ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অসামাজিক কার্যকলাপে দর্শনার্থী সংকটে রাম সাগর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
অসামাজিক কার্যকলাপে দর্শনার্থী সংকটে রাম সাগর রামসাগরে অসামাজিক কার্যকলাপ। ছবি: মাহিদুল ইসলাম রিপন

দিনাজপুর: দিনাজপুরের রাম সাগর একটি ঐতিহাসিক দীঘি। আর জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পর থেকে রামসাগর দীঘি পরিণত হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রে। বছরভরই এখানে ঘুরতে আসে দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক। কিন্তু নিরাপত্তা সংকটের পাশাপাশি অসামাজিক কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়ায় পর্যটকরা ইদানিং বিশাল এই দীঘি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

তারওপর এলাকার কিছু মাদকাসক্ত রামসাগর দীঘিকে করে তুলেছে অপরাধের অভয়ারণ্য। তারা উদ্যানে বেড়াতে আসা প্রেমিক যুগলের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ অর্থ, অলংকার আর মোবাইল হ্যান্ডসেট।

এ কারণে ঐতিহাসিক এ স্থানের সুনাম ও ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

মো. শামীম রেজা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, ঐতিহাসিক রাম সাগরের সুনাম নষ্ট করতে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে দর্শনার্থী সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়োজিত থাকায় নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও দর্শনার্থী সংকট রয়েই গেছে। এর কারণ অসামাজিক কার্যকলাপ।

রামসাগর জাতীয় উদ্যানের একমাত্র শিশু পার্কটি অসামাজিক কার্যকলাপের নিরাপদ স্থান। পার্কের ভেতরের পশ্চিম অংশে মাটির টিলার নিচে চারপাশে গভীর জঙ্গল। এই জঙ্গলের মধ্যে বেশ কয়েকটি ইট-সিমেন্টের বেঞ্চ। এ স্থানেই অসামাজিক কার্যকলাপ হয় বেশী। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রেমের নামে এখানে অশ্লীলতায় মেতে ওঠে।

রামসাগরে শিশু পার্কের এসব ঝোপঝাড়ে হয় অসামাজিক কার্যকলাপ।  ছবি: মাহিদুল ইসলাম রিপন শিশু পার্কটিতে জনপ্রতি টিকিটের মূল্য ১০ টাকা হলেও অবৈধ কাজে আসা ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে পার্ক কর্তৃপক্ষ নেয় ৫০টাকা। পার্কটিতে অসামাজিক কাজে লিপ্ত ছেলে-মেয়েরা অনেক সময় মাদকাসক্তদের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়।

রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর এলাকা থেকে রাম সাগরে বেড়াতে আসা মো. ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রাম সাগর জাতীয় উদ্যানে সপরিবারে বেড়াতে এসেছি। ইতিপূর্বেও একাধিক বার এসেছি। এর আগে এসে নিরাপত্তার অভাব মনে হলেও এবার তা মনে হচ্ছে না। নিরাপত্তা কাজে সার্বক্ষণিক ট্যুরিস্ট পুলিশ লক্ষ্য করা গেছে। তবে শিশু পার্কটিতে সপরিবারে যাওয়ার মতো পরিবেশ নেই। নামে শিশু পার্ক হলেও ওটা অবাধ প্রেমের আড্ডায় খানায় পরিণত হয়েছে। এবার শিশু পার্কটিতে ঢুকেই বোকা হয়ে গেছি। এমন পরিস্থিতি থাকলে রামসাগরে দর্শনার্থী আসবে না।

শিশু পার্কের টিকিট সংগ্রহকারী মো. বেলাল আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, বছরে এক বার রাম সাগর শিশু পার্কের ডাক হয়ে থাকে। গত চার বছর ধরে এই পার্কটি পরিচালনা করে আসছেন তিনি।

রামসাগরে শিশু পার্কের এসব ঝোপঝাড়ে হয় অসামাজিক কার্যকলাপ।  ছবি: মাহিদুল ইসলাম রিপন বাংলানিউজকে বেলাল বলেন, পার্কটি যে অবস্থায় পেয়েছি সেই অবস্থাতেই আছে। কোথাও হাত দিতে গেলে বন বিভাগের অনুমতি লাগবে। দর্শনার্থীরা টিকিট সংগ্রহ করে পার্কে প্রবেশ করে। তবে মাঝে মধ্যে ঝোপ-জঙ্গলে অসামাজিক কার্যকলাপ নজরে পড়লে আমরা দ্রুত প্রদক্ষেপ নেই। সব সময় তো আর নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। আর বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করা সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে রাম সাগর জাতীয় উদ্যানের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুস সালাম তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, বন বিভাগের কাজই হচ্ছে প্রাকৃতিক গাছপালা, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করা। তবে পরিচর্যা ও পরিবেশগত সব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করবেন ইজারাদার। যা চুক্তিপত্রের শর্তাবলীতেই উল্লেখ রয়েছে। পার্কের ভেতরে অসামাজিক কাজ হলে তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা রয়েছে চুক্তিপত্রে। পার্কটি বন বিভাগের অধীনে থাকলেও সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে ইজারাদার। তবে ইজারাদার বা পার্ক সমন্ধে কারো কোন অভিযোগ থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছেও যে কেউ অভিযোগ দিতে পারে।

বাংলাদেশ সময় : ১৫০০ ঘণ্টা,  সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এমসি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।