কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। কেআইবি চত্বরে সুলভ মূল্যে ডিম পেতে মানুষের স্রোত শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডিম বিক্রি শুরু করার আগেই মানুষ হইহুল্লোড় করতে থাকে। ভোর থেকে দাঁড়িয়ে থাকা ডিম প্রত্যাশীরা চার-পাঁচ ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে অধৈর্য্য হয়ে পড়ে। ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০ টায় ডিম বিক্রি শুরু না হলে অপেক্ষমাণ মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে, ইট-পাটকেল, জুতা,পানির বোতল, ডিম ছুঁড়ে মারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার ও লাঠিচার্জ করে।
আয়োজক কর্তৃপক্ষ তাদের ধারণার বাইরে মানুষের সাড়া দেখে ডিম বিক্রি শুরু করতে পারছিলেন না। আয়োজক কমিটি থেকে জানা যায়, তাদের স্টকে আছে ২০ হাজার ডিম। কিন্তু মানুষ অনেক। এ পরিস্থিতিতে ডিম বিতরণ করা সম্ভব নয়। ডিম বিক্রি শুরু হলে যে কোনো সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
ডিম প্রত্যাশীরা এ সময় বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। তাদের স্লোগানে ছিলো ক্ষোভ। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে ডিম না পাওয়ার হতাশা।
মালিবাগ থেকে ডিম কিনতে এসেছে অর্নি। তিনি বলেন, ডিম কেনার জন্য সকাল ৫ টায় রওনা হয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু ডেকে এনে আমাদের হয়রানি করা হলো। অনেকের গায়ে পুলিশ হাত তুলেছে। এমন অপমান ও অন্যায় করার কারণ কি? এর বিচার চাই আমরা।
ডিম নিতে আরিফ জানান, এত প্রচারণা করে প্রোগ্রাম তাদের; মানুষ সম্পর্কে ধারণা ছিলো না, এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর। মানুষকে নিয়ে ভণ্ডামি করার শাস্তি চাই।
আয়োজক কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এখন দুঃখিত বলা ছাড়া কিছু করার নেই। ডিম বিক্রি আজকে আর সম্ভব নয়। আমাদের প্রস্তুতির বাইরে চলে গেছে চাহিদা।
সোয়া ১১টার দিকে আয়োজক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ডিম বিক্রি বাতিল বলে জানানো হয়।
মাইকে ঘোষণার মাধ্যমে জানানো হয়, বিশ্ব ডিম দিবসে আপনাদের ব্যাপক সাড়ায় আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞ। আপনাদের সাড়া আমাদের কল্পনার বাইরে ছিলো। তাই ডিম সংকট থাকায় দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আজকে ডিম বিক্রি বন্ধ থাকবে। কয়েকদিনের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্পট সুলভ মূল্যে ডিম বিক্রি করা হবে।
ঘোষণার পরপরেই উপস্থিত মানুষ মিছিল, বিক্ষোভ প্রর্দশন করে থাকে। আয়োজক কমিটি পুলিশের হস্তক্ষেপ চাইলে পুলিশ মানুষকে ছত্রভঙ্গ করে, লাঠি নিয়ে ধাওয়া করে। কেআইবির গেট বন্ধ করে পুলিশ ঘিরে রাখে।
একটি সেমিনারে যোগ দিতে এসে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ্র সাংবাদিকদের বলেন, স্বীকার করছি, অপরিকল্পিত পরিকল্পনার ফলে আজকে এমন ঘটনা ঘটেছে। আমরা ভাবিনি এত মানুষের সাড়া পাব।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ ছিলো, এক লাখ ডিম বিক্রি করার। মজুত ছিলো ৫০ হাজার ডিম। কিন্তু এত মানুষের চাহিদার কাছে তা খুব অল্প। ফলে বিক্রি স্থগিত করতে হলো। আগামীতে এমন হবে না।
তেজগাঁও থানার এসআই ( উপপরিদর্শক) মৃণাল বাংলানিউজকে বলেন, আয়োজকদের ধারণা ছিলো না, এত মানুষ হবে। পরিকল্পনা ছাড়া এমন আয়োজন করা উচিত নয়। মানুষকে ভোগান্তি দেওয়া হয়। তবে পরিস্থিতি আমরা নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছে।
বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ৩ টাকা ধরে ডিম বিক্রি করার উদ্যোগ নেয়। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত প্রতিটি ডিম তিন টাকায় বিক্রি করার কথা ছিলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৭
এমসি/আরআই