ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শেখ হাসিনার কবর রচনাকারী সেই মোকছেদ আরও বেপরোয়া!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
শেখ হাসিনার কবর রচনাকারী সেই মোকছেদ আরও বেপরোয়া! সেসময় সাতক্ষীরায় রচনা করা প্রতীকী কবর/ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: মোকছেদ গাজী (৫০)। সাতক্ষীরার দেবহাটা থানার এক মূর্তিমান আতংকের নাম। মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় কেন্দ্র করে তাণ্ডবের অন্যতম নেতা। তৎকালীন সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে সশস্ত্র মিছিল, গাছ কেটে-রাস্তা খুঁড়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা প্রচেষ্টার অগ্রনায়ক মোকছেদের নাম শুনলে আঁতকে ওঠে মানুষ। 

শুধু সহিংসতায় নেতৃত্ব দেওয়াই নয়, পুষ্পকাটি গ্রামের কেয়ামদ্দীন গাজীর ছেলে মোকছেদ গাজী সে সময় সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের দেবহাটা উপজেলার পুষ্পকাটিতে প্রকাশ্যে রচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কবর।  

পরবর্তীতে পরিস্থিতি শান্ত হলেও শান্ত হননি মোকছেদ।

ভোল পাল্টে দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার শেল্টারে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।  

তার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ এলাকাবাসী। সেসময় সরকারি গাছ কাটা ও নাশকতা মামলার অন্যতম এ আসামি বিভক্ত করছেন দলকে।

হুমকি-ধামকি, চাঁদাবাজি, জমি দখলেই শেষ নয়, স্থানীয় আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনেও প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না কেউ। অথচ বিএনপি-জামায়াত সমর্থক মোকছেদ জীবন বাঁচাতে ভোল পাল্টে আসেন আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায়। আর দলের এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী নেতা তাকে দিচ্ছেন শেল্টার। মোকছেদকে শেল্টার দেওয়া যে নিজের ডাকে কুড়াল মারার মতো সিদ্ধান্ত ছিল তার সবশেষ প্রমাণ আওয়ামী লীগের দুই কর্মীকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোপানো।

গত ২১ সেপ্টেম্বর তার হামলার শিকার হয়েছে পুষ্পকাটি গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম নামে আওয়ামী লীগের দুই কর্মী। তাদের উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন মোকছেদ ও তার লোকজন। এদের মধ্যে রফিকুল ইসলামের অবস্থা আশংকাজনক। মাথায় গভীর ক্ষত নিয়ে বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।  

এ ঘটনায় মোকছেদ গাজীসহ বিএনপি-জামায়াতের নয় ক্যাডারের বিরুদ্ধে দেবহাটা থানায় মামলা রেকর্ড হয়েছে।  

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- পুষ্পকাটির জলিল গাজীর ছেলে শাহাদাত হোসেন, মৃত জালাল সরদারের ছেলে তরিকুল, কেয়ামদ্দীন গাজীর ছেলে হাকিম, শহিদুলের ছেলে শহীদ, আব্দুল খালেকের ছেলে ফরো, মোকছেদের ছেলে তুহিন, মৃত ওহাব সরদারের ছেলে রব্বানী ও মৃত জালাল সরদারের ছেলে শরিফুল।  

এদিকে, আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর পরিকল্পিত হামলা, মারধর ও হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখমের ঘটনার পরপরই বিএনপি-জামায়তের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবিতে পুষ্পকাটিতে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশসহ সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে দেবহাটা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করালেও এখনো গ্রেফতার হয়নি দুর্ধর্ষ এ সন্ত্রাসীরা।  

স্থানীয় দায়িত্বশীল সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে দেবহাটার কুলিয়া ইউনিয়নের পুষ্পকাটি, বহেরা, খাসখামার, গুরুগ্রাম, তালবাড়িয়া, সদর উপজেলার শ্রীরামপুর, ভোমরা ও আলিপুর এলাকাজুড়ে যে ভয়াবহ তাণ্ডবলীলা চলেছিল তার নেতৃত্বে ছিল মোকছেদ।  

অন্তত আটটি সহিংসতা মামলার আসামি মোকছেদ একবার গ্রেফতার হলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে ভোল পাল্টে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবর রহমানের শেল্টারে ফের বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ রয়েছে।  

উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুলও তাকে বিভিন্ন সময় মোকছেদের নাশকতা মামলা ও গাছ কাটা মামলার আসামিদের মারধর, জমি দখলে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন।  

অভিযোগ রয়েছে আরেক আওয়ামী লীগ নেতা কুদ্দুসও মোকছেদকে নিজের স্বার্থ হাসিলে কাজে লাগিয়েছেন।

এ ব্যাপারে দেবহাটা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নুর বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৩ সালের পর মোকছেদ গাজী পুষ্পকাটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের কবর খুঁড়েছিল। সে এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।  

এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।  

তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবর রহমানের অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, আমি তো জানতাম মোকছেদ আসাদুল চেয়ারম্যানের লোক। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাকে চিনিও না। একবার একটা অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিছিলো, আমরা কেউই যাইনি। এটা মিথ্যা তথ্য।  

তিনি নিজেকে ২০১৩ সালের সহিংসতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উল্লেখ করে বলেন, আমার বাড়ি জামায়াত-শিবির পুড়িয়ে দিয়েছিল। আমাকে ৫ বার হত্যার চেষ্টা করেছে। আমি ওদের শেল্টার দেবো কেন? 

এ প্রসঙ্গে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী কামাল বাংলানিউজকে বলেন, পুষ্পকাটির ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।