এজন্য নির্মাতাসহ তাদের একটি প্রকৌশল টিম রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়ায় থাকা ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে গিয়ে যেই কক্ষে রাওদা থাকতেন, তার ভিডিও ধারণ করেছেন।
অস্ট্রেলিয় চ্যানেল নাইনের ‘সিক্সটি মিনিট’ নামের একটি অনুষ্ঠানের জন্য প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
কলেজ হোস্টেলে রাওদার কক্ষে ক্যামেরার পাশে দাঁড়িয়েই প্রডিউসার মিস লওরা স্পারস বলেন, রাওদা একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মডেল ছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যু নিয়ে অনেক রহস্য। বিনোদন জগতের মানুষ তার মৃত্যুর সর্বশেষ খবর জানতে চান। তাদের জন্যই এই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ হচ্ছে।
এর আগে গত ২৯ মার্চ রাজশাহীর নওদাপাড়ায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেল থেকে রাওদা আতিফের (২২) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ওই কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মালদ্বীপের ‘নীল নয়না’ মেয়ে রাওদা বাংলাদেশে এসেছিলেন পড়তে। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি শখের বশে মডেলিং করতেন।
রাওদার মৃত্যুর দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজশাহীর শাহ মখদুম থানায় অপমৃত্যুর মামলা করে। রাওদার মরদেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজশাহীর হেতমখাঁ গোরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে তার মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। ময়নাতদন্ত শেষে ওই বোর্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাওদা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এরপর মালদ্বীপরে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও রাজশাহীতে গিয়ে ঘটনা তদন্ত করেন।
রাওদার মৃত্যুর ঘটনায় রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিও তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, মডেল ও মেডিকেল শিক্ষার্থী রাওদা আত্মহত্যা করেছেন। তবে রাওদার বাবা মোহাম্মদ আতিফ এসব প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে গত ১০ এপ্রিল তিনি রাজশাহীর আদালতে এই ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় রাওদার সহপাঠী ভারতের কাশ্মিরের মেয়ে সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়। সিরাতকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা না হলেও তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয় ওই টেলিভিশন চ্যানেলটির উপস্থাপক সিরাতেরও বক্তব্য ধারণ করতে চেয়েছিল। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা 'সিক্সটি মিনিট' টিমকে জানান, সিরাত এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেবেন না।
এদিকে, গত ১৪ এপ্রিল হত্যা মামলাটি শাহ মখদুম থানা থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। এরপর কবর থেকে মরদেহ তুলে দ্বিতীয়বারের মতো তিন সদস্যের আলাদা মেডিকেল বোর্ড গঠন করে রাওদার মরদেহের পুনঃময়নাতদন্ত করা হয়। পরে তাদের প্রতিবেদনেও বলা হয়, রাওদা আত্মহত্যা করেছেন। তবে তার বাবা মোহাম্মদ আতিফ এখনও দাবি করে আসছেন, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর থেকে তিনি রাজশাহীতেই অবস্থান করছেন। কনকলতা নামে রাজশাহীর এক নারীকে তিনি বিয়েও করেছেন। মেয়ের মৃত্যু রহস্য বের করতে এসে দ্বিতীয় বৌ নিয়ে সংসার পেতেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হক বাংলানিউজকে জানান, ঢাকা থেকে ভিসেরাসহ অন্য প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছেন তারা। এসব প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত তারা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে কোনো মন্তব্য লেখেননি।
ফাইনাল চার্জশিট দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফরেনসিক বিভাগ থেকে মোবাইল ও ল্যাপটাপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনও তাদের কাছে আসেনি। প্রতিবেদন আসার পর চার্জশিট দেওয়া হবে। তবে রাওদার মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে জানা যায়, শাহী গনি নামে মালদ্বীপের এক যুবকের সঙ্গে রাওদার আতিফের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো।
শাহী পড়াশোনার জন্য লন্ডনে থাকেন। তার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিলো রাওদার। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে এসব প্রমাণাদি বেশ কাজে লাগবে। সব মিলিয়ে দ্রুতই চার্জশিট দেওয়া যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এই তদন্ত কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৭
এসএস/জিপি