ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সংকট, লোকসানের আবর্তে পিডিবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
সংকট, লোকসানের আবর্তে পিডিবি সংকট, লোকসানের আবর্তে পিডিবি- ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: সংকটের আবর্তে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। দিনে দিনে রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে চলেছে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি। দেনা মেটাতে অবচয় তহবিল হাতাতে হচ্ছে। ঘাটতির লোকসান পঁয়তাল্লিশ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানিতে অংশ নিয়ে পিডিবির জিএম (বাণিজ্যিক পরিচালন) কাওছার আমিন আলী এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন। এ সময় তার পাশেই বসেছিলেন রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদও।

প্রতিষ্ঠানটির অবচয় তহবিলে ২২হাজার ৩’শ ৩০ কোটি টাকা জমা থাকার কথা। কিন্তু জমা রয়েছে মাত্র ৩’শ ১৯ কোটি টাকা। রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও আইপিপির বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হচ্ছে তহবিল থেকে।

পিডিবির নেগেটিভ ইকুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭’শ কোটি টাকায়। অর্থের অভাবে নাকি ১৭৩০ মেগাওয়ার্ট ক্ষমতা সম্পন্ন কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ ও ওভারহোলিং কাজ ব্যহৃত হচ্ছে। আর রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারায় উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস হচ্ছে বলে জানান পিডিবির কর্তারা।

উচ্চদরে বিদ্যুৎ ক্রয় ও উৎপাদন করে কমদামে বিদ্যুৎ বিক্রি করায় প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকায়। এই টাকা ভর্তুকি হিসেবে দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সরকার ৩ শতাংশ হারে সুদে ঋণ দিয়েছে। এতে আরও ৪ হাজার ৪’শ ৮১ কোটি টাকা দায় বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন কাওছার আমিন আলী।

তিনি বলেন, বিইআরসি এই টাকা ভর্তুকি হিসেবে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলো। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় সে নির্দেশনা মানেনি। তারা ঘাটতি পূরণে ৩৯ হাজার ৬’শ ১০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে বিউবোকে। যে কারণে পিডিবির আর্থিক বিবরণী গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে।

বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো প্রয়োজন বলে যুক্তি দাঁড় করান পিডিবির কর্তারা। তবে শুনানিতে অংশ নিয়ে তাদের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম।

তিনি বলেন, পিডিবি রুগ্ন হওয়ার পেছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে। পিডিবির বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। পিডিবি নিজে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে মাত্র ছিয়াশি পয়সা (ইউনিট) খরচ হয়। সেখানে একই বিদ্যুৎ বেসরকারি কেন্দ্র থেকে কিনতে হচ্ছে ২ দশমিক ৯৯ টাকায়।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে না দিয়ে একই গ্যাস পিডিবিকে দিলে ইউনিট প্রতি গড়ে ৭ দশমিক ৩৫ টাকা মুনাফা করতে পারতো। অথচ তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। এতে করে পিডিবি দিনদিন রুগ্ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন শামসুল আলম।

শামসুল আলমের কথার প্রমাণ মেলে পিডিবির কর্তাদের তথ্যেও। তারা বলেন, গ্যাস না পাওয়ায় গড়ে ১২ ‘শ থেকে ১৪ ‘শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকে। পিডিবির সরবরাহকৃত কাগজে দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পিডিবি ১২ হাজার ৭’শ ৭৫ মিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিল।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ার কথা ছিলো, না হয়ে উল্টো উৎপাদন কমে গেছে। ১২ হাজার ৭’শ ৫১ মিলিয়ন কিলোওয়াট হয়েছে। আর এই সময়ে বেশ জোরেই উপরে উঠেছে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর উৎপাদন। আইপিপির ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে মোট উৎপাদন হয়েছিলো ১৩ হাজার ৬’শ ২৯ মিলিয়ন কিলোওয়াট। আর ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে উৎপাদন করেছে ১৭ হাজার ৭’শ ৬২ মিলিয়ন কিলোয়াট।  

আরও অনেক উদ্বেগজনক তথ্য উঠেছে এসেছে বিইআরসির গণশুনানিতে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এসআই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।