ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘বিড়িশিল্প বন্ধ হলি আমাগেরে মাইরে ফেলতি হবি’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৭
‘বিড়িশিল্প বন্ধ হলি আমাগেরে মাইরে ফেলতি হবি’ যশোরের নাভারনের একটি বিড়ি ফ্যাক্টরি; ছবি: বাংলানিউজ

নাভারন (যশোর) থেকে: বিড়িশ্রমিক হিসেবে ছোটবেলা থেকেই কাজ করছেন মায়া খাতুন। এখন বয়স ৪০ এর বেশি। এই শিল্পে কাজ করতে করতে বিড়িশিল্পের মায়ায় জড়িয়ে গেছেন মায়া খাতুন। তাই তার সহজ সরল উক্তি:‘বিড়িশিল্প বন্ধ হলি আমাগেরে মাইরে ফেলতি হবি।’

দেশের বিড়িশিল্পের সঙ্গে জড়িত অর্ধেকের বেশি শ্রমিকই নারী। অসহায় বহু হতদরিদ্রের বাঁচার একমাত্র অবলম্বন এই বিড়িশিল্প।

এই শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে অসহায়, স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা লাখো নারীর জীবন ও অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। তাদের খাওয়াপরা জুটবে না।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা যশোরের বিড়ি ফ্যাক্টরিগুলো ঘুরে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই দেখা গেল। জানা গেল তাদের অভিন্ন অভিমত।

বিড়িশ্রমিক মায়া খাতুন বলেন, আমি ছোট বয়সেই বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কাজ করা শুরু করি। আমার বাপ বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে, কিন্তুক আমি চাইনি (চাই না) আমার মা-ও বিনা চিকিৎসায় মারা যাক। চিকিৎসা বিনে আমার বাপকে মাইরে ফেলিছি। তাই মাকে হারাতে চাই না। এই বিড়ি ফ্যাক্টরিতে কাজ করে বৃদ্ধ মা’র চিকিৎসা চলছে। আমাদেরকে মা-বাপ দুনিয়ার আলো-বাতাস দেখাইছে। আর এই ফ্যাক্টরিতে কাজ করে আমাদের জীবন চলছে। তাই সন্তানের গায়ে হাত দিলে যেমন বাপ-মা কষ্ট পায়, তেমনি কেউ যদি আমাদের বিড়ি ফ্যাক্টরির উপর আঘাত করে তাহলে তা আমাদের গায়ে লাগবে।

মায়া খাতুন বলতে থাকেন, যদি বিড়ি ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যায়, আমার মতো হাজার হাজার মেয়ে কী করে জীবন-যাপন করবে, নিজেরা জানি না। আমরা কিভাবে বাঁচব?কে আমাদের পেটের ভাত জোটাবে? ফ্যাক্টরি বন্ধ করার আগে আমাগেরে মারি ফেলতি হবি। আমেরিকান কোম্পানি এমনভাবে আমাদের গরিব দু:খি মানুষের পাছে (পিছে) লাইগেছে যে, আমাদের বিড়ি ফ্যাক্টরি তারা বন্ধ করেই ছাড়বে।
আরেক বিড়ি শ্রমিক আলমগীর হোসেন বলেন, বিড়ি বন্ধ হলি (হলে) আমরা গরিব, দু:খী মানুষ কোথায় যাবো? আমরা লাখ লাখ শ্রমিক এই কাজ করে খাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরের ২৯ জুন আমাদের সুখ, দু:খের কথা ভাইবি বলিছিলেন বিড়ির উপর ট্যাক্স বাড়ানো যাবে না। কারণ বিড়িশিল্পে নারী ও অসহায় শ্রমিকরা কাজ করে। এখন আবার শুনতিছি এই শিল্প বন্ধ করার কথা বলছে। আমরা কি করব? আমাদের খাবার দেবে কে?শ্রমিক

বিড়িশিল্প বন্ধ হলে সারাদেশে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ হারাবে। তখন অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাবে--এমন শঙ্কা প্রকাশ করে স্থানীয় ৭ নং নাভারন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী বলেন, আমার এলাকার নিরিহ-গরীব মানুষের সুবিধার্থে ৬০’র দশকে এই এলাকায় বিড়িশিল্প গড়ে ওঠে। এখানে কয়েক হাজার অসহায় গরিব মানুষ কাজ করে খাচ্ছে। যদি বিড়িশিল্প বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সাধারণ মানুষগুলো কি করবে? বিড়ি বন্ধ করলেই যে তামাক বন্ধ হবে তা তো নয়! এর ফলে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে পাতার বিড়ি আসবে। দেশ ফেনসিডিল, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকের অভয়াশ্রমে পরিণত হবে। অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত আসলে বিড়ি বন্ধ করা নয়, বরং দেশীয় শিল্পকে ধ্বংস করা।

বিড়িশ্রমিক ফেডারেশনের (দক্ষিণাঞ্চল) আহ্বায়ক ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিড়িশিল্প বন্ধ হলে সীমান্তবর্তী এলাকা যশোরের বেকার হয়ে যাওয়া হাজার হাজার শ্রমিক পেটের দায়ে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি নারীপাচারের আশঙ্কাও যাবে বেড়ে। তাই বিড়িশিল্প বন্ধ না করে বরং গরিব অভাবী মানুষের রুটি রুজির এই শিল্পকে টিকে রাখাই হবে সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত। সরকার যেন এদিকটা বিবেচনায় নেয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৭
এসএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad