মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে এসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নোট পাঠিয়ে এসব কথা জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) মিয়ানমার সরকার তাদের সীমান্তঘেঁষা পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
রাষ্ট্রদূত তার নোটে লিখেছেন, ‘সেখানে বসবাসরত বাকি রোহিঙ্গারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। অনেকে নিজ বাসভূমি থেকে বিতাড়িত। তারা ভয়ে নিজ গ্রামে ফিরে যেতে চাচ্ছেন না বলে আমাকে জানিয়েছেন’।
‘প্রায় সমস্ত অঞ্চল জুড়ে যেদিকে তাকাই, পোড়া গ্রাম। এ অবিশ্বাস্য ঘটনা। যা আচমকা কোনো ঘটনা নয় বলে আমার মনে হয়েছে। যারা চোখে দেখেননি, তারা বিশ্বাস করবেন না- এমন ঘটনা ঘটতে পারে’।
এ পরিদর্শনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও লাওসের রাষ্ট্রদূতরা ছিলেন। রাখাইনের পরিস্থিতি দেখাতে তাদেরকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন মিয়ানমারের শীর্ষ মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা।
অন্য চারটি দেশের প্রতিনিধিও এমন ঘটনা দেখে হতবাক হয়ে গেছেন।
ওই কর্মকর্তা জানান, প্রথমে তাদেরকে বৌদ্ধপ্রধান রাথিডং এলাকার একটি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লোক দেখানো বিচ্ছিন্ন গ্রামে কিছু মুসলিম রোহিঙ্গা বসবাস করছেন- তা দেখানো হয়।
তারপরেই আকাশপথে রাখাইন রাজ্যের বেশ কিছু এলাকা হেলিকপ্টারে চেপে ঘুরিয়ে দেখানো হয়। গাড়িতে চাপিয়েও নিয়ে যাওয়া হয় চারটি স্থানে। দোভাষির মাধ্যমে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছেন রাষ্ট্রদূতরা। পাশে সরকারি কর্মকর্তা থাকায় সঠিকভাবে কথা বলতে পারছিলেন না। তবে তাদের চোখে-মুখে ছিল আতঙ্ক।
রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান জানিয়েছেন, মুখে ভালো ভালো কথা বললেও তারা যে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, তা তাদের চেহারায় লক্ষ্য করা গেছে।
এরই মাঝে তারা বলছিলেন তাদের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা। তার ঘরছাড়া। কিন্তু এখনই ফিরতে চান না ভিটে-মাটিতে। কারণ, মৃত্যু সেখানে ওঁৎ পেতে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
নোটে রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, মিয়ানমার সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠানের ইন্ধন ছাড়া এতো বড় ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়।
সফরসঙ্গী চার দেশের রাষ্ট্রদূত এ সংকটের সমাধানে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২,২০১৭
কেজেড/এএসআর