ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

শিক্ষার্থী হত্যা, সিসিটিভিতে দুই ছিনতাইকারী শনাক্ত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৭
শিক্ষার্থী হত্যা, সিসিটিভিতে দুই ছিনতাইকারী শনাক্ত তালহা

ঢাকা: বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’তে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খন্দকার আবু তালহা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি আশুলিয়ায় ছিল বলে সেখানকার হলে থাকতেন তালহা। তবে সপ্তাহের শুক্রবার পরিবারের টানে চলে আসতেন বাসায়।

ওই সময়টুকু বাবা-মায়ের আদর আর ছোট দুই বোনের সঙ্গে গল্প আর আড্ডা দিয়ে কাটতো তালহার। ছুটি শেষে আবার আশুলিয়া ফিরতে হতো তাকে।

গত ০৮ অক্টোবর (রোববার) ভোর পৌনে ৬টায় রাজধানীর ওয়ারীর ১২/৪ কেএম দাস লেনের বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তালহা(২১)। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে তালহা তার বাবা আবু রিয়াজ মো. নুরু উদ্দিন খন্দকারকে জড়িয়ে ধরে আদর নেন। আর বাবাকে সাবধানে থাকতে বলে যান।

ওয়ারীর কেএম দাস লেন গলির মাথায় যেতেই দেখেন তারই প্রতিবেশী দুই ভাই-বোন ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছে। তাদের বাঁচাতে এগিয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করায় ছিনতাইকারীরা তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। আর তাতেই প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী।

পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুই ছিনতাইকারীকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছে। তাদের পাকড়াও করার জন্য রাজধানী ও আশপাশের জেলায় অভিযান চলছে।

পরিবারের বড় সন্তান একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে অনেকটাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তালহা’র বাবা-মা। শোকার্ত ছোট দুটি বোনও চরম হাহাকার বুকে নিয়ে স্তব্ধ, বিমূঢ় হয়ে সারাক্ষণ বসে থাকছে ভাইয়ের ঘরের এক কোণে।

‘বাবা বাবা চিৎকার শুনে দৌড়ে নিচে নেমে দেখি ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় গেটের সামনে পড়ে আছে। আমি কি করবো, ওকে তুলতে চাই কিন্তু পরি না। কোনো কথাও বলে না। ’ পরে আশেপাশের লোকজন মিলে ছেলেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। তবু আমার ছেলেকে আর বাঁচাতে পারিনি। ’ –আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ে এভাবেই পুত্র হারানোর মর্মান্তিক বেদনার কথা বলছিলেন তালহা’র বাবা আবু রিয়াজ মো. নুরু উদ্দিন খন্দকার।


বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘বছর খানেক আগে তালহা আমার সঙ্গে রিকশা করে যাচ্ছিল। রাস্তায় কিছু বখাটে তখন মেয়েদের ইভটিজিং করছিল। তালহা তা দেখামাত্র প্রতিবাদ করতে ছুটে গিয়েছিল। ’

‘কোথাও কোনো অন্যায় দেখলে ও আর বসে থাকতে পারতো না। ছোটবেলা থেকেই ছেলের ভিতর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার স্বভাবটি ছিল। ও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করতো। কিন্তু এই প্রতিবাদী স্বভাবই আজ ওর জন্য কাল হলো। আমি আমার বুকের মাণিককে হারালাম। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ’

এবিষয়ে ওয়ারি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তালহা হত্যার সঙ্গে জড়িত দুই ছিনতাইকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেই তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।

আমরা গ্রেফতাদের চেষ্টা চালাচ্ছি। খুব শিগগিরিই আসামিদের ধরা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে ওয়ারী এলাকারা স্থানীয়রা বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন, ওয়ারী এলাকায় ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। গত ক’দিনে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে রাতে আর ভোরের দিকে ছিনতাইয়ের এসব ঘটনা ঘটছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বাইরে থেকে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা এই এলাকায় এসে ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। আর এই চক্রের সদস্যরা স্থানীয় বখাটে যুবকদের সহায়তায় নিচ্ছে। ভোরবেলা ও গভীর রাতে সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনালে যাওয়া আসার সময় যাত্রীদের টার্গেট করে এরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৭
এসজেএ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।