ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ভুয়া ‘সিডিসি’র (কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট) মাধ্যমে প্রতিদিনই এভাবে চলছে মানবপাচার!
সংঘবদ্ধ একটি পাচারকারী চক্র আকর্ষণীয় বেতনসহ নানা সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিদেশে পাচার করছে অদক্ষ শ্রমিকদের। আর দালালদের খপ্পরে পড়ে এভাবে সর্বশান্ত হচ্ছে অজপাড়াগাঁয়ের নিরীহ আর অক্ষর জ্ঞানহীন সাধারণ মানুষ।
নাবিক বেশে এভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ হয়ে ইরানের তেহরানে পাচারের পথে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন দিনমজুর প্রকাশ মিয়া (২২), তাহির আলী (২৩) ও রিপন মিয়া (২৩)।
জনপ্রতি ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে নাবিক সাজিয়ে তাদের পাচার করা হচ্ছিলো বলে জানিয়েছেন তারা।
আটক প্রকাশ মিয়া হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার কুর্শাখাগাউড়া গ্রামের ফজল মিয়ার ছেলে। তাহির আলীর বাবার নাম মৃত আব্দুল গনি। তিনিও একই জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর গ্রামের বাসিন্দা।
আর রিপন মিয়া হাওরাঞ্চল সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার মধুরাপুর গ্রামের তাজুল হকের ছেলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাসপোর্টের সঙ্গে মানব পাচারকারী চক্র তাদের হাতে ‘সিডিসি’সহ ভুয়া কাগজপত্র ধরিয়ে দিয়ে নাবিক পরিচয়ে পাচারের চেষ্টা করছিলো। ‘সিডিসি’ হচ্ছে কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট, যা একজন নাবিক বা মেরিন অফিসারের পরিচয়পত্র।
যেখানে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন স্ট্যান্ডার্ডস অব ট্রেনিং সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ওয়াচ কিপিং ফর সিফেয়ারস (SCTW) শ্রমিকের তথ্যাদিসহ নাবিক হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি উল্লেখ থাকে।
‘সিডিসি’কে অনেকে বলে থাকেন মেরিন পাসপোর্ট। যা দেখতে পাসপোর্টের মতোই। নাবিক, ক্রু বা ক্যাপ্টেন বানিজ্যিক জাহাজে গমনের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা ছাড়াই এই সিডিসি প্রদর্শন করে ইমিগ্রেশন চ্যানেল অতিক্রম করতে পারেন।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত নৌ পরিবহন অধিদফতরের সরকারি সমুদ্র পরিবহন অফিস থেকে এই সিডিসি সরবরাহ করা হয়।
এর মধ্যে প্রকাশ মিয়ার যে সিডিসি নম্বরের বিপরীতে পাচার করা হচ্ছিলো তার প্রকৃত নাম কাউসার মাহমুদ রাজু। তিনি বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দক্ষিণ হালিশহরের বাসিন্দা। অপর দু’জনের সিডিসি নম্বরের অস্থিত্বই নেই, ভুয়া।
আটকরা বাংলানিউজকে জানান, তারা জনপ্রতি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ইরানে যাচ্ছিলেন। তেহরান পৌঁছালেই তাদের সেখানে গ্রহণ করার কথা।
বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মুকিত হাসান খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে থেকেই আমাদের কাছে তথ্য ছিলো গ্রামের কিছু অক্ষরজ্ঞান, অদক্ষ সাধারণ মানুষকে নাবিক সাজিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক এয়ারলাইন্স এয়ার অ্যারাবিয়া করে পাচার করা হবে। তবে ওই এয়ারলাইন্সের কাউন্টার থেকে বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করার আগেই আমরা তাদের ধরে ফেলি। ’
মানব পাচারকারীরা কৌশল বদল করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে আমরাও অনেক সতর্ক। ন্যূনতম সন্দেহ হলেও ছাড় নেই। যে কৌশলই নেওয়া হোক না কেন? ধরা পড়তেই হবে।
বাংলঅদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
এমএ/