ভোর পর্যন্ত শিল্পীদের হাতের স্প্রে মেশিনের আওয়াজ আর প্রতিমা রাঙানো কাঁচা রঙের গন্ধে মাতোয়ারা ভক্তরা। উৎসবের এসব পরিস্থিতি হিন্দু ধর্মাবলম্বী সবার মনে জানান দিচ্ছে তাদের দুর্গতিনাশিনী মা আসছেন।
বড়বাজার এলাকায় ‘এসো পূজা করি’ পূজা মণ্ডপ। সেখানে একজন মৃৎশিল্পীর সঙ্গে কথা বলার অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পর প্রতিমায় তুলির আঁচড় টানতে টানতে শিল্পী নিজের ঘাড় হালকা ঘুরিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘দাদা মনে কিছু নেবেন না। হাতে অনেক কাজ, নিঃশ্বাস নেয়ার সময় নেই। রাতভর কি সাধে কাজ করছি! আমাদের এই রাত জাগাতেই দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গাদেবীর প্রতিমা পূর্ণরূপ পাবে। সময় নষ্ট না করে চলুন কাজ করতে করতেই বরং কথা বলি। বলুন কি জানতে চান আপনি?’ জিজ্ঞেস করে এরই মধ্যে নিজেই পরিচয় দিলেন তিনি গোপাল চন্দ্র পাল। প্রতিমা তৈরি করতে কলমাকান্দা উপজেলা থেকে এ শহরে এসেছেন।
পারিশ্রমিক নিয়ে কথা তুলতেই তিনি বলেন, ‘ওসব বলে লাভ নেই দাদা। লিখে দেন বাজার ভালো না। বছরে একবার প্রতিমা তৈরি করে জীবন চলে না। ’
তার পাশেই কাজে ব্যস্ত আরেক মৃৎশিল্পী। অন্যের মাধ্যমে জানা গেল তিনি এসেছেন আটপাড়া থেকে। নাম তার রামচরণ পাল। জীবন চলে না গোপালের কথার রেশ টানতে রামচরণ বলে উঠলেন, ‘আমরা প্রতিমা রাঙাই তবে নিজের মন রাঙাতে পারি না। ’ বাইরে রঙের আলো আর মনের ভেতর দারিদ্র্যতার কষাঘাত অমাবস্যা কালো। ’
ব্যস্ততায় তারা আর কথা বলতে সম্মতি জ্ঞাপন না করায় স্থান ত্যাগ করে চলে আসতে হয়। বিভিন্ন পূজা মণ্ডপগুলো ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ প্রতিমা তৈরির আটানব্বই ভাগ শেষ করেছেন শিল্পীরা।
পরে শহরের অন্য একটি পূজামণ্ডপে গেলে সেখানেও শিল্পীদের ব্যস্ততার সেই পরিচিত দৃশ্য। সেখানকার শিল্পীরা ডানবাম না তাকিয়েই বলে দিলেন ‘মিডিয়াতে এখন নয়, কথা হবে পূজার পরে...’
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
এমআরএম/এসআরএস