ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যানজটে বড় কালপ্রিট ব্যক্তিগত গাড়ি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
যানজটে বড় কালপ্রিট ব্যক্তিগত গাড়ি! সাত রাস্তা থেকে রমনা মুখী ফ্লাইওভার, ছবি: সুমন শেখ

ঢাকা: পরিবারের অথবা নিজের ব্যক্তিগত শখ পূরণের জন্য কিংবা পথের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে মানুষ প্রতিনিয়ত ঝুঁকছে ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার দিকে। হোক সেটা প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস বা জিপ। প্রতিদিন ঢাকা শহরে এই তিন ধরনের গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে ৮৯টি করে!

আবার রাজধানীতে বসবাসকারী বিত্তবানদের এক ধরনের শখ হয়ে দাড়িয়েছে নতুন নতুন ব্রান্ডের গাড়ি কেনা। সুযোগ বুঝে তারা হালফিল মডেলের গাড়ি কিনতে ছোটেন ‘কার বাজারে’।

তবে উচ্চবিত্তরাই শুধু নয়, বর্তমানে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যেও গাড়ি কেনার প্রবণতা বাড়ছে। অফিস যাওয়া-আসার সময় গণপরিবহন না পাওয়া অথবা যানজটের শহরে একটু আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য ক্রমেই বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ির ক্রেতা। ফলে ঢাকা শহরে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপও। যা এখন অসহনীয় পর্যায়ে পৌছেঁ গেছে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্যমতে, ২০১৭ সালের প্রথম ৮ মাসে কেবল ঢাকা শহরেই নিবন্ধিত ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ২১হাজার ২৪৭টি।

এ হিসেবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮৯টি নতুন গাড়ি যোগ হয়েছে/হচ্ছে যানজটের এই শহরে।

বিআরটিএ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত রাজধানী সব ধরনের গাড়ি নিবন্ধন হয়েছে ৯১ হাজার ৩০৫টি। এর মধ্যে ছোটবড় মিলে প্রায় ২০ ধরনের গাড়ি রয়েছে। কুড়িল বিশ্বরোড, ছবি: সুমন শেখএদিকে এই ৮ মাসে নতুন নিবন্ধিত এ সকল গাড়ির মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবে পরিচিত জিপ (হার্ড/ সফ্ট) গাড়ি ৩ হাজার ৩৬৬টি, প্রাইভেট প্যাসেঞ্জার কার ১৪ হাজার ৩৭৩টি এবং মাইক্রোবাস নিবন্ধিত হয়েছে ৩ হাজার ৫০৮টি।

এছাড়া বিগত ৬ বছরের পরিসংখ্যান থেকেও দেখা গেছে প্রায় একই রকম চিত্র। ২০১১ সালে ঢাকা শহরে নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি(জিপ, মাইক্রো, কার) যোগ হয়েছে ১৬ হাজার ৬৬১টি। ২০১২ সালে ১২ হাজার ৭১টি। ২০১৩ সালে ১২ হাজার ৫৬৫টি। ২০১৪ সালে ১৮ হাজার ৩৯৬টি। ২০১৫ সালে ২৬ হাজার ১শটি এবং ২০১৬ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৩৯৬টিতে।

ব্যক্তিগত এসব গাড়ি ঢাকা শহরের প্রতিটি সড়কের অধিকাংশ জায়গা দখল করে রাখছে। অথচ এসব গাড়িতে গড়ে মাত্র ১/২জন যাত্রী থাকে।

জানা গেছে, সড়কে দু’টি ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য যে জায়গার দরকার হয় সেখানে ১টি বড় বাস বা গণপরিবহন চলতে পারে। একটি গণপরিবহনে ৩৫/৪০ যাত্রী পরিবহন করা গেলেও ২টি ব্যক্তিগত গাড়িতে যাত্রী পরিবহন করে মাত্র ২/৪জন। যা যানজটের বড় কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। এভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা অবাধে বাড়তে থাকলে এসব গাড়ি রাজধানী ঢাকাকে এক সময় পুরোপুরি স্থবির ও অচল করে দেবে।

দীর্ঘদিন ধরেই পরিবহন বিশেষজ্ঞরা সঙ্গত কারণেই ব্যক্তিগত গাড়িকে রাজধানী ঢাকার যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ বলে অভিমত দিয়ে আসছেন। তারা এ ব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের জরুরি পদক্ষেপ নিতে তাগিদও দিয়ে আসছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ব্যক্তিগত গাড়ির কাফেলা দিনকে দিন দীর্ঘতর হচ্ছে। এছাড়া এভাবে দিনে দিনে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকলে ব্যস্ততম এ নগরীর যানজট কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা ভেবে দেখার সময়ও বুঝি ফুরিয়ে আসবে। অর্থাৎ একটা সময়ে এসে কিছুই আর করার থাকবে না।

সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং(ইউআরপি) বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শফিক উর রহমানের সাথে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িই হচ্ছে ঢাকা শহরের যানজটের প্রধান কারণ বা প্রধান কালপ্রিট। আরো অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে এটাই সব কারণের বড় কারণ। যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এবং তিনটি ধাপ অনুসরণের মাধ্যমে এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

ড. শফিক উর রহমান বলেন, আমি মনে করি যদি একসাথে তিনটি ধাপ অনুসরণ করা যায় তাহলে এই যানজট থেকে উত্তরণ করা যাবে।

ধাপ তিনটি হলো:

১. গণপরিবহনের সার্ভিস ভালো করতে হবে। ২. শুধ‍ুমাত্র গণপরিবহনের সার্ভিস ভালো করলেই হবে না। কারণ গণপরিবহন তো একটা নির্দিষ্ট স্থান থেকে আর একটা স্থান পর্যন্ত সার্ভিস দেবে। কিন্ত হাঁটা পথে যেতে হলে ডোর টু ডোর সেবা চালু করতে হবে। সেটা হতে পারে সাইকেল, রিক্সা অথবা অন্য ছোটো ছোটো নন-মোটর যান।

ড. শফিক উর রহমানের পরামর্শ অনুযায়ী শেষ ধাপটি হলো ব্যক্তিগত পরিবহনকে নিরুৎসাহিত করা। সেটা হতে পারে নির্দিষ্ট পার্কিং স্থান এবং চার্জ নির্ধারণের মাধ্যমে। পার্কিং চার্জ দিন হিসেবে নয়, বরং ঘণ্টা হিসেবে করতে হবে। এছাড়া গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে উন্নত দেশসমুহের মতো কোটা সিস্টেম চালু করতে হবে।

এভাবে যদি এই তিনটি ধাপ একসাথে অনুসরণ করা যায় তাহলে ঢাকা শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন ড. শফিক উর রহমান। তবে ভাবনাচিন্তার জন্য হাতে সময় খুবই কম। যা করার অবিলম্বে করতে হবে। নইলে পরে পস্তাতে হবে। কেননা, ‘সময়ের এক ফোঁড় আর অসময়ের অনেক ফোঁড়। ’

বাংলাদেশ সময়:০৯২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
এসআইজে/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।