ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বগুড়ায় তুফানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৭
বগুড়ায় তুফানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট বগুড়ায় তুফানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

বগুড়া: অবশেষে বগুড়ায় এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও পরে মা-মেয়েকে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করার বহুল আলোচিত ঘটনায় দায়েরকৃত দু’টি মামলার তদন্ত শেষে শহর শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক তুফান সরকারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফজলুর রহমানের আদালতে মামলা দু’টির তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক  (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
 
দিবাগত রাত ৮টার দিকে মামলা দু’টির তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক  (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।


 
তিনি জানান, মামলা দু’টির অভিযোগপত্র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জিআরও শাজাহান মিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার (১১ অক্টোবর) আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
 
অভিযোগপত্রে মা-মেয়ে নির্যাতনের ঘটনায় ১৩ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে ধর্ষণের ঘটনায় তুফানের শ্বশুর জামিলুর রহমান রুনু এবং নাপিত জীবন রবিদাস ও আঞ্জুয়ারার বিরুদ্ধে কোন স্বাক্ষ্য প্রমাণ না থাকায় অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।    
 
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে তারা হলেন -বহিষ্কৃত শহর শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা খাতুন, স্ত্রীর বড় বোন বগুড়া পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি, শাশুড়ি রুমি খাতুন, তুফান বাহিনীর সদস্য আতিক, মুন্না, আলী আজম দিপু, রূপম, শিমুল, জিতু, রুমকির সহযোগী আঞ্জুয়ারা ও নাপিত জীবন রবিদাস। এদের মধ্যে শিমুল পলাতক রয়েছেন। বাকি সব আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আঞ্জুয়ারা, নাপিত জীবন রবিদাস ও রুনু মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না।  
 
মা-মেয়েকে কাউন্সিলর রুমকির বাসায় নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এই ১৩ জনকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে।
 
তবে ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় মোট ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই মামলা থেকে জামিলুর রহমান রুনু ও নাপিত জীবন রবিদাস ও আঞ্জুয়ারার  বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য প্রমাণ মেলেনি বলে উল্লেখ করে তাদের অব্যাহতি দানের সুপারিশ করছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
 
আসামিদের মধ্যে তুফান বগুড়া জেলে মাদক সেবন করায় তাকে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার শ্বশুর রুনু একটি মামলায় জামিন পেলেও অপরটিতে জামিন পাননি। ফলে রুনুসহ  ৯ জন বগুড়া কারাগারে আছেন।
 
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, প্রধান আসামি তুফানের সহযোগী আতিক, দিপু ও নাপিত জীবন রবিদাস আদালতে মা ও মেয়েকে ন্যাড়া এবং নির্যাতনের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়াও তদন্তকারী কর্মকর্তা তুফান, আশা, রুমকি ও রুমি বেগমসহ অন্যদের কয়েকদফা রিমান্ডে নিয়েও স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেননি। তবে ভিকটিম ছাত্রীও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
 
এছাড়াও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের (শজিমেক) ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদনে ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখসহ শিক্ষার্থীকে নাবালিকা উল্লেখ করা হয়েছে।
 
মামলার অবিভযোগপত্রে মোট ১৬ জন স্বাক্ষী রাখা হয়েছে। আলামত হিসেবে আছে তুফানের প্রাইভেটকার, দু’টি ছুরি, দু’টি কাঁচি ভিকটিমদের স্বাক্ষর নেওয়া কাউন্সিলর রুমকির পৌরসভার প্যাডের পাতা, নির্যাতনের এসএস পাইপ, মা ও মেয়ের কেটে ফেলা চুল।

এর আগে শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেলে বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকির চকসুত্রাপুর এলাকার বাসায় সদ্য এসএসসি পাস করা মেয়েটিকে ধর্ষণ ও সালিসের নামে  মা-মেয়ের ওপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটানো হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) তুফান সরকার সদ্য এসএসসি পাস করা মেয়েটিকে কলেজে ভর্তিতে সহায়তার কথা বলে নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে গত ১৭ জুলাই ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের বিচার-সালিশের নামে ডেকে নিয়ে গত ২৮ জুলাই বিকেলে বগুড়া পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকির চকসূত্রাপুর এলাকার বাসায় অমানবিক নির্যাতন ও মারধরের পর মা-মেয়ের চুল কেটে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়।

বর্তমানে নির্যাতিত মা-মেয়ে আদালতের নির্দেশে রাজশাহীর সেফহোম ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।