এবারও রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ও সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুই দিনব্যাপী এই ঢাক-ঢোলের হাট বসেছে কটিয়াদী পশ্চিম বাজারের প্রেসক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা অফিস সংলগ্ন নির্ধারিত জায়গায়। ঐতিহ্যবাহী এই হাটে দূর দূরান্ত থেকে ঢাক, ঢোল, সানাই আর বংশীবাদকরা তাদের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে চলে আসেন।
পূজামণ্ডপের আয়োজকরাও এই হাট থেকে তাদের পছন্দমত বাদ্যযন্ত্রীদেরকে পূজার জন্য বায়না করে নিয়ে যান। বাদ্যযন্ত্রীরা পূজার ৬ষ্ঠি থেকে দশমীর বিসর্জন পর্যন্ত মণ্ডপগুলোকে করে তুলবেন উৎসবমুখর। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাজনা আর সুরের মূর্ছনায় আনন্দময় হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। এসময় পূজারীরাও নিত্য নতুন সাজে দেবীর অর্চনায় নিমগ্ন হয়ে পড়েন।
এই ঢাক-ঢোলের হাটের রয়েছে একটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। জনশ্রুতি আছে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় সর্বপ্রথম তাঁর প্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন শুরু করেন। উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে ভোগবেতাল গ্রামে ছিল রাজার রাজপ্রাসাদ। পূজা উপলক্ষে ঢাক, ঢোল বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীদের আগমনের জন্য সুদুর মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর পরগনার বিভিন্ন স্থানে বার্তা পাঠানো হতো। সে সময় নৌপথে বাদ্যযন্ত্রীরা কটিয়াদী-মঠখোলো সড়কের পাশে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাট নামক স্থানে পূজার দুই দিন আগে এসে পৌঁছাতেন।
পরবর্তী সময়ে মসুয়া গ্রামে বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরিকিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িতে মহা ধুমধামে পূজা শুরু হয়। সেই সঙ্গে চলে পূজায় বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা। দিনদিন পূজারী ও আয়োজকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায়ে হাটের স্থান নির্ধারণ নিয়ে আয়োজকদের মধ্যে বিরোধ আর দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে অবশেষে যাত্রাঘাট থেকে স্থান পরিবর্তিত হয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরবর্তী আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরবর্তী কটিয়াদী পুরানবাজার এলাকায় এই হাট চলতে থাকে। সেই থেকে আজ অবধি এই হাটে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বিপুল সংখ্যক বাদ্যযন্ত্রীর আগমনে সরব হয় ওঠে এই হাট।
ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে আসা ঢাকী আনন্দ দাস বাংলনিউজকে জানান, তারা গত রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ৭ জনের একটি দল এসেছেন। পূজার আয়োজকরা আসছেন বায়নার দরকষাকষি চলছে।
এছাড়াও মুন্সিগঞ্জ থেকে আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে কটিয়াদী এসেছেন ঢাকী খোকন দাস ও তার দল । তিনি বাংলানিউজকে জানান, ভাল দামেই তাদেরকে বায়না করা হবে এমনটাই আশা করছেন।
কটিয়াদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান কেয়া বাংলানিউজকে জানান, এ হাটে আগত সবাই নির্বিঘ্নে কেনাবেচা করতে পারবেন। ইতোমধ্যে ঢাকীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সহ যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব আইন উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ৫শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোলের হাট কটিয়াদী উপজেলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে কটিয়াদী পুরাতন বাজারে স্থান নির্ধারণ করে ৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই হাটের শেড নির্মাণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এনআইকে/জেএম