ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

স্মার্টকার্ডের প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পে যত অসঙ্গতি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৭
স্মার্টকার্ডের প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পে যত অসঙ্গতি!

ঢাকা: জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মাধ্যমে দেশবাসীকে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ড সরবরাহ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট স্মার্টকার্ডের জন্য আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস বা আইডিইএ প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। তাই নতুন একটি প্রকল্প নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

‘ভোটার তালিকা প্রস্তুত এবং জাতীয় পরিচিতি সেবা প্রদানে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিতে রয়েছে। এই প্রকল্পটি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখছেন।

যা বাস্তবায়িত হলে এনআইডি অনুবিভাগের ওপর ইসির নিয়ন্ত্রণ হারানোসহ সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিধি কমে যাওয়া ছাড়াও বৈষ্যমের সৃষ্টি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আর এ নিয়েই কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত রোববার তারা কর্মবিরতির কর্মসূচিও পালন করেছে। যদিও এই কর্মসূচি আগামী রোববার পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির অসঙ্গতিগুলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার কাছে উপস্থাপনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের চেষ্টা করবেন তারা। তাদের মূল দাবিই হচ্ছে ইসি কর্মকর্তাদের দায়িত্বের পরিধি না কমানো এবং বৈষ্যমের সৃষ্টি না করা। এক্ষেত্রে তারা চায় পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রস্তাবটি ফিরিয়ে এনে পুনর্মূল্যায়ন করে তাদের দাবি অনুযায়ী আবারো পাঠানো হোক।

অসঙ্গতি চিহ্নিত করতে ইসির কর্মকর্তারা প্রকল্পের ‘বৈষম্য দূরীকরণ কমিটি’ গঠন করেছেন। উপ-সচিব নুরুজ্জামান তালুকদারের সভাপতিত্বে সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতিনিধি হিসেবে যে কমিটিতে রাখা হয়েছে।

বৈষম্য দূরীকরণ কমিটি যে সমস্ত অসঙ্গতি চিহ্নিত করেছে-

১) প্রস্তাবিত প্রকল্পে ‘প্রকল্প পরিচালক’ পদটি প্রেষণে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী ভোটার তালিকার ডাটাবেজের ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়। তাই পৃথক প্রকল্প পরিচালক করলে দ্বৈত প্রশাসন দেখা দেবে। এজন্য আইডিইএ প্রকল্পের ন্যায় এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালককেই প্রকল্প পরিচালক হিসেবে রাখার পক্ষে ইসি কর্মকর্তারা।

২) প্রস্তাবিত প্রকল্পে ‘উপ প্রকল্প পরিচালক’ পদে প্রেষণে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এমন হলে ভোটার তালিকা প্রণয়নে অসুবিধা হবে বলে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে আইডিইএ প্রকল্পের ন্যায় এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালকসহ (অপারেশন্স) অন্যপদেও ইসি কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে।

৩) উপ-পরিচালক পদ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত প্রকল্পে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মানেই পরিচালক আর উপ প্রকল্প পরিচালক মানেই উপ-পরিচালক। তাই এই পদ সৃষ্টি অযৌক্তিক।

৪) প্রস্তাবিত প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‍জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগকে সহায়তা করা। কিন্তু প্রকল্প কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে-ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সকল কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ভোটার তালিকা আইন ও বিধি পরিপন্থি।

৫) বর্তমানে স্মার্টকার্ড বিতরণের জন্য কার্ড প্রতি সরবরাহকারীকে ১০ টাকা হারে প্রদান করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা যাচাই না করে প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৬ টাকা কমিয়ে ৪ টাকা প্রদানের কথা বলা হয়েছে।

৬) চলমান আইডিইএ প্রকল্পের পদগুলোর আলোকেই প্রস্তাবিত প্রকল্পের নামকরণ করা করা দরকার। এছাড়া প্রকল্প মেয়াদ শেষে সরকারি বিধি-বিধান অনুসারে রাজস্বখাতে নেওয়ার প্রস্তাবরা করা যেতে পারে বলেও মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা।

৭) প্রস্তাবিত প্রকল্পের সকল পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হয়েছে। অথচ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা পিএসসি’র মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। তাই নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মান বজায় রাখার জন্য প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা যাবে না। এক্ষেত্রে সরকারি বিধি-বিধান অনুসরণ করতে হবে।

৮) বিদ্যমান আইডিইএ প্রকল্পের জনবলকে তাদের বর্তমান পদের নিয়োগশর্ত অনুযায়ী সমমানের পদে প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পে নিয়োজিত করতে হবে। কিন্তু প্রস্তাবিত প্রকল্পের দশম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।

৯) এছাড়া ৬৪টি জেলায় সহকারী প্রোগ্রামার পদ সৃষ্টি এবং তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের বেলায় হয়েছে-নতুন ভোটার নিবন্ধন, মৃত ভোটার কর্তন, ভোটার স্থানান্তর ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ ও তদানুসারে কম্পিউটার অপারেটরদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ও ভোটার তালিকা আইন এবং বিধি-বিধানের পরিপন্থি। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিধিকে ছোট করে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৭
ইইউডি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।