদার গরুদের টিন সেটের বিল্ডিং প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন। শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে গাভীকে খাবার দেওয়ার সময় কথা হয় তার সঙ্গে।

 

তিনি ওই গ্রামের গুরুদাস হালদারের স্ত্রী। গরু পালন করে দারিদ্র্যকে জয় করে তিনটি ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন গুরুদাস-সবিতা দম্পতি। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস গরু পালন করে দুধ বিক্রি করা। নিজেরা নাড়ার  তৈরি কুঁড়ের ঘরে থাকেন। তার মাত্র ২০ গজ দূরে সিট সেটের বিশাল পাকা বিল্ডিং। পরিছন্ন পরিবেশে গরুগুলোর থাকার ব্যবস্থা করেছেন।  
   
সবিতা হালদার জানান, বর্তমানে তাদের ২৬টি গরু রয়েছে। তার মধ্যে ৪টি গরু দুধ দিচ্ছে। এছাড়া ৬টি গরু গর্ভবর্তী রয়েছে। বাচ্চা আছে ৭টি। গরু পালনে খরচ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এক একটি গরু প্রতিদিন ১শ’ টাকার বেশি খাবার খায়। নিজের সন্তানের মতো গরুগুলোর লালন-পালন করেন।
নিজেরা খড়ের ঘরে, গরু বিল্ডিংয়েগুরুদাস হালদার জানান, পৈত্রিক বাড়িতেই থাকেন তারা।  প্রায়  ৩০  বছর  ধরে  গরু পালন করে আসছেন। গরু পালন করে প্রথমে লাভের মুখ দেখায়  অন্য  কোনো  পেশায় যাননি তিনি।  গরু  পালন  করে  তিনটি  ছেলেমেয়ের  লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন। বড় ছেলে ঢাকায় আইন বিষয়ে শেষ বর্ষে রয়েছে। মেঝো ছেলে বিএ পড়ছে। আর ছোট মেয়ে বিজ্ঞান বিভাগে নবম শ্রেণিতে পড়ছে।

তিনি আরো বলেন, পরিবারের দুধের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রথমে দেশি গরু পালন শুরু করেন। সেই গরুর দুধ বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে  থাকেন।  যার  কারণে  গরু  পালন আরো বৃদ্ধি করেন।

তিনি বলেন, তার বাড়িতে প্রতিদিন পাইকাররা আসেন খাঁটি দুধ কিনতে। প্রতি কেজি দুধ বিক্রি করা হয় ৩৫-৪০ টাকা।

তিনি অভিযোগ করেন, গরুর খামারীরা দুধের ন্যায্য দাম পান না।  
দুধ দোহন করণে সবিতা কেন নিজেদের জন্য ভালো ঘর তৈরি করছেন না এমন প্রশ্নে গুরুদাস বলেন, দুধ বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায়, তা দিয়ে সংসার চালিয়ে তিন ছেলে-মেয়ের পড়ার খরচ চালাতে হয়। এরপর কষ্ট করে কিছু টাকা সঞ্চয় করছেন বড় ছেলেকে বিদেশ থেকে ব্যারিষ্টারি পড়ানোর জন্য।

আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি বলেন, নিজেদের যত কষ্ট হোক না কেন ছেলেকে ব্যারিষ্টারি পড়াবোই। ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শেষ করে মানুষের মতো মানুষ হলে আমাদের আর কষ্ট থাকবে না।  

গরু পালনে স্বল্প শিক্ষিত গুরুদাস ও সবিতার এ  সাফল্যে  উদ্বুদ্ধ  হয়ে  এলাকার  অনেকে এখন গরু পালন শুরু করেছেন।

এলাকাবাসী জানান, দেশীয় গরু পালন করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। এক সময় সংসারে যাদের নুন আনতে পানতা ফুরানো তারা আজ ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়:  ১৬৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৭
এমআরএম/বিএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।