ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিংড়ায় দুই নারীসহ তিনজনকে পিটিয়ে আহত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
সিংড়ায় দুই নারীসহ তিনজনকে পিটিয়ে আহত সিংড়ায় দুই নারীসহ তিনজনকে পিটিয়ে আহত

নাটোর: পূর্ব বিরোধের জের ধরে নাটোরের সিংড়া উপজেলায় আনসার আলী (৫৩) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে জখমসহ দুই পা ভেঙে দিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন।

এসময় তার স্ত্রী মাবিয়া বেগম (৪৫) ও রাশেদা বেগম (৪০) নামে প্রতিবেশী এক গৃহবধূকেও বেধড়ক মারধর করা হয়।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার আনোলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহত আনসার আলীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অন্যদের সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত আনসার আলী ও তার পরিবার প্রতিপক্ষের হুমকির মুখে তিন মাস ধরে গ্রাম ছাড়া ছিলেন বলে জানা গেছে।    

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এলাকার আধিপত্য নিয়ে উপজেলার আনোলিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব হোসেন ও একই দলের সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুস আলী, সাজমুল হক ও জাহিদুলের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশে তাদের সেই বিরোধ মিমাংসার উদ্যোগ নেয়া হয়। চলতি বছরের ১৮ জুন প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিরোধ মিমাংসার সিদ্ধান্ত হয়। এদিন প্রতিপক্ষ সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুস আলীসহ তার সমর্থকরা সিংড়া সদরে আসার পথে জোলারবাতা এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ কর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হয়ে বেধড়ক মারধর করে।

এতে ইউনুসসহ তার ২০ জন সমর্থক আহত হয়। ওই ঘটনার পর থেকে মাহবুব তার পরিবার গ্রাম ছেড়ে সিংড়া সদরে বসবাস করছেন।

শনিবার মাহবুব হোসেনের বাবা আনসার আলী প্রতিবন্ধী নাতি আব্দুস সালামের (১০) চিকিৎসা সহায়তা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড নিতে গ্রামের ওই বাড়িতে গেলে প্রতিপক্ষ সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুস আলীসহ তার লোকজন আনসার আলীর ওপর চড়াও হয়ে বেধড়ক মারধর করেন এবং তার দু’পা ভেঙে দেন।

এসময় তাকে রক্ষা করতে গেলে তার স্ত্রী মাবিয়া বেগম ও   প্রতিবেশী শামছুল ইসলামের স্ত্রী রাশেদা বেগমকেও মারধর করেন তারা।

মাহবুব হোসেন জানান, ইউনুস গংয়ের হুমকির মুখে তিনি ও তার পরিবার তিন মাস ধরে গ্রামছাড়া। প্রতিবন্ধী ছেলের কার্ড না থাকায় তিনি তার ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতাসহ চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছেন না কয়েক মাস ধরে।

আজ তিনি, তার বাবা আনসার আলী ও মা মাবিয়া বেগম ছেলের প্রতিবন্ধী কার্ড নিতে গ্রামের বাড়িতে গেলে ইউনুস, সাজমুল হক ও জাহিদুলের নেতৃত্বে তাদের সমর্থকরা তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম সহ দু’পা ভেঙে দেন। এসময় তার মা মাবিয়া ও মামী রাশেদা বাবাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাদেরও নির্মমভাবে মারধর করেন তারা।

সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুস আলী এ অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে জানান, ঘটনার সময় তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। খবর পেয়ে তার স্ত্রী তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে দেখতে পাননি।

লোকমুখে শুনেছেন সকালে আনসার ও তার স্ত্রী বাড়িতে আসেন এবং একটি হাসুয়া নিয়ে তাদের ঝাড়ের বাঁশ কাটার সময় হৈ হৈ করে চিৎকার করতে থাকেন।

এসময় কয়েকজন স্থানীয় যুবক গিয়ে নিষেধ করলে তিনি তাদের মারতে উদ্যত হন। এসময় ওই যুবকরা তার ওপর চড়াও হয়। তবে কারা তাকে মেরেছেন তিনি জানেন না। এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ওই দু’পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা মিমাংসার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু তারা ব্যর্থ হন। উভয় পক্ষই আইনি লড়াই করছেন। তবে দলের কর্মী হিসেবে তাদের উভয়ের মধ্যেকার বিরোধ মিমাংসার জন্য পুনরায় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, এলাকার আধিপত্য নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে।

প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে উভয় পক্ষই মামলা করে লড়ছেন। ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।