ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিশুদ্ধ পানির কষ্টে রোহিঙ্গারা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
 বিশুদ্ধ পানির কষ্টে রোহিঙ্গারা! রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করছে এক শিশু - ছবি: সোহেল সরওয়ার

টেকনাফ ও উখিয়া শরণার্থী ক্যাম্প ঘুরে: ‘আমাদের পানির কষ্ট অনেক। খাওয়ার স্বাস্থ্যকর পানি নাই। কয়েকদিন ধরে গোসল করতে পারি না। গ্রামের স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে পানি আনতে গেলে দিতে চায় না।তাড়িয়ে দেয়। ভাতের চেয়েও পানির কষ্ট বেশি হয়েছে। ঘরে ১১টা সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’

টেকনাফের হোয়াক্যিং ইউনিয়নের রইক্ষ্যং শরণার্থী ক্যাম্পের ত্রিপল টানানো ঘরের সামনে কথাগুলো বলছিলেন কায়েসা বেগম। মিয়ানমার আর্মির অত্যাচারে পালিয়ে আসা এ নারী জ‍ানালেন, সব কষ্ট সহ্য করা যায় পানির কষ্ট সহ্য করা যায় না।



মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা থেকে বেঁচে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলামানরা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্গম অঞ্চলে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দিন কাটছে দুর্ভোগ-দুর্দশায়। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি খাবার পানির তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে কষ্টে দিন কাটছে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু সবার। এতে করে পানিবাহিত অনেক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান নেওয়া শরণার্থীরা।

সম্প্রতি আসা টেকনাফের রইক্ষ্যং, বালুখালি ও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঘুরে দেখা যায় সীমাহীন দুর্ভোগের চিত্র। দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে খ‍াবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাদের। আশ্রয় স্থানের ত্রিপলে তাব‍ু থেকে গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির পানি ধরে রাখছে, কেউ কেউ আশপাশের ডোবার পানি খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করছে। লোকালয়ে যাওয়া বাধা নিষেধ থাকায় পানি আনতে পারছেন না তারা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প- ছবি: সোহেল সরওয়ার মংডুর কোয়ারবিল এলাকা থেকে সব কিছু হারিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে আলেয়া বেগম। তিনি বলেছিলেন, ‘মগেরা ‌স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। পরে ঘরে আগুন লাগিয়ে দিলে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসেছি। শ্বশুর শাশুড়ি, দেবর আর নিজের ৮ সন্তান ও দেবরের ৬ সন্তান নিয়ে ১৯ জন পরিবারের সদস্য। ত্রাণের খাবারে এতো বড় সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তার উপর ভয়াবহ পানির কষ্ট। খাবার পানি ও গোসলের পানির অভাবে অসুখে পড়েছে সন্তানরা। ’

রইক্ষ্যং ক্যাম্পে ১৯ সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত কোনো পানির লাইনের ব্যবস্থা দেখা যায়নি। কোনো কোনো ক্যাম্পে পানির লাইনের ব্যবস্থা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ঘুমদুম সীমান্ত ক্যাম্পে প্রায় লাখ খানেক শরণার্থীর জন্য দুই-তিনটা টিবওয়েল দেখা যায়। সেখানে এক সঙ্গে ছেলেরা গোসল করছে। খাবার পানি সংগ্রহ করছে শিশুরা।

বিভিন্ন বেসরক‍ারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শরণার্থীদের জন্য পানির ট্যাংক বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্রাকে করে বোতল জাত  পানি সরবরাহ করছে। যা প্রয়োজনের চেয়ে একবারেই কম বলে জানান রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প- ছবি: সোহেল সরওয়ার বালুখালী ক্যাম্পে দেখা যায়, মহিলা ও শিশুরা খাওয়ার জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখছে। যাতে প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করতে পারেন। শিশুরা দুরদুরান্ত থেকে কলসে করে খাবার পানি সংগ্রহ করে পাহাড় বেয়ে উঠছে।

শরণার্থীদের দাবি, ত্রাণের খাবারের সঙ্গে যেন পানির ব্যবস্থা করা হয়। সরচেয়ে ভালো হয়, শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে স্থায়ীভাবে পানির লাইনের ব্যবস্থা করে দেওয়া।

মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সহিংসতায় বাংলাদেশে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করেছে বলছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশ সরকারের হিসেবে সে সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়েছে। শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষ ভুগছে নানা সংক্রামক ব্যধিতে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প- ছবি: সোহেল সরওয়ার কক্সবাজার সদর উপজেলা মেডিকেল অফিসার ডা.জাহিদুল মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবাটা জরুরি। স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য বিশুদ্ধ পানির বিকল্প নেই। এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকে আসা শিশুরা জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়ার সঙ্গে পানিবাহিত রোগ কলেরা, ডায়রিয়া, জন্ডিস ও চর্মরোগও ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয় প্রসাশন রোহিঙ্গাদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গোসলের পানির ব্যবস্থা করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এমসি/বিএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।