ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বায়না আর মিটবে না অবুঝ শিশুর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
বায়না আর মিটবে না অবুঝ শিশুর মনোয়ারের স্ত্রী ও ৭ বছরের সন্তান। ছবি:মুশফিক সৌরভ

বরিশাল: বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে পড়াশুনা করে ২০০৩ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন মনোয়ার। কিন্তু চাকরিতে যাওয়ার আগেই পুলিশ সদস্য বাবা রফিকুল ইসলাম ও বড় ভাই আনোয়ার হোসেনকে চিরদিনের জন্য হারান তিনি। তাই অনেকটা পরিবারের হাল ধরতেই যেন তার সেনাবাহিনীতে যোগদান।

আর আজ তাকেই হারিয়ে ফেলার বেদনায় শোকের মাতম চলছে তার বাড়িতে। ৭ বছরের ইলমুন ও দেড় বছরের তাসনিম বাবা হারানোর বেদনা এখনো ততোটা উপলব্ধি করতে না পারলেও মা রওশন আরা বেগম আর স্ত্রী ইভা আক্তার যেন শোকে পাথর।

কোন শান্তনা তাদের আশ্বস্ত করতে পারছে না।

মনোয়ারের দেড় বছরের অবুধ সন্তান।                                          ছবি: মুশফিক সৌরভরোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) আফ্রিকার দেশ মালিতে দায়িত্ব পালন শেষে ক্যাম্পে ফেরার পথে সন্ত্রাসী হামলায় ৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। যাদের মধ্যে সৈনিক মো. মনোয়ার হোসেন (৩২) একজন। মনোয়ারের গ্রামের বাড়ি বরিশালের চন্দ্রমোহনে হলেও বর্তমানে নগরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের হরিপাশা এলাকায় একখণ্ড জমির ওপর তার পরিবারের বাস।

সেখানেই থাকেন মনোয়ারের মা, স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান। ছোট ভাই রবিউলের পুলিশে চাকরি হওয়ার সুবাদে তিনি খুলনায় ট্রেনিং এ রয়েছেন। আর সবার বড় বোন জোহরা বিয়ের পর চলে গেছেন স্বামীর সংসারে।

নিহত সেনা সদস্যের মামা আতিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ১০ বছর আগে চন্দ্রমোহন এলাকার মো. কবির হাওলাদারের মেয়ে ইভা আক্তারকে বিয়ে করেন মনোয়ার। চাকরি নেয়ার পর ১০ বছর আগে নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর এলাকায় এক খণ্ড জমি কিনে টিনের ঘর তৈরি করে সেখানে পরিবার-পরিজন রেখে যশোর ক্যান্টনমেন্টে সৈনিকের চাকরি করছিলেন মনোয়ার। বাবা না থাকায় বৃদ্ধা মাকেও নিজের বাসায় এনে রাখেন তিনি। এরই মধ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে যাওয়ার সুযোগ হলে গত ৩০ মে (২ রমজান) মিশনে যান মনোয়ার। মিশনের যাওয়ার পর ফোনে স্ত্রী, সন্তান, মাসহ নিকট আত্মীয়দের খোঁজ খবর নিয়মিতই নিতেন তিনি।    

বিলামরত মনোয়ারের মা।  ছবি: মুশফিক সৌরভ।  স্ত্রী ইভা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, এক বছরের জন্য শান্তিরক্ষা মিশনে মালি যাওয়া মনোয়ারের স্বপ্ন ছিলো সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করার। সব শেষ শনিবার বাবার সাথে ফোনে কথা বলার সময় আঙ্গুর, আপেল আর আম নিয়ে আসার বায়না ধরেছিলো বড় মেয়ে ইলমুন। কিন্তু বাবা আসবে, তবে আঙ্গুর আপেল নিয়ে নয়, নিজের নিথর দেহটার শেষ দর্শন দিতে আসবে।

৭ বছরের শিশু ইলমুন স্থানীয় এক মাদ্রাসায় পড়ে। দেড় বছরের শিশুটি অসুস্থ হওয়ায় তার চিকিৎসা চলছে। রোববার রাতের লঞ্চে শিশু সন্তানকে নিয়ে সেনা হাসপাতালে যাওয়ার প্রস্তুতিও নেয়া ছিলো ইভা আক্তারের। যা স্বামী মনোয়ার আগে থেকেই বলে রেখেছিলেন।

কিন্তু রোববার বিকেলে সেনা সদর দপ্তরের এক মোবাইল মেসেজে সব কিছু এলামেলো হয়ে যায় সৈনিক মনোয়ারের পরিবারের। তারা জানতে পারে, মনোয়ারের মৃত্যুর খবর।

শান্তি রক্ষা মিশনে মনোয়ার।  প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, মনোয়ার খুবই মিশুক এবং শান্ত প্রকৃতির ছিলেন। অল্পতেই মানুষের মন জয় করতে পারতেন। তার মৃত্যুর খবরে বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন তারাও।  

সরকারের প্রতি মনোয়ার হোসেনের মরদেহ দ্রুত দেশে এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন তার শ্বশুর কবির হাওলাদার।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।