তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে আফ্রিকার মালিতে নিহত হওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল নেত্রকোনার জাকিরুলের মা জোস্না আক্তার (৬৫)। এরই মধ্যে জেনে গেছেন মাটিতে পুঁতে রাখা আইইডি’র (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণে তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া জাকিরুলের বিভৎস ছবি দেখে ভয়ে আঁতকে উঠছেন সবাই। শান্তনা দিতে এসে মোবাইল ফোনে ভয়াবহ এ দৃশ্য দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছেন প্রতিবেশীরা।
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জারিয়া ইউনিয়ন। সেখানকার রেলস্টেশন সংলগ্ন জারিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে জাকিরুলের পরিবারের বসবাস। ওখানে থাকেন, বৃদ্ধা মা জোস্না আক্তার, ৩০ বছর ধরে পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত বাবা ছফির উদ্দিন, স্ত্রী তামান্না সরকার আর ২ সন্তান তৌফিকুল তাজদিদ (৬) ও মঈনুল আলম (৫)।
জাকিরুল শিক্ষা জীবনে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। পরে কিছুদিন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র্যাব) কর্মরত থেকে পুনরায় সেনাবাহিনীতে আসেন। পরিবারে ৩ ভাই আর ২ বোনের মধ্যে তিনিই ছোট। জাকিরুলের বড় বোন রুনা লায়লা।
তিনি বাংলানিউকে বলেন, সবসময় আমার ভাই বলতো আমি মরে গেলেও আম্মা আর তোদের বউমা’র ক্ষতি হবে না। আমার যতটুকুই অর্থ সম্পদ হবে সব ওদের নামেই থাকবে। তাছাড়া আমি কিছু না দিতে পারলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওদের পাশে নিশ্চয় থাকবেন।
অপরদিকে কান্না থামিয়ে জাকিরুলের স্ত্রী তামান্না বলেন, ‘আমার সন্তানরা আর কোনোদিন বাবা বলে ডাকতে পারবে না। আর ওর বাবাও সন্তানদের নাম ধরে ডাকবে না, স্নেহ আদরে বুকে জড়িয়ে নিবে না।
তিনি জানান, মৃত্যুর আগের দিন শনিবার বিকেলে ইমো'তে জাকিরুলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তামান্না। তবে নেটওয়ার্ক সমস্যায় কথা শেষ করতে পারেননি। কথার মধ্যে জানতে পেরেছিলেন মিশন ভালোভাবে শেষ হয়েছে। এখন ক্যাম্পে ফেরার পালা। কিন্তু ভাগ্য জাকিরুলকে জীবিত ফিরতে দিলো না!
বড়ভাই নাজমুল আলম সরকার বলেন, ভাই তো আর ফিরে আসবে না, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এখন আমাদের একটাই চাওয়া তিনি যেন ভাইয়ের সন্তানদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেন। সেক্ষেত্রে ভাইয়ের স্ত্রীকেও যদি যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন তবে আমার ভাতিজাদের মঙ্গল হবে।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণে বাংলাদেশি সেনাবাহিনীর তিনজন নিহত ও চারজন আহত হন।
নিহতের মধ্যে জাকিরুল ছাড়াও রয়েছে সার্জেন্ট আলতাফ, ইএমই (দিনাজপুর) ও সৈনিক মনোয়ার, ইস্ট বেঙ্গল (বরিশাল)। আর আহতরা হলেন- মেজর জাদিদ, পদাতিক (ঢাকা), কর্পোরাল মহিম, পদাতিক (নোয়াখালী), সৈনিক সবুজ, পদাতিক (নওগাঁ) এবং সৈনিক সরোয়ার, পদাতিক (যশোর)।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
আরএ