ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নির্বিচার মাছ আহরণে ঐতিহ্য হারাচ্ছে বাঘিয়ার বিল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
নির্বিচার মাছ আহরণে ঐতিহ্য হারাচ্ছে বাঘিয়ার বিল নির্বিচার প্রাণিজ সম্পদ আহরণে ঐতিহ্য হারাচ্ছে বাঘিয়ার বিল। ছবি: বাংলানিউজ

মাদারীপুর: অপরিকল্পিত ও নির্বিচার মৎস্য ও প্রাণিজ সম্পদ আহরণ, আশেপাশের ছোট ছোট নালা ভরাট করে বসত-বাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণসহ নানা কারণে হুমকির মুখে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী বাঘিয়ার বিলের জীববৈচিত্র্য।

মাদারীপুর জেলার রাজৈর ও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কমপক্ষে ৫ হাজার হেক্টরের প্রাকৃতিক জলাভূমি বাঘিয়ার বিল। সুবিশাল এ বিলের মৎস্যসম্পদ আহরণ করে বেঁচে আছেন প্রায় ২৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।

ফলে এটির সম্পদ সঙ্কুচিত হলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে উদ্বিগ্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও স্থানীয় সচেতন মহল।

সরেজমিনে জানা গেছে, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে ভরপুর পুরো বিলটিতে বর্ষা মৌসুমে থই থই করে স্বচ্ছ জল। আর শুকনো মৌসুমে অধিকাংশ স্থানজুড়ে থাকে ফসলের ক্ষেত।

তবে পুরোপুরি শুকিয়ে যায় না বিলটি। শুকনো মৌসুমে চারপাশ শুকিয়ে এলেও কেন্দ্রভূমিতে থাকে অগভীর পানি।

স্থানীয় প্রবীণেরা জানান, বিল এলাকায় এক সময় কোনো জনবসতি ছিল না। মাদারীপুর, কোটালীপাড়াসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলার মৎস্যজীবীরা মৌসুমে বিলে এসে মাছ শিকার করতেন। এই মাছসহ প্রাণিজ সম্পদের কদর ছিল বৃহত্তর ফরিদপুরসহ দেশজুড়ে। স্থানীয়ভাবে দেশি মাছের চাহিদা মেটাতেও সক্ষম ছিল এই বাঘিয়ার বিল।

এলাকাবাসী জানান, সপ্তদশ শতকের দিকে বাঘিয়ার বিল এলাকায় জনবসতি শুরু হতে থাকে। ধাপ মাটি তুলে ভিটে তৈরি করে তার ওপরে বসতি স্থাপিত হয়।

বাঘিয়ার বিল অঞ্চলে মূলত রাজৈরের আমগ্রাম, রাজৈর ও কদমবাড়ী এবং কোটালীপাড়ার কলাবাড়ী, রাধাগঞ্জ ও সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রামের অবস্থান এবং প্রায় ৩৫ হাজার লোকের বসবাস। বিলের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও আউশ-আমন ধানের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন এসব মানুষ।

ধীরে ধীরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জনবসতির সম্প্রসারণ, বিল এলাকার খাল-নালা ভরাট হয়ে যাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই বৃহৎ জলাভূমির ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র্য ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশও।

জেলেরা জানান, দেশি প্রজাতির মাছের মধ্যে এই বিলে বর্তমানে তেমন একটা দেখা যায় না শোল, গজার, টাকি, পুঁটি, খলিসা, পাবদা, বাইম, রয়না, শিং, মাগুর, বোয়াল, চিতল, আইড়, রুই, কাতল, টেংড়া ইত্যাদি। জলজ উদ্ভিদ এবং কাঁকড়া, কুঁচিয়া ও কচ্ছপ জাতীয় অন্যান্য প্রাণিসম্পদও কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। নির্বিচার নিধনে হারিয়ে যেতে বসেছে শামুক-ঝিনুকও।

তাদের জালে আগের মতো আর এ সকল প্রাণিজ ও মৎস্য সম্পদ ধরা পড়ে না বলেও জানান জেলেরা।

অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিলের মাঝ দিয়ে জনসংখ্যা ও জনবসতি বেড়ে যাওয়ায় তৈরি করা হয়েছে অনেক রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট। ফলে বিলের মধ্য দিয়ে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরতে না পেরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

অনেক প্রাণিজ ও  মৎস্য সম্পদই এখন আর ধরা পড়ে না জেলেদের জালে।  ছবি: বাংলানিউজস্থানীয় শিক্ষক মাসুদুর রহমান বলেন, বিল বাঘিয়া এলাকায় এক সময় মৎস্য সম্পদের প্রাচুর্য্য ছাড়াও সারা বছরই দেশি-বিদেশি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত ছিল। শীত মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথি পাখি আসতো এই বিলে, যা এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না।

এ অঞ্চলে কর্মরত পরিবেশবাদী সংস্থা বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (বিসিএএস) একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন, ভরাট করা খাল-নালাগুলো পুনঃখনন, অবৈধ কারেণ্ট জালসহ নির্বিচারে মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা বহাল ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাঘিয়ার বিলের ঐতিহ্য অনেকটা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনা পারভীন বলেন, প্রাকৃতিক এই জলাশয়ের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে অবশ্যই কাজ করা হবে। মৎস্য সম্পদ যেন টিকে থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি রাজৈর উপজেলায় অল্প কিছুদিন এসেছি। বিলটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো’।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad